জসিম সিদ্দিকী, কক্সবাজার: বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত কক্সবাজারে বাণিজ্যিক দুটি প্রতিষ্ঠান মিলে বালিয়াড়ি কেটে কৃত্রিম খাল তৈরি করেছে। এই খাল সৈকতের প্রাকৃতিক পানি চলাচলের পথ বন্ধ করে বালির বাঁধ তৈরি করে খনন করা হয়েছে, যা সৈকতের অবিচ্ছিন্নতা নষ্ট করছে এবং তীব্র ভাঙনের আশঙ্কা তৈরি করেছে। এতে কক্সবাজার সৈকতের পরিবেশ, পর্যটক নিরাপত্তা এবং সৈকতের অস্তিত্বই হুমকির মুখে পড়েছে।
স্থানীয় পর্যটন ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, বীচ ম্যানেজমেন্ট কমিটি সৈকত রক্ষায় কোনো উদ্যোগ না নিয়ে বরং ভ্রাম্যমাণ দোকান বরাদ্দ ও বিক্রির মাধ্যমে লাখ লাখ টাকা আয় করছে। অথচ সৈকত রক্ষার জন্য কোনো সংস্কার কার্যক্রমে তাদের কোনো ভূমিকা দেখা যাচ্ছে না। সচেতন মহলের প্রশ্ন, দোকান বিক্রির টাকা নিচ্ছে বীচ ম্যানেজমেন্ট কমিটি, তাহলে সৈকত সংস্কার করবে কেন কক্সবাজার পৌরসভা বা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ?
শুক্রবার (২৭ জুন) বিকেলে সৈকতের কলাতলী পয়েন্টসংলগ্ন ডিভাইন ইকো রিসোর্টের পাশে কৃত্রিম খালের অস্তিত্ব দেখা যায়। স্থানীয় ব্যবসায়ীরা জানান, বর্ষার পানি প্রাকৃতিক ছড়া দিয়ে সাগরে মিশলেও প্যাসিফিক ক্যাফে কর্তৃপক্ষ ছড়া বন্ধ করে বালির বাঁধ তৈরি করে, ফলে ডিভাইন ইকো রিসোর্টের সামনে জমে থাকা পানি নিষ্কাশনের জন্য বালিয়াড়ি কেটে কৃত্রিম খাল খনন করা হয়। এ খাল এখন জোয়ার-ভাটার প্রভাবে আরও বড় হচ্ছে, সৈকতের একটানা বালিয়াড়ি ভেঙে টুকরো টুকরো হয়ে যাচ্ছে, যা সৈকতের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও পরিবেশের জন্য মারাত্মক হুমকি।
কক্সবাজারের পরিবেশবাদী সাংবাদিক ফজলুল কাদের চৌধুরী বলেন, “দুটি প্রতিষ্ঠান ব্যক্তিগত স্বার্থে এই খাল তৈরি করেছে, ফলে ময়লাযুক্ত পানি সাগরে মিশে পরিবেশ দূষিত হচ্ছে। ভারী বর্ষণে খাল আরও বড় হয়ে পর্যটকের স্নানে প্রতিবন্ধকতা ও প্রাণহানির ঝুঁকি বাড়াচ্ছে।”
সী সেফ লাইফ গার্ড সংস্থার সিনিয়র কর্মী মোহাম্মদ শুক্কুর জানান, সাম্প্রতিক বর্ষায় সৈকতে গর্ত ও গুপ্তখালের কারণে ৮ পর্যটক মারা গেছেন। কৃত্রিম খাল পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ করে তুলছে, যা পর্যটকদের জন্য প্রাণঘাতী ফাঁদে পরিণত হতে পারে।
এদিকে ডিভাইন ইকো রিসোর্টের প্রতিনিধি মোহাম্মদ সেলিম দাবি করেছেন, “প্রাকৃতিক পানি চলাচলের পথ বন্ধ হওয়ায় আমাদের সীমানা ভাঙনের মুখে পড়েছে। বিকল্প পথে পানি গেলেও খাল খননে আমরা জড়িত নই।”
অন্যদিকে কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সালাহ্উদ্দিন বলেন, সৈকতের দেখভাল পৌরসভা ও উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের দায়িত্ব। তবে কেউ অবৈধ কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকলে জেলা প্রশাসন ব্যবস্থা নেবে।
সবমিলিয়ে স্থানীয়রা বলছেন, বীচ ম্যানেজমেন্ট কমিটির দায়িত্বহীনতা ও আর্থিক বাণিজ্যের কারণে প্রাকৃতিক সৈকত আজ বিপর্যয়ের মুখে। অবিলম্বে কৃত্রিম খাল বন্ধসহ সৈকত রক্ষায় কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন পরিবেশবিদ ও পর্যটন সংশ্লিষ্টরা।