“বাস্তবায়ন ও পর্যবেক্ষণ কাঠামো এবং ভবিষ্যৎ ভিশন”
ভূমিকা: বাংলাদেশ ফুটবল উন্নয়ন রোডম্যাপ (২০২৫–২০৩৫) সফলভাবে বাস্তবায়নের জন্য শুধু পরিকল্পনা প্রণয়নই যথেষ্ট নয়। এই রোডম্যাপ কার্যকর করতে প্রয়োজন স্পষ্ট বাস্তবায়ন কাঠামো, নিয়মিত পর্যবেক্ষণ ব্যবস্থা, এবং একটি দীর্ঘমেয়াদি ভিশন।
১️. বাস্তবায়ন কাঠামো:
ক) নেতৃত্ব ও দায়িত্বসমূহ: যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়: নীতি প্রণয়ন, বাজেট বরাদ্দ ও সরকারি সহায়তা নিশ্চিত করবে।
বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন (বাফুফে): টেকনিক্যাল উন্নয়ন, লিগ পরিচালনা এবং জাতীয় দলের প্রস্তুতি তদারক করবে।
ক্লাব ও একাডেমি: প্রতিভা লালন, বয়সভিত্তিক দল পরিচালনা এবং কাঠামোবদ্ধ লিগে অংশগ্রহণ করবে।
বেসরকারি খাত: স্পন্সরশিপ, বিজ্ঞাপন ও অবকাঠামো বিনিয়োগের মাধ্যমে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
গণমাধ্যম: প্রচার, কাভারেজ ও ফুটবলের প্রতি জনসম্পৃক্ততা বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখবে।
খ) পর্যবেক্ষণ ও জবাবদিহিতা: প্রতি ছয় মাস অন্তর অগ্রগতি প্রতিবেদন প্রকাশ করতে হবে।
কী পারফরম্যান্স ইনডিকেটর (KPI) নির্ধারণ—যেমন লিগের মান, দর্শক উপস্থিতি, ফিফা র্যাঙ্কিং, অবকাঠামো উন্নয়ন ইত্যাদি।
একটি স্বাধীন পর্যবেক্ষণ কমিটি গঠন করে কার্যক্রম মূল্যায়ন ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে।
২️. আর্থিক কৌশল: সরকার ও বেসরকারি খাতের যৌথ অর্থায়ন।
সম্প্রচার অধিকার বিক্রির মাধ্যমে রাজস্ব অর্জন।
মার্চেন্ডাইজিং (জার্সি, ক্লাব পণ্য) ও টিকিট বিক্রি বাড়ানো।
আন্তর্জাতিক স্পন্সরশিপ আকৃষ্ট করার উদ্যোগ।
৩️. মানবসম্পদ উন্নয়ন: প্রতি বছর নির্দিষ্ট সংখ্যক কোচ, রেফারি ও টেকনিক্যাল স্টাফের প্রশিক্ষণ প্রদান।
অবসরপ্রাপ্ত খেলোয়াড়দের কোচিং, রেফারিং ও প্রশাসনে অন্তর্ভুক্ত করা।
খেলোয়াড়দের জন্য ক্যারিয়ার কাউন্সেলিং ও বিকল্প কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি।
৪️. ভবিষ্যৎ ভিশন: ২০৩০: বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগকে এশিয়ার শীর্ষ ১০ লিগের মধ্যে উন্নীত করা।
২০৩৫: বাংলাদেশ জাতীয় দলকে এশিয়ার প্রতিযোগিতামূলক শক্তি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করা।
২০৪০: ফিফা বিশ্বকাপের চূড়ান্ত বাছাই পর্বে পৌঁছানো।
নারী ফুটবল: দক্ষিণ এশিয়ায় আধিপত্য বজায় রেখে এশিয়ার শীর্ষ ৮ দলের মধ্যে প্রবেশ।
৫️. জনসম্পৃক্ততা ও সামাজিক আন্দোলন: স্কুল ও কলেজে ফুটবল উৎসব আয়োজনের মাধ্যমে তরুণদের সম্পৃক্ত করা।
জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে কমিউনিটি ফুটবল টুর্নামেন্ট আয়োজন।
ফ্যান ক্লাব গঠন ও সহায়তা দিয়ে সমর্থকদের অংশগ্রহণ বৃদ্ধি।
উপসংহার:
বাংলাদেশের ফুটবল উন্নয়ন শুধু খেলোয়াড় বা ক্লাবের দায়িত্ব নয়; এটি একটি জাতীয় আন্দোলনে রূপ নিতে হবে। সরকার, বাফুফে, ক্লাব, স্পন্সর, গণমাধ্যম ও সাধারণ জনগণের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় ২০২৫–২০৩৫ রোডম্যাপ বাস্তবায়ন সম্ভব।
দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা, স্বচ্ছতা ও আন্তর্জাতিক মান অনুসরণ করলে বাংলাদেশ ফুটবল ধীরে ধীরে মধ্যম সারির এশীয় দল থেকে শীর্ষ সারির প্রতিযোগী হিসেবে আত্মপ্রকাশ করবে।
লেখক:
মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান ফারুক!
নিজস্ব ক্রীড়া প্রতিবেদক ও কলামিষ্ট।