ইউক্রেনজুড়ে ব্যাপক ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে রাশিয়া। শুক্রবার (২৩ মে) থেকে শুরু হওয়া এই আক্রমণে অন্তত ১৩ জন নিহত এবং ৫৬ জন বেসামরিক নাগরিক আহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে ইউক্রেনের আঞ্চলিক কর্তৃপক্ষ। খবর বিবিসির।
কেবল রাজধানী কিয়েভেই রাশিয়া ২৫০টি ড্রোন ও ১৪টি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করেছে বলে জানিয়েছে ইউক্রেনের বিমান বাহিনী। হামলায় আবাসিক ভবনে আগুন লেগে যায় এবং বিস্ফোরণের শব্দে কেঁপে ওঠে শহর। রাজধানীতে অন্তত ১৪ জন আহত হয়েছেন। এটিকে যুদ্ধ শুরুর পর কিয়েভে অন্যতম বড় একত্রিত আকাশ হামলা হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে।
তবে ইউক্রেনের বিমান বাহিনী দাবি করেছে, তারা ২৪৫টি ড্রোন ও ছয়টি ক্ষেপণাস্ত্র গুলি করে ভূপাতিত করেছে।
এই হামলার প্রতিক্রিয়ায় ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেন, 'প্রতিটি হামলার পর বিশ্বের কাছে স্পষ্ট হচ্ছে, যুদ্ধ দীর্ঘায়িত হওয়ার দায় মস্কোর।'
রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে তুরস্কে আলোচনা শেষে বন্দি বিনিময়ের মধ্যেই এই রাতভর আক্রমণ হয়।
জেলেনস্কি বলেন, 'এটি ছিল একটি কঠিন রাত। কিয়েভজুড়ে বিস্ফোরণ, অগ্নিকাণ্ড—অনেক বাড়ি, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, এমনকি গাড়িও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।'
কিয়েভ অঞ্চলে দুটি স্কুল ও একটি ক্লিনিক হামলার লক্ষ্যবস্তু হয়।
ডোনেৎস্ক অঞ্চলে ৪ জন, দক্ষিণের ওদেসা ও খেরসনে ৫ জন এবং উত্তর-পূর্বের খারকিভে ৪ জন নিহত হয়েছেন বলে জানা গেছে।
ওদেসায় বন্দর অবকাঠামোতে ড্রোন হামলা হয়েছে।
দেশজুড়ে অনেক আবাসিক ভবন, সুবিধাদি ও ফ্ল্যাট ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। যুদ্ধপ্রবণ এলাকা থেকে ১০০ জনেরও বেশি মানুষকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে ১৩ শিশু।
কিয়েভের সামরিক প্রশাসনের প্রধান তিমুর তকাচেঙ্কো বলেন, 'শত্রু এখন একযোগে ড্রোন ও ব্যালিস্টিক অস্ত্র ব্যবহার করে তাদের কৌশল উন্নত করছে।'
জেলেনস্কি আরও বলেন, 'রাশিয়াকে যুদ্ধবিরতিতে বাধ্য করতে হলে তাদের অর্থনীতির মূল খাতগুলোতে অতিরিক্ত নিষেধাজ্ঞা জরুরি।'
এরই মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প, যিনি যুদ্ধ থামানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, বন্দি বিনিময় প্রসঙ্গে বলেছেন, 'এটি হয়তো বড় কিছুর সূচনা হতে পারে???'
সম্প্রতি ট্রাম্প রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে ফোনালাপে ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে আলোচনা করেন এবং দাবি করেন, 'চুক্তির আলোচনায় তারা এখনই বসছে।'
তবে পুতিন কেবল বলেছেন, রাশিয়া একটি সম্ভাব্য শান্তি চুক্তির খসড়া নিয়ে কাজ করতে রাজি, কিন্তু ৩০ দিনের যুদ্ধবিরতি নিয়ে কিছু বলেননি।
শনিবার জেলেনস্কি জানান, একটি বন্দি বিনিময়ের অংশ হিসেবে ৩০৭ ইউক্রেনীয় বাড়ি ফিরেছেন। শুক্রবার উভয় দেশই ৩৯০ করে বন্দিকে মুক্তি দিয়েছে, যা ২০২২ সালে পূর্ণমাত্রায় যুদ্ধ শুরুর পর সবচেয়ে বড় বিনিময়।
আরও ১,০০০ করে বন্দি বিনিময়ের বিষয়ে সম্মত হয়েছে দুই দেশ, যার পরবর্তী পর্যায় রবিবার অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা।
সূত্র: বিবিসি