ঢাকা
২৬শে মে, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
সকাল ৮:২৩
logo
প্রকাশিত : এপ্রিল ৬, ২০২৫

মার্কিন পণ্যে ৭৪% শুল্কের হিসাব মিলছে না

মার্কিন পণ্য আমদানিতে বাংলাদেশ ৭৪ শতাংশ শুল্ক আরোপের হিসাবটি অস্পষ্ট ও সঠিক নয়। প্রকৃত শুল্ক হারের তথ্য শিগগিরই ট্রাম্প প্রশাসনের কাছে তুলে ধরবে অন্তর্বর্তী সরকার। মার্কিন পণ্যে শুল্ক হার অনেক বেশি, এই যুক্তি দেখিয়ে বাংলাদেশি পণ্যে ৩৭ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছে যুক্তরাষ্ট্র।

অর্থনীতিবিদদের মতে, ট্রাম্প প্রশাসন বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রা বিনিময় হার নীতি ও ট্রেড পলিসি বিবেচনায় নিলেও ৭৪ শতাংশ শুল্কের হিসাবে মিলছে না। এছাড়া যুক্তরাষ্ট্র থেকে যেসব পণ্য আমদানি হয়, সেগুলোতে শুল্ক খুবই কম। ফলে মার্কিন পণ্যের ওপর শুল্কের এই হিসাব কীভাবে আনা হলো এ নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।

সূত্রমতে, মার্কিন পণ্যের প্রকৃত আমদানি শুল্ক হারের তথ্য নিরূপণের কাজ শুরু করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। পাশাপাশি সার্বিক পরিস্থিতি পর্যালোচনা করতে আজ পৃথকভাবে জরুরি বৈঠক ডেকেছেন অর্থ উপদেষ্টা এবং বাণিজ্য উপদেষ্টা। সেখানে সরকারের সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর প্রতিনিধি এবং অংশীজনরা উপস্থিত থাকবেন। আর ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গে শুল্ক ইস্যুতে আলোচনা এগিয়ে নিতে সব ধরনের প্রস্তুতির দিকনির্দেশনা দেওয়া হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের বাংলাদেশস্থ দূতাবাসকে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে পাওয়া গেছে এসব তথ্য।

জানতে চাইলে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান আবদুর রহমান খান শনিবার যুগান্তরকে জানান, ট্রাম্প প্রশাসনের কাছে মার্কিন পণ্য আমদানিতে প্রকৃত শুল্ক হারের তথ্য তুলে ধরা হবে। মূলত আমেরিকার পণ্য আমদানিতে বাংলাদেশ ৭৪ শতাংশ শুল্ক আরোপ করে রেখেছে এ হিসাবটি সঠিক নয়। এ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের বাংলাদেশ দূতাবাস ও কমার্শিয়াল কাউন্সেলর কাজ করছে। আমরাও কাজ করছি, কেউ বসে নেই। তিনি আরও বলেন, আমেরিকা থেকে যেসব পণ্য আমদানি করা হচ্ছে এর মধ্যে প্রধান পণ্যগুলোতে কোনো শুল্ক নেই, অর্থাৎ শূন্যশুল্ক আরোপ আছে। একটি পণ্য স্ক্র্যাপ আমেরিকা থেকে আমদানি হচ্ছে, সেখানে প্রতিমেট্রিক টন ১৫শ ডলার শুল্ক আছে। এটি গড়ে তিন শতাংশের কম। তবে ট্রাম্প প্রশাসন যে ফর্মুলায় বাংলাদেশের রপ্তানি পণ্যের ওপর নতুন শুল্ক আরোপ করেছে সেটি যৌক্তিক নয়। স্বাভাবিক নিয়মে শুল্ক আরোপ করতে হয় পণ্যের ওপর, নির্দিষ্ট কোনো দেশের ওপর নয়। আর দেশের ওপর শুল্ক আরোপ করা হলে আন্তর্জাতিক আইন অমান্য করার শামিল। বিশ্ববাণিজ্য সংস্থা (ডব্লিউটিও) রুলস অনুসারে আমরা সে আইন অমান্য করতে পারি না। আবদুর রহমান আরও বলেন, পর্যালোচনা করে দেখা মিলছে, কোনো কোনো দেশের বাণিজ্য ঘাটতি বাংলাদেশের চেয়েও বেশি। কিন্তু তাদের ওপর শুল্ক আমাদের চেয়ে কম আরোপ করা হয়েছে। এ বিষয়ে পর্যালোচনা হচ্ছে।

বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান যুগান্তরকে জানান, যুক্তরাষ্ট্রের ৩৭ শতাংশ শুল্ক আরোপ যে কোনো বিচারেই এটি বড় মাত্রার রপ্তানি শুল্ক, যা পণ্যের মূল্য বাড়িয়ে দেবে। যেহেতু আমাদের মোট পোশাক রপ্তানির ৯০ শতাংশ যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে। এতে পণ্যের দাম বেড়ে গেলে তৈরি পোশাকসহ অন্যান্য বাংলাদেশি রপ্তানি পণ্য কেনা কমিয়ে দেবেন সে দেশের ক্রেতারা। এর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে দেশের রপ্তানির ওপর। মোস্তাফিজুর রহমান আরও বলেন, দ্বিপাক্ষিকভাবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে এ নিয়ে জিজ্ঞাসা করা যেতে পারে। মার্কিন পণ্যের ওপর ৭৪ শতাংশ শুল্ক আরোপের হিসাবটি কীভাবে করা হলো সেটি ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনা করা যেতে পারে। এ হিসাবে অনেকটা অস্পষ্টতা রয়েছে।

এনবিআরের তথ্যমতে, ২০২৪ সালে আমেরিকা থেকে ২৬২ কোটি ডলারের পণ্য আমদানি হয়েছে। এর মধ্যে ১৩৩ কোটি ডলারের পণ্য আমদানিতে কোনো শুল্ককর দিতে হয়নি। যেমন গম, তুলার মতো পণ্যে শুল্ককর নেই। এরপরও যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি হওয়া পণ্যে গড়ে ৪ দশমিক ৪৮ শতাংশ শুল্ককর দিতে হয়েছে। সব মিলিয়ে কাস্টমস শুল্ককর আদায় করেছে ১ হাজার ৪১১ কোটি টাকা।

মার্কিন পণ্য আমদানির তালিকায় শীর্ষে রয়েছে রড তৈরির কাঁচামাল-পুরোনো লোহার টুকরা বা স্ক্র্যাপ। গত অর্থবছরে পণ্যটি আমদানি হয় ৭৭ কোটি ৮৬ লাখ ডলার, যা যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি হওয়া মোট পণ্যের প্রায় ২৭ শতাংশ। গড়ে ৪ শতাংশ শুল্কহার রয়েছে পুরোনো লোহার পণ্য আমদানিতে।

দ্বিতীয় সর্বোচ্চ পণ্য এলপিজির উপাদান বিউটেন আমদানি হয়েছে ৩৩ কোটি ৩৮ লাখ ডলারের। বাংলাদেশের শুল্কহার গড়ে ৫ শতাংশ। তৃতীয় সর্বোচ্চ সয়াবিন বীজ আমদানি হয়েছে ৩২ কোটি ডলারের। এই পণ্য আমদানিতে শুল্ককর নেই। চতুর্থ অবস্থানে রয়েছে বস্ত্রশিল্পের কাঁচামাল তুলা। এই পণ্য আমদানি হয়েছে ২৬ কোটি ৮৭ লাখ ডলারের। এটিতেও শুল্ককর নেই।

এনবিআর সূত্রে জানা গেছে, দেশটি থেকে প্রায় আড়াই হাজারের মতো পণ্য বছরে আসে। এসব পণ্যে আমদানি শুল্ক, ভ্যাট, সম্পূরক শুল্ক, নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক, অগ্রিম কর পর্যালোচনা করা হচ্ছে। বিশেষ এসব পণ্যের শুল্ককর হার কমানোর সুযোগ আছে কি না, সেটিও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এছাড়া যুক্তরাষ্ট্র থেকে যেসব সেবা এবং লিজের পণ্য আমদানির ওপর শুল্ককর কমানোর বিষয়টি চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে।

প্রসঙ্গত, যুক্তরাষ্ট্র এখন বাংলাদেশি পণ্যের ওপর যে ৩৭ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছে, তাতে বাংলাদেশের জন্য গড়ে শুল্ক দাঁড়াবে ৫২ শতাংশে। কারণ দেশটির বাজারে আগে বাংলাদেশি পণ্যের ওপর গড় শুল্ক ছিল প্রায় ১৫ শতাংশ। অর্থনীতিবিদ ও ব্যবসায়ীরা বলছেন, এই ৫২ শতাংশ শুল্কের নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের রপ্তানি খাতে, বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে পোশাক খাত।

বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোটার্স অ্যাসোসিশেন (বিকেএমইএ) সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম যুগান্তরকে জানান, তৃতীয় বৃহত্তম পোশাক রপ্তানিকারক হিসাবে বাংলাদেশ ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তবে বাংলাদেশের উচিত, মার্কিন পণ্যের ওপর প্রচলিত শুল্কের হার ৭৪ শতাংশের প্রকৃত তথ্য তুলে ধরা। এখানে দ্বিপাক্ষিক আলোচনা করা দরকার। তিনি আরও বলেন, এলডিসি উত্তরণের আগে এমন ঘটনা গলায় ফাঁস দেওয়ার মতো।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিজিএমইএ-এর সাবেক সভাপতি ফারুক হাসান বলেন, পর্যালোচনায় দেখা যাচ্ছে, মার্কিন পণ্য আমদানিতে গড়ে ৪ দশমিক ৮ শতাংশ শুল্ক আরোপ আছে। কিন্তু ৭৪ শতাংশ বলা হচ্ছে। এটি সঠিক নয়। আলোচনার মাধ্যমে সঠিক হিসাবটি তুলে ধরতে হবে যুক্তরাষ্ট্রের কাছে। তিনি বলেন, আমেরিকাতে ভারত ৮৫ বিলিয়ন ডলার পণ্য রপ্তানি করছে, পাশাপাশি আমদানি করছে ৪২ বিলিয়ন ডলারের। বাণিজ্য ঘাটতি ৪৩ বিলিয়ন ডলার। তাদের ওপর শুল্ক আরোপ কম করেছে। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশি বাণিজ্য ঘাটতি ৬ দশমিক ২ বিলিয়ন ডলারের। সেখানে বাংলাদেশের ওপর শুল্ক আরোপ করেছে ভারতের চেয়ে বেশি। এখন এ যুক্তরাষ্ট্রের কাছে বাংলাদেশের সঠিক হিসাব তুলে ধরতে হবে।

মার্কিন বাণিজ্য প্রতিনিধি দপ্তরের ওয়েবসাইটের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালে বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি করেছে ৮৩৬ কোটি ডলারের পণ্য। বিপরীতে বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি করেছে ২২১ কোটি ডলারের পণ্য। এই হিসাবে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য ঘাটতি ৬১৫ কোটি ডলার।

সর্বশেষ
logo
প্রকাশকঃ অধ্যাপক ড. জোবায়ের আলম
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদকঃ তাপস রায় সরকার
মোবাইল: +৮৮০ ১৭৩৬ ৭৮৬৯১৫
কার্যালয় : বিটিটিসি বিল্ডিং (লেভেল:০৩), ২৭০/বি, তেজগাঁও (আই/এ), ঢাকা-১২০৮
মোবাইল: +880 2-8878026, +880 1736 786915, +880 1300 126 624
ইমেইল: tbtbangla@gmail.com (online), ads@thebangladeshtoday.com (adv) newsbangla@thebangladeshtoday.com (Print)
বাংলাদেশ টুডে কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি ও বিষয়বস্তু অন্য কোথাও প্রকাশ করা বে-আইনী।
Copyright © 2025 The Bangladesh Today. All Rights Reserved.
Host by
linkedin facebook pinterest youtube rss twitter instagram facebook-blank rss-blank linkedin-blank pinterest youtube twitter instagram