রাজনীতির আলোচনায় এখন ‘সেফ এক্সিট’ প্রসঙ্গ। অন্তর্বর্তী সরকারকে চাপে রাখতেই উপদেষ্টাদের বিরুদ্ধে এই প্রসঙ্গ তুলেছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) নেতারা। এমনটা মনে করছেন রাজনীতি বিশ্লেষকরা।
তাদের মতে, সরকারের প্রতি হয়তো ক্ষোভ বা অবিশ্বাসের জন্ম নিয়েছে ছাত্র নেতৃত্বের। কিন্তু সব দলের সমর্থনে গঠিত সরকারের মধ্য থেকে কোন উপদেষ্টা ‘সেফ এক্সিট’ চায়, তা এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলামেরই পরিষ্কার করা উচিত।
বাংলাদেশের রাজনীতিতে প্রথমবারের মতো ‘সেফ এক্সিট’ প্রসঙ্গ আসে ২০০৮ সালের শেষ দিকে। এক-এগারো সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. ফখরুদ্দিন আহমদ ও তৎকালীন সেনাপ্রধান মইন ইউ আহমদ যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি দিলে এই শব্দালঙ্কারের সূচনা হয়। বলা হয়ে থাকে, বিতর্কিত ভূমিকার পরও তখনকার ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকার তাদের সেফ এক্সিট দেয়।
১৭ বছর পর নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে একই আদলে গঠিত অন্তর্বর্তী সরকার যখন নির্বাচন আয়োজনের প্রস্তুতি নিচ্ছে, তখন আরও একবার এসেছে ‘সেফ এক্সিট’ প্রসঙ্গ। এবং এই অভিযোগ করেছেন খোদ নাহিদ ইসলাম। তরুণ নেতৃত্বের একটি গণঅভ্যুত্থানের পর, যিনি এই সরকার গঠন প্রক্রিয়ার সঙ্গে জড়িত ছিলেন।
রাজনীতি বিশ্লেষক ড. সাব্বীর আহমেদ বলেন, নাহিদ ইসলামের ক্ষোভের বহি:প্রকাশ হতে পারে। ভাবছে এই সরকার শেষ পর্যন্ত তাদের পক্ষে নেই। তারা তাদের দলটাকে গোছাতে ও সংগঠিত করতে পারলো না। এটি এক ধরনের হতাশা থেকেও হতে পারে।
তিনি আরও বলেন, এটাও ঠিক, এই সরকার যখন চলে যাবে তখন অনেকেই বাইরে চলে যাবে। এমনকি প্রধান উপদেষ্টাও চলে যেতে পারেন।
নাহিদ ইসলামের পর এ নিয়ে কথা বলেন এনসিপির উত্তরাঞ্চালের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম। তবে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, সরকারকে চাপে রাখতে এনসিপি এমন কৌশল নিতে পারে।
রাজনীতি বিশ্লেষক কাজী মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান বলেন, যারা ৫ আগস্টের মূল শক্তি, তারাই এখন মূল স্টেকহোল্ডার। সুতরাং তাদের মধ্যে পার্থক্য কম। এই অবস্থায় রাজনীতিতে টিকে থাকতে হয়। মাঠে টিকে থাকতে নানান সময় নানান ইস্যু আসে।
তবে, ‘সেফ এক্সিট’ প্রসঙ্গ এখন আর শুধু সরকার এবং এনসিপির মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। বিশ্লেষকরা বলছেন, ঢালাও মন্তব্য নয়, কারা এক্সিট চায় তা পরিষ্কার করতে হবে নাহিদ ইসলামকেই।
কাজী মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান বলেন, যদি কেউ অপরাধ করে থাকে তাহলে তাকে এখনই বিচারের মুখোমুখি করা উচিত। ‘সেফ এক্সিট’- পর্যন্ত অপেক্ষা করার প্রয়োজন নেই। কোন অপরাধীকে আশ্রয় ও সুরক্ষা দিতে এই সরকার গঠন হয়নি। এটা তো তথাকথিত সরকারের মতো নয়।
অন্যদিকে, ড. সাব্বীর আহমেদ বলেন, এই মুহূর্তেই ‘সেফ এক্সিট’-এর প্রমাণ কি শেখ হাসিনাকে ফোন করা—সেটাও তো বের করা দরকার। বের হলে দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেয়া উচিত।
ছাত্র-জনতা ও সব রাজনৈতিক দলের সমর্থনেই অভ্যুত্থানপরবর্তী এই অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয়েছে। সেই সরকারের জন্য ‘সেফ এক্সিট’ তাই অপ্রাসঙ্গিক বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা। তাদের শঙ্কা, এমন বক্তব্যে উপদেষ্টাদের গ্রহণযোগ্যতা প্রশ্নের মুখে পড়বে; বিভক্তি সৃষ্টি হবে জাতীয় ঐক্যে।