ঢাকা
২৭শে জুন, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
রাত ১০:৫৭
logo
প্রকাশিত : জুন ২৭, ২০২৫

বড়লেখায় বিজিবির নজর এড়িয়ে বাড়ি ফিরল শিশুসহ ১৪ নারী-পুরুষ

আব্দুর রব, বড়লেখা (মৌলভীবাজার) প্রতিনিধি: বড়লেখা উপজেলার উত্তর শাহবাজপুর ইউনিয়নের কোন এক সীমান্ত দিয়ে শুক্রবার ভোররাতে শিশুসহ ১৪ জন অবৈধ বাংলাদেশি নাগরিককে বিএসএফ পুশইন করেছে। তাদের ভাষ্য অনুযায়ী তারা নড়াইল জেলার কালিয়াপুর থানার বাসিন্দা। বিজিবির নজর এড়িয়ে তারা বিভিন্ন যানবাহনে নিজ গ্রামে ফিরে গেছে। তাদের ১০ জনকে বড়লেখা-শাহবাজপুর সড়কের চন্ডিনগর এলাকায় পায়ে হেটে বড়লেখা শহরে যাওয়ার সময় স্থানীয়রা জিজ্ঞাসাবাদ করলে তারা এসব তথ্য দেন।

তবে, অভিযোগ ওঠেছে থানা পুলিশকে তাৎক্ষণিক বিষয়টি অবহিত করা হলেও পুলিশ বিষয়টিকে মোটেও গুরুত্ব দেয়নি। যাচাই-বাছাইসহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা না নিয়ে আটককারি জনতাকে তাদের (পুশইনকৃতরা) ছেড়ে দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছে পুলিশ। যা আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় নিয়োজিত পুলিশ বাহিনীর ভূমিকা নিয়ে বিভিন্ন মহলে প্রশ্ন ওঠেছে।

বিএসএফের পুশইনকৃতরা হচ্ছেন- নড়াইল জেলার কালিয়াপুর থানার ছাগলচেরা বাড্ডা গ্রামের সোহাগ মোল্লার স্ত্রী জান্নাতি বেগম (৪০), মিঠু মিয়ার স্ত্রী নার্গিস (৩০), ইফনুস মিয়ার স্ত্রী ফাতিমা বেগম (২৫), ইয়াসিন মিয়া (২১), জাহিদ মিয়া (৫০), রুহি বেগম (৩০), মিন্টু মিয়া (৪০), মৃত করিম মিয়ার মেয়ে সোমা বেগম (৩৪), শিশু ইউসুফ (৮) ও আরিয়ান (৪)।

প্রত্যক্ষদর্শী চন্ডিনগর গ্রামের লোকজন ও সাংবাদিক আজাদ বাহার জামালী জানান, সকাল ৭টার দিকে উপজেলার উত্তর শাহবাজপুর থেকে বড়লেখা শহরের দিকে বেশ কয়েকজন অপরিচিত নারী-পুরুষ শিশুসহ পায়ে হেটে বড়লেখা শহরের দিকে যাচ্ছিল। তাদেরকে বেশ ক্লান্ত, মানসিক চাপে ও অভুক্ত মনে হওয়ায় লোকজন আটকিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেন।

এসময় তারা জানায়, ভোর রাতের দিকে ঘটনাস্থল থেকে ৮/১০ কিলোমিটার উত্তর পূর্বাঞ্চলের পাহাড়-জঙ্গল দিয়ে বিএসএফ তাদেরকে সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশে ঢুকিয়ে দিয়েছে। তারা সবাই নড়াইল জেলার বাসিন্দা। ২০/২৫ বছর আগে কাজের সন্ধানে অবৈধভাবে ভারতে গিয়ে গুজরাটে বসবাস করছিল। কয়েকদিন আগে ভারতীয় পুলিশ তাদেরকে আটক করে বিএসএফের হাতে তোলে দিয়েছে। বিএসএফ বলেছে সিলেটের সীমান্ত দিয়ে তোদেরকে বাংলাদেশে পাঠিয়ে দিবো। সে অনুযায়ি ভোররাতে তারা আমাদেরকে সীমান্ত পেরিয়ে দিয়েছে। আমাদের সাথে আরো চারজন ছিল। ওরা ঢুকার পর অন্য দিকে গ্রামের বাড়ির দিকে রওয়ানা দিয়েছে। বিজিবি তাদেরকে দেখেনি বলে তারা দাবি করেছে।

স্থানীয় লোকজন তাদের জবানবন্দী শুনে সকাল আটটার দিকে বড়লেখা থানার ডিউটি অফিসারকে ফোন দিয়ে ঘটনা জানান। অপরপ্রান্ত থেকে ডিউটি অফিসার এএসআই দুলাল সরকার জানান, থানায় কেউ নেই, পরিবহনও নেই। আপনারা থানায় নিয়ে আসেন অথবা বাংলাদেশি মনে হলে ছেড়ে দেন।

সাংবাদিক আজাদ বাহার জামালী জানান, থানায় জানানোর পর ডিউটি অফিসারের এমন দায়সারা প্রতিউত্তরে লোকজন তাদেরকে ছেড়ে দেন। তারা অটোরিকশায় বড়লেখা শহরে পৌঁছে শ্যামলী পরিবহনে উঠে গ্রামের বাড়ির উদ্দেশ্যে চলে গেছে। তবে, পুলিশের উচিত ছিল এদেরকে অন্তত যাচাই বাছাই করে দেখা এরা আসলে বাংলাদেশি নাগরিক নাকি রোহিঙ্গা। জনগণতো যাচাই-বাছাই করতে পারে না। এছাড়া বাংলাদেশি নাগরিক হউক আর রোহিঙ্গা হোক এদের অন্তত মানবিক সহায়তা প্রদান করা যেত।

এ ব্যাপারে বিজিবি-৫২ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল মোহাম্মদ আরিফুল হক চৌধুরী জানান, তার আওতাধীন সীমান্তে শুক্রবার ভোররাতে পুশইনের কোনো তথ্য নেই। এরা আদৌ তার আওতাধীন সীমান্ত দিয়ে ঢুকেছে কিনা তা নিশ্চিত নন। তবে, তা খতিয়ে দেখতে বিজিবির একটি স্পেশাল ইউনিট কাজ করছে। স্থানীয় জনসাধারণ তাদেরকে যে স্থানে পান ওই স্থান সীমান্ত থেকে প্রায় ১০ কিলোমিটার দূরে। এক্ষেত্রে বিজিরিব কোনো দায়বদ্ধতা ছিল কি-না তাও তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।

বিএসএফের পুশইনকৃত আটক লোকজনকে যাচাই-বাছাইসহ অন্যান্য কার্যক্রম গ্রহণ না করে থানার ডিউটি অফিসার তাদের ছেড়ে দেওয়ার অনুমতি প্রদানের ব্যাপারে জানতে চাইলে থানার ওসি মাহবুবুর রহমান মোল্লা শুক্রবার বিকেলে জানান, তিনি অফিসিয়ালি এ বিষয়ে কিছু বলতে পারবেন না।

সীমান্ত আইন সংশ্লিষ্ট একজন অভিজ্ঞ আইনজীবী ও মানবাধিকারকর্মী বলেন, স্থানীয় লোকজন যখন বিএসএফের পুশইনকৃত ব্যক্তিদের আটক করে পুলিশকে খবর দিয়েছিল। তখন পুলিশের দায়িত্ব ছিল তাদেরকে হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে পরিচয় নিশ্চিত হয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাগ্রহণ অথবা বিজিবিকে অবহিত করা। কিন্তু থানার ডিউটি অফিসার স্থানীয়দের ওই ব্যক্তিদের ছেড়ে দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন যা সঠিক হয়নি। এরা আদৌ বাংলাদেশি কি-না, অথবা তারা কোনো অসৎ উদ্দেশ্যে দেশে প্রবেশ করেছে কি-না, তা খতিয়ে দেখা পুলিশের দায়িত্বের মধ্যে পড়ে। কিন্তু তা না করে তিনি দায়িত্ব পালনে চরম অবহেলা দেখিয়েছেন, যা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ভূমিকাকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। এরসাথে জাতীয় নিরাপত্তার বিষয়টিও জড়িত থাকতে পারত।

logo
প্রকাশকঃ অধ্যাপক ড. জোবায়ের আলম
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদকঃ তাপস রায় সরকার
মোবাইল: +৮৮০ ১৭৩৬ ৭৮৬৯১৫
কার্যালয় : বিটিটিসি বিল্ডিং (লেভেল:০৩), ২৭০/বি, তেজগাঁও (আই/এ), ঢাকা-১২০৮
মোবাইল: +880 2-8878026, +880 1736 786915, +880 1300 126 624
ইমেইল: tbtbangla@gmail.com (online), ads@thebangladeshtoday.com (adv) newsbangla@thebangladeshtoday.com (Print)
বাংলাদেশ টুডে কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি ও বিষয়বস্তু অন্য কোথাও প্রকাশ করা বে-আইনী।
Copyright © 2025 The Bangladesh Today. All Rights Reserved.
Host by
linkedin facebook pinterest youtube rss twitter instagram facebook-blank rss-blank linkedin-blank pinterest youtube twitter instagram