নিজস্ব প্রতিবেদক, গাজীপুর: বাংলাদেশ উম্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাউবি) প্রতিষ্ঠাতা উপাচার্য, আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন পরমাণু বিজ্ঞানী ও ইসলামী চিন্তাবিদ অধ্যাপক ড. এম. শমসের আলী এবং সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. আর. আই. এম. আমিনুর রশিদের স্মরণসভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। বৃহস্পতিবার সকাল ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মেলন ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে এ আয়োজন হয়।
সভায় বর্তমান উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ বি এম ওবায়দুল ইসলাম বলেন, অধ্যাপক ড. শমসের আলী বিজ্ঞানের পাশাপাশি ইসলামী চিন্তাধারাকে নতুনভাবে উপস্থাপন করেছেন এবং দূরশিক্ষার মাধ্যমে দেশের লাখো মানুষের জীবনে আলোর দিশা দেখিয়েছেন। তিনি আজীবন অনুকরণীয় একজন শিক্ষক ও চিন্তাবিদ। অপরদিকে, অধ্যাপক ড. আর. আই. এম. আমিনুর রশিদ ছিলেন একজন প্রথিতযশা বিজ্ঞানী, দক্ষ প্রশাসক ও শিক্ষক নেতা। তাঁর কর্ম ও অবদানও বাউবির উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে।
প্রো-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক সাঈদ ফেরদৌস বলেন, “এই দুই মহান ব্যক্তিত্ব শুধু বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়নে নয়, শিক্ষার মান ও নৈতিকতা প্রতিষ্ঠায়ও ছিলেন অগ্রণী।” সভায় তাঁদের নামে ভবন বা স্থাপনার নামকরণের প্রস্তাবও তোলা হয়।
তবে সর্বজন শ্রদ্ধেয় অধ্যাপক ড. শমসের আলীর সঙ্গে কট্টর আওয়ামীপন্থী শিক্ষক হিসেবে পরিচিত সাবেক ভিসি আমিনুর রশিদকে সমভাবে মূল্যায়ন করায় বাউবি শিক্ষক সমাজে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
উল্লেখ্য, ২০০৯ সালে উপাচার্য হিসেবে দায়িত্ব নিয়েই আমিনুর রশিদ বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণ থেকে শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের মুরাল ভেঙে ফেলে তীব্র বিতর্কের জন্ম দেন। এ ঘটনার প্রতিবাদ করায় তৎকালীন একজন ডিন চাকরিচ্যুত হন, আরেকজন চাকরি ছেড়ে যেতে বাধ্য হন। এমনকি পাঠ্যপুস্তকে মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত ইতিহাস ও জিয়াউর রহমানকে স্বাধীনতার ঘোষক উল্লেখ করায় পাঁচজন শিক্ষককে সাময়িক বরখাস্ত করে পদোন্নতি থেকে বঞ্চিত করা হয়। অভিযোগ রয়েছে, তাঁর আমলে জাতীয়তাবাদী ও ইসলামী চেতনার শিক্ষকদের নানাভাবে হয়রানি করা হয় এবং তাঁদের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিকের বেঞ্চ ব্যবহার করা হয়।
জাতীয়তাবাদী মনোভাবাপন্ন শিক্ষকরা বলেন, “বর্তমান সময়ে আওয়ামী লীগপন্থী শিক্ষকরাও আমিনুর রশিদের নামে কোনো স্মরণসভা করার সাহস পাননি। অথচ বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান প্রশাসন তাঁকে স্মরণ করে প্রমাণ করলেন তারা আসলে কোন অবস্থানে দাঁড়িয়ে আছেন।”
এদিকে এ ব্যাপারে মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ বি এম ওবায়দুল ইসলামের বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে প্রো-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. দিল রওশন জিন্নাত আরা নাজনীন বলেন, “এই অনুষ্ঠান আয়োজনের সঙ্গে আমি সম্পৃক্ত ছিলাম না। শমসের আলী স্যারের স্মরণসভায় আমিনুর রশিদকে যুক্ত করায় আমি সেখানে অংশ নিইনি। কারণ, তাঁর আমলে আমি ও আমার সহকর্মীরা অন্যায়ভাবে হয়রানির শিকার হয়েছি। তিনি ইতিহাস বিকৃতির নামে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের মুরাল ভেঙে দেন, পাঠ্যপুস্তক থেকে তাঁর নাম মুছে ফেলতে উদ্যোগ নেন এবং আমাদেরকে আদালতে ঘুরিয়ে হয়রানি করেন।”