বাংলাদেশে গণভোট ও জুলাই সনদ বাস্তবায়ন নিয়ে রাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্যেও সারাদেশে নির্বাচনী প্রস্তুতি শুরু করেছে বিএনপি। দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান আন্তজার্তিক এক গণমাধমে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন, নির্বাচনের আগেই দেশে ফিরবেন এবং নির্বাচনে অংশ নেবেন তিনি।
ইতোমধ্যে বিএনপি বিভিন্ন আসনে সম্ভাব্য প্রার্থী বাছাই, তৃণমূল পর্যায়ে সভা-সমাবেশ ও ধানের শীষের পক্ষে গণসংযোগ শুরু করেছে। তবে এবারের প্রস্তুতি এমন সময়ে শুরু হয়েছে, যখন আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক কার্যক্রম নিষিদ্ধ এবং তাদের নির্বাচনে অংশগ্রহণ অনিশ্চিত। ফলে মাঠে বিএনপির প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে উঠে এসেছে একসময়ের মিত্র জামায়াতে ইসলামী। দলটি প্রায় এক বছর আগে থেকেই প্রার্থী চূড়ান্ত করে প্রচারণা শুরু করেছে।
সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়ার ঝিকিরা মধ্যপাড়া গ্রামে সম্প্রতি বিএনপির এক উঠান বৈঠকে প্রায় ৫০ জন কর্মী অংশ নেন। সেখানে দলের ৩১ দফা কর্মসূচির লিফলেট বিতরণ এবং ধানের শীষের পক্ষে কাজের আহ্বান জানানো হয়। উল্লাপাড়া পৌর বিএনপির আহ্বায়ক আব্দুর রাজ্জাক জানান, ‘আমরা ইউনিয়ন ও গ্রাম পর্যায়ে ছোট ছোট সভা করছি। দলে একাধিক প্রার্থী থাকলেও সবাই ধানের শীষের প্রচারে একসঙ্গে কাজ করছেন।’
অন্যদিকে একই দিন জামায়াত উল্লাপাড়ার করতোয়া নদীর তীরে আয়োজন করে নৌকাবাইচের। সেখানে দাঁড়িপাল্লা প্রতীকে ভোট চেয়ে স্লোগান দিতে দেখা যায় দলটির স্থানীয় প্রার্থী ও কেন্দ্রীয় নেতা রফিকুল ইসলাম খানকে। উপজেলা জামায়াত আমীর শাহজাহান আলী বলেন, ‘আমরা প্রায় এক বছর আগে থেকেই ঘরে ঘরে প্রচারণা চালাচ্ছি। সামাজিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমেও মানুষের কাছে পৌঁছেছি।’
উল্লাপাড়ায় এর আগে জামায়াতের কোনো প্রার্থী সংসদ নির্বাচনে জয়ী হয়নি। তবে আওয়ামী লীগের নিষ্ক্রিয়তা এবং আগেভাগে প্রার্থী চূড়ান্ত করায় দলটি এবার নিজেদের অবস্থান নিয়ে আশাবাদী। শাহজাহান আলী বলেন, ‘আমরা শুধু উল্লাপাড়ায় নয়, দেশের দুই-তৃতীয়াংশ আসনে জয়ের প্রত্যাশা করছি।’
জামায়াত মনে করে, বিএনপি এখনও প্রার্থী নির্ধারণে অনিশ্চিত, চাঁদাবাজি ও দখলের কারণে মানুষ তাদের থেকে মুখ ফিরিয়েছে এবং ভোটাররা এখন পরিবর্তন চায়। তবে বিএনপি এসব অভিযোগ অস্বীকার করছে। আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘উল্লাপাড়া বিএনপির ঘাঁটি। জামায়াত কখনো আমাদের ভোট কাটতে পারবে না। এখন দলে কোনো কোন্দল নেই, বরং ঐক্যবদ্ধভাবে প্রচারণা চলছে।’
স্থানীয় ভোটারদের মধ্যে মতভেদ থাকলেও অনেকেই মনে করছেন, এবার মূল লড়াই হবে বিএনপি ও জামায়াতের মধ্যে। মুদি দোকানদার জামান মিয়া বলেন, ‘আওয়ামী লীগ এখন মাঠে নেই। তবে বিএনপি ও জামায়াতের মধ্যে টক্কর হবে।’
এদিকে সাক্ষাৎকারে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেন, ‘জনগণের প্রত্যাশিত নির্বাচন হলে আমি জনগণের মাঝেই থাকবো। যারা জুলুম করেছে, তাদের বিচার হওয়া উচিত, সেটা ব্যক্তি হোক বা দল।’ তিনি আরও বলেন, ‘জনগণ যদি কোনো দলকে সমর্থন না করে, তাদের টিকে থাকার কারণ নেই।’
বিএনপি এখন প্রার্থী বাছাই ও নির্বাচনী প্রস্তুতিতে মনোযোগী। দলটি বিশ্বাস করে, নির্ধারিত সময়ে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে সেটিই হবে সবচেয়ে বড় অর্জন। আর তারেক রহমান দেশে ফিরলে তা নির্বাচনী প্রচারণায় নতুন গতি আনবে।
অন্যদিকে ইতিহাসের অন্যতম অনুকূল সময়ে থাকা জামায়াতও নিজেদের পুনরুত্থানের সুযোগ দেখছে। আত্মবিশ্বাসে ভরপুর দলটি এবার মাঠে বিএনপিকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিতে প্রস্তুত।