গাজায় খাদ্য সরবরাহে অবরোধ সৃষ্টি করে মানুষকে অনাহারে মেরে ফেলছে ইসরাইল। একে যুদ্ধাপরাধ বলে আখ্যায়িত করেছেন জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক প্রধান টম ফ্লেচার। এর আগে একই অভিযোগ করেন স্বয়ং ইসরাইলেরই সাবেক প্রধানমন্ত্রী এহুদ ওলমার্ট। পাশাপাশি ইসরাইলের ওপর তীব্র চাপ সৃষ্টি করেছে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়। বিশেষ করে গাজা সংকট সমাধানের উদ্যোগ না নিলে ইসরাইলের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা দেয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রন।
বৃটেন, ফ্রান্স ও কানাডা যৌথভাবে ইসরাইলকে যুদ্ধ বন্ধের আহ্বান জানিয়েছে। তারা বলেছে, যুদ্ধ বন্ধ না করলে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে ইসরাইলের বিরুদ্ধে। অনলাইন আরব নিউজ বলছে, গাজার পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে জাতিসংঘ। বিশেষ করে এর মানবাধিকার বিষয়ক প্রধান টম ফ্লেচার শুক্রবার প্রচারিত এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, ফিলিস্তিনের গাজায় খাদ্য সরবরাহে ইসরাইল যে বাধা সৃষ্টি করেছে তাতে লাখো মানুষ অনাহারে। এটা জোরপূর্বক একটি জনগোষ্ঠীকে নিশ্বেষ করে দেয়া। এটা যুদ্ধাপরাধ।
উল্লেখ্য, প্রায় তিন মাস গাজার বিরুদ্ধে অবরোধ সৃষ্টির পর গত সপ্তাহে কৌশলগতভাবে ত্রাণ সামগ্রী সরবরাহের অনুমতি দিয়েছে ইসরাইল। কিন্তু তা খুবই সামান্য। একে এক চামচ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। এত সামান্য ত্রাণ নিয়ে গাজায় বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। মানুষ ত্রাণ জমা রাখা গুদামে লুটপাট চালিয়েছে। জাতিসংঘকে পাশ কাটিয়ে নতুন করে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরাইল সমর্থিত বিতরণ কেন্দ্রে এই বিশৃঙ্খলায় গুলিতে কমপক্ষে দুই জন নিহত হয়েছেন। এমন অবস্থায় বিবিসিকে দেয়া সাক্ষাৎকারে টম ফ্লেচার বলেন, আমরা দেখছি সীমান্তে অলস পড়ে আছে খাদ্য। সেগুলো সীমান্তের এপাড়ে অনাহারী মানুষের কাছে পৌঁছাতে দেয়া হচ্ছে না। আমরা শুনতে পাচ্ছি ইসরাইলি মন্ত্রীরা বলছেন, এটার মাধ্যমে গাজার জনগণের ওপর চাপ সৃষ্টি করা হচ্ছে।
টম ফ্লেচার বলেন, খাদ্যকে এভাবে হাতিয়ার বানানোকে যুদ্ধাপরাধ হিসেবে গণ্য করা যায়। এ বিষয়টি আদালত এবং ইতিহাসের বিচারকরা বিচার করবেন। ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ও তার সরকারের কট্টরপন্থি মন্ত্রীরা পরামর্শ দিয়েছেন গাজাবাসীকে তৃতীয় কোনো একটি দেশে দেশান্তরী করতে। এ বিষয়ে ইসরাইলকে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন টম ফ্লেচার। এ মাসের শুরুর দিকে ইসরাইলের উগ্রপন্থি অর্থমন্ত্রী বেজালেল স্মোট্রিচ বলেছেন, আগামী ৬ মাসের মধ্যে গাজা পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে যাবে। ফিলিস্তিনিরা এতটাই অসহায় হয়ে পড়বে যে, তারা অন্য কোথাও নতুন জীবন খুঁজতে মরিয়া হয়ে উঠবে। এই ভাষা, এই নীতি, জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত করার এই নীতি যেন কার্যকর করা না হয় তা নিশ্চিত করতে নেতানিয়াহুর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন টম ফ্লেচার।
১৮ই মার্চ প্রথম দফায় দুই মাসের যুদ্ধবিরতি একতরফাভাবে ভঙ্গ করে ইসরাইল। এরপরই তারা গাজায় ভয়াবহ হামলা চালায়। হত্যা করে হাজার হাজার ফিলিস্তিনি বেসামরিক মানুষকে। এর মধ্য দিয়ে তারা পুরো গাজাকে ইসরাইলি সেনাদের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে নেয়ার লক্ষ্য স্থির করেছে। ইসরাইল সরকার অবশ্য এরই মধ্যে দাবি করেছে তারা একাজে সফল হয়েছে। সেখানে ইসরাইল যে ক্রমবর্ধমান হারে সহিংসতা চালাচ্ছে তাতে ইউরোপের দেশগুলোর বিবেক জাগ্রত হয়েছে। তারা অবস্থান পরিবর্তন করেছেন। হত্যাযজ্ঞ অব্যাহত রাখলে ও ত্রাণ পুরোপুরি চালু করার অনুমতি না দিলে ইসরাইলের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা দেয়ার হুমকি দিয়েছে তারা। জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে ১৪ই মে টম ফ্লেচার বলেছেন, গাজায় গণহত্যা বন্ধে অবশ্যই এ পরিষদকে ব্যবস্থা নিতে হবে। মাঠপর্যায় থেকে তার সহকর্মীরা যেসব তথ্য দিয়েছেন সেগুলো তিনি তুলে ধরেন। তিনি বলেন- সহকর্মীরা বলছেন গাজাবাসীকে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত করা হচ্ছে। তাদেরকে অনাহারে রাখা হচ্ছে। তাদেরকে নির্যাতন করা হচ্ছে। গণহারে মানুষকে হত্যা করা হচ্ছে। এর আগে রোয়ান্ডা, সেব্রেনিৎসা এবং শ্রীলঙ্কায় আমরা কোনো দায়িত্ব পালন করিনি বলে বিশ্ববাসী অভিযোগ করেছে। এখনও বিশ্ববাসী গণহত্যা বন্ধ করার জন্য ব্যবস্থা নেয়ার দাবি তুলেছেন। নিরাপত্তা পরিষদে আমার এবং বিশ্ববাসীর এখনকার প্রশ্ন- আপনারা কি এই গণহত্যা বন্ধে কোনো ব্যবস্থা নেবেন? আমাদেরকে ইতিহাস খুব কড়া বিচার করবে এবং এই বিচার হতেই হবে।