মোঃ এনামুল হক, পঞ্চগড় প্রতিনিধি: ভারতের গুজরাট রাজ্যের বিভিন্ন বস্তি থেকে তুলে এনে পঞ্চগড় সদর উপজেলার বড়বাড়ি সীমান্তে পুশইন করা ২১ বাংলাদেশি নাগরিককে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। সদর উপজেলার হাড়িভাসা ইউনিয়নের ডোলোপুকুর আশ্রয়ণ প্রকল্পে আইনি প্রক্রিয়া শেষে পরিবারের সদস্যদের জিম্মায় তাদের তুলে দেন সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জাকির হোসেন।
এসময় উপস্থিত ছিলেন পঞ্চগড় সদর থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল্লা হিল জামান ও হাড়িভাসা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সাইয়েদ নূর-ই আলম।
পুশইন হওয়া নারী রোজি আক্তার বলেন, আমরা দশ বছর ধরে গুজরাটে থাকতাম। হঠাৎ ১৫-২০ জন পুলিশ এসে আমাদের নিয়ে যায়। এরপর বিমানে করে কলকাতায় নিয়ে আসে। পরে বাসে করে বিএসএফ বড়বাড়ি সীমান্তে দিয়ে আমাদের দেশে পাঠিয়ে দেয়।
আলেয়া বেগম নামে আরেক নারী বলেন, আমরা গরিব মানুষ, পেটের দায়ে ইন্ডিয়া গেছিলাম। গত ২১ মে ভারতীয় পুলিশ আমাদের গুজরাট এলাকা থেকে আটক করে উড়োজাহাজে কলকাতা নিয়ে আসে। পরে কলকাতা থেকে বাসে করে এনে বিএসএফ সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে পাঠিয়ে দেয়। এরপর বিজিবি আমাদের আটক করে। গত তিন দিন ধরে আমরা এই আশ্রয়ণ প্রকল্পে ছিলাম সবাই। আমাদের পরিবারের লোকজন এসে আমাদের নিজ বাড়িতে নিয়ে যাচ্ছে।
স্ত্রী ও তিন সন্তানকে নিতে আসা ফরহাদ হোসেন বলেন, আমি প্রায় সাত বছর ধরে গুজরাটে ছিলাম।
এর আগে গত বৃহস্পতিবার (২১ মে) ভোরে নীলফামারী ৫৬ বিজিবি ব্যাটালিয়নের দায়িত্বপূর্ণ এলাকা উপজেলার হাড়িভাসা ইউনিয়নের বড়বাড়ি সীমান্ত এলাকা দিয়ে তাদের বাংলাদেশে পুশইন করা হয়। এরপর এলাকায় তাদের দেখে স্থানীয়রা বিজিবিকে খবর দিলে বিজিবি তাদের আটক করে। পরে পঞ্চগড় সদর থানা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করলে রাতে সবাইকে ডোলোপুকুর আশ্রয়ণ প্রকল্পে রাখা হয়। পরিবারের সদস্যদের খবর দেওয়া হলে ৩ দিনের মাথায় তাদের আইনি প্রক্রিয়া শেষে হস্তান্তর করা হয়।
হাড়িভাসা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সাইয়েদ নূর-ই আলম বলেন, বৃহস্পতিবার রাতে ২১ জন আটক হওয়ার পর ইউএনও স্যার আমাকে ফোন করে তাদের আশ্রয়ণ প্রকল্পে রাখার বিষয়ে বলে। আমি তাদের থাকার ও খাবার ব্যবস্থা করি। তিন দিনের মাথায় তাদের অভিভাবক আসায় প্রশাসনের মাধ্যমে সবাইকে পরিবারের কাছে তুলে দেওয়া হয়েছে। শিশু সহ সবাই তাদের নিজ পরিবারের কাছে ফিরে যাচ্ছে।
পঞ্চগড় সদর থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল্লা হিল জামান বলেন, আইনিভাবে আমরা তাদের পরিচয় নিশ্চিত করেছি, তারা বাংলাদেশি। এ বিষয়ে ঘটনার দিন থানায় জিডি করা আছে। আজকে তাদের পরিবারের সদস্যরা এলে সব আইনি প্রক্রিয়া শেষে তুলে দেওয়া হয়েছে।
পঞ্চগড় সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জাকির হোসেন বলেন, ডিসি স্যারের নির্দেশে আটক ২১ জনকে নিরাপদ আশ্রয়ে রাখা হয়। এর মাঝে তাদের পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করে তাদের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে।