বাংলাদেশে ফুটবল দীর্ঘদিন ধরেই জনপ্রিয় খেলা হলেও কাঙ্ক্ষিত সাফল্য আসছে না। এজন্য একটি দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা (১০ বছর) বাস্তবায়ন জরুরি। নিচে ধাপে ধাপে (স্বল্প, মধ্য ও স্বল্পমেয়াদী) সম্ভাব্য রোডম্যাপ তুলে ধরা হলো:
১. স্বল্পমেয়াদী (২০২৫–২০২৭) প্রাথমিক ভিত্তি স্হাপন:
অবকাঠামোগত সংস্কার:
- বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন (বাফুফে)-এ স্বচ্ছতা ও দক্ষ ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করা।
- জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে লিগ চালুর রূপরেখা।
- প্রতিটি জেলায় অন্তত একটি করে আধুনিক প্রশিক্ষণ কেন্দ্র স্হাপন।
কোচিং ও প্রশিক্ষণ:
- বিদেশি কোচের পাশাপাশি দেশি কোচদের UEFA/ AFC লাইসেন্স কোর্সে পাঠানো।
- প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্কুলে ফুটবল বাধ্যতামূলক সহপাঠ কার্যক্রম হিসেবে চালু।
যুব উন্নয়ন:
- U-13, U-15, U-17 বয়সভিত্তিক একাডেমি স্থাপন।
- স্থানীয় টুর্নামেন্টগুলোকে বয়সভিত্তিক লিগের সাথে সংযুক্ত করা।
২. মধ্যমেয়াদী পরিকল্পনা (২০২৮–২০৩১) প্রতিভা গঠন ও প্রতিযোগিতা বৃদ্ধি:
দেশীয় লিগ সংস্কার:
- বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ (BPL) কে বাণিজ্যিকভাবে আকর্ষণীয় করা (টিভি সম্প্রচার, স্পনসরশিপ, ফ্র্যাঞ্চাইজি ভিত্তিক মডেল)।
- লিগকে ২–৩ স্তরে ভাগ করা (প্রিমিয়ার, চ্যাম্পিয়নশিপ, ডিভিশন লিগ)।
- প্রতিটি ক্লাবের জন্য বয়সভিত্তিক দল রাখা বাধ্যতামূলক।
আন্তর্জাতিক অংশগ্রহণ:
- প্রতিবছর ফিফা উইন্ডোতে কমপক্ষে ৬–৮টি আন্তর্জাতিক ম্যাচ আয়োজন।
- সাফ, এশিয়ান গেমস ও এএফসি প্রতিযোগিতায় নিয়মিত অংশগ্রহণ ও টার্গেট নির্ধারণ।
- বিদেশি ক্লাব টুর্নামেন্টে খেলোয়াড় পাঠানো (ভারতীয় আইএসএল, মালয়েশিয়া, জাপান, কাতার ইত্যাদি)।
- ইনফ্রাস্ট্রাকচার গঠন: ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেট, খুলনা, রাজশাহীসহ ৫টি শহরে আন্তর্জাতিক মানের স্টেডিয়াম ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্র।
- খেলোয়াড়দের জন্য আধুনিক স্পোর্টস সায়েন্স, মেডিকেল ও ডায়েট সাপোর্ট সিস্টেম।
৩. দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা (২০৩২–২০৩৫): বিশ্বমানের প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ।
জাতীয় দল উন্নয়ন:
- নিয়মিত এশিয়ান কাপের মূলপর্বে খেলার লক্ষ্য।
- ২০৩৫ নাগাদ ফিফা র্যাংকিং টপ ১০০-এ প্রবেশ।
- অন্তত ১০–১৫ জন বাংলাদেশি ফুটবলারকে ইউরোপ/এশিয়ার শীর্ষ লিগে খেলার ব্যবস্থা।
ফুটবল অর্থনীতি:
- কর্পোরেট স্পনসরশিপ ও সম্প্রচার চুক্তির মাধ্যমে ফুটবলকে স্বনির্ভর খাতে পরিণত করা।
- গ্রামীণ পর্যায়ে ফুটবল থেকে কর্মসংস্থান সৃষ্টি (কোচ, রেফারি, স্টাফ ইত্যাদি)।
নারী ফুটবলে ফোকাস:
- নারী লিগের প্রসার, বয়সভিত্তিক নারী একাডেমি।
- দক্ষিণ এশিয়ায় নারী ফুটবলে শীর্ষস্থান ধরে রাখা এবং এশিয়ান লেভেলে প্রতিযোগিতা করা।
টার্গেট ও মিশন (২০২৫–২০৩৫):
- ২০২৭: সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ জয়।
- ২০২৯: এএফসি U-19, U-23 মূলপর্বে নিয়মিত খেলা।
- ২০৩১: এশিয়ান কাপ মূলপর্বে অংশগ্রহণ।
- ২০৩৩: ফিফা র্যাংকিংয়ে ১২০–এর মধ্যে।
- ২০৩৫: ফিফা র্যাংকিংয়ে টপ ১০০, এশিয়ার মাঝারি শক্তি হিসেবে প্রতিষ্ঠা।
বাস্তবায়নের উপায়:
এই রোডম্যাপ বাস্তবায়নে সরকারের ক্রীড়া মন্ত্রণালয়, বাফুফে, কর্পোরেট স্পনসর, মিডিয়া এবং জনগণের সম্মিলিত ভূমিকা অপরিহার্য।
ক্রমশ…..
লেখক
মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান ফারুক
নিজস্ব ক্রীড়া প্রতিবেদক ও কলামিস্ট