ঢাকা
১৯শে ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
রাত ১:৪৩
logo
প্রকাশিত : ডিসেম্বর ১৭, ২০২৫

রক্তে ভেজা রাজনীতিতে দেশ বাঁচবে তো?

রাজনীতি! এ যেন এক প্রমত্তা নদী, যার স্রোতধারায় একটি জাতির ভাগ্যলিপি রচিত হয়। কিন্তু হায়! বাংলাদেশে এই নদী আজ তার চিরায়ত সৃজনশীল পথ হারিয়ে এক বিধ্বংসী প্লাবনে রূপ নিয়েছে। বিশেষ করে ৫ই আগস্ট ২০২৪-এর সেই উত্তাল দিনটির পর, যখন ফ্যাসিস্ট সরকারের পতন ঘটল, তখন সাধারণ মানুষের মনে যে আশার প্রদীপ জ্বলেছিল, তা ২০২৫ সালের এই শেষলগ্নে এসে এক নিদারুণ হতাশায় নিমজ্জিত। আমরা আজ প্রত্যক্ষ করছি এক অদ্ভুত অরাজকতা, যেখানে ক্ষমতার অন্ধ মোহ আর প্রতিহিংসার দাবানল গ্রাস করছে আমাদের প্রিয় স্বদেশকে। রাজনীতির এই কদর্য রূপ আজ কেবল ক্ষমতার পালাবদল নয়, বরং এটি হয়ে দাঁড়িয়েছে মানুষের প্রাণনাশের এক নির্মম হাতিয়ার। এই রক্তিম অধ্যায়ের প্রতিটি ছত্রে লুকিয়ে থাকা বেদনার্ত সত্যগুলোকে এবং তাদের সুদূরপ্রসারী ভয়াল প্রভাবগুলোকে আজ আমরা উন্মোচন করব।

রাজনীতির এই অস্থিতিশীলতা কীভাবে একটি উদীয়মান অর্থনীতির টুঁটি চেপে ধরেছে, তা ২০২৫ সালের বর্তমান প্রেক্ষাপটে এক ভয়াল বাস্তবতা। বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক ২০২৫ সালের অক্টোবর মাসে প্রকাশিত ‘ত্রৈমাসিক অর্থনৈতিক সমীক্ষা’-এর পাতায় চোখ রাখলে যে কেউ শিউরে উঠবেন। সেখানে স্পষ্ট উল্লেখ করা হয়েছে যে, রাজনৈতিক অস্থিরতার জেরে গত ১ বছরে বিদেশি প্রত্যক্ষ বিনিয়োগ বা এফডিআই আশঙ্কাজনক হারে কমেছে। এই পরিসংখ্যানটি কেবল একটি সংখ্যার পতন নয়, বরং এটি আমাদের জাতীয় অর্থনীতির হৃদপিণ্ডে এক গভীর আঘাতের শামিল। এর প্রত্যক্ষ প্রভাবে দেশের শিল্পায়ন প্রক্রিয়া থমকে দাঁড়িয়েছে, নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগগুলো একে একে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে এবং হাজারো স্বপ্নবাজ তরুণ উদ্যোক্তা পুঁজির অভাবে দেউলিয়া হওয়ার পথে। বিনিয়োগকারীদের এই মুখ ফিরিয়ে নেওয়ার ফলে দীর্ঘমেয়াদে আমরা এক পরনির্ভরশীল জাতিতে পরিণত হওয়ার ঝুঁকিতে পড়ছি, যেখানে বেকারত্বের অভিশাপ একটি পুরো প্রজন্মকে হতাশার অন্ধকারে ঠেলে দিচ্ছে।

একই সুরে বিশ্বব্যাংক তাদের ২০২৫ সালের জুনে প্রকাশিত গ্লোবাল ইকোনমিক প্রসপেক্টস প্রতিবেদনে কোনো রাখঢাক না করেই সতর্ক করে দিয়েছে—অবরুদ্ধ রাজপথ, টানা হরতাল ও রাজনৈতিক সংঘাত বাংলাদেশের অর্থনীতির শ্বাসরোধ করছে। প্রত্যাশিত প্রবৃদ্ধির যে স্বপ্ন একদিন সামনে জ্বলজ্বল করছিল, তা আজ বাস্তবতার ভারে নুয়ে পড়েছে। এই নিম্নমুখী প্রবৃদ্ধির নিষ্ঠুর চাপে সবচেয়ে বেশি পিষ্ট হচ্ছে নিম্ন ও মধ্যবিত্ত মানুষ; নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের লাগামহীন মূল্যবৃদ্ধি তাদের দৈনন্দিন জীবনকে এক অসহ্য সংগ্রামে পরিণত করেছে। দারিদ্র্য বিমোচনে অর্জিত বহু বছরের সাফল্য যেন চোখের সামনে বালির দেয়ালের মতো ভেঙে পড়ছে।

আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে বাংলাদেশের অবস্থানও ক্রমশ ফিকে হয়ে যাচ্ছে। ২০২৫ সালের জানুয়ারিতে প্রকাশিত ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের গ্লোবাল রিস্ক রিপোর্ট জানিয়ে দেয়, রাজনৈতিক ঝুঁকির ভারে দক্ষিণ এশিয়ায় ব্যবসার পরিবেশ সূচকে বাংলাদেশ আরও ১৫ ধাপ পিছিয়ে পড়েছে। এই পিছিয়ে পড়া শুধু একটি সংখ্যার গল্প নয়—এর অর্থ, বৈশ্বিক বাজারে আমাদের দরকষাকষির শক্তি ক্ষয় হচ্ছে, বিদেশি ক্রেতাদের আস্থা টলমল করছে, আর তারা ধীরে ধীরে বিকল্প বাজারের দিকে সরে যাচ্ছে। এটি আমাদের রপ্তানি আয়ের ভবিষ্যতের ওপর এক অশনিসংকেত। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (IMF) ২০২৪ সালের নভেম্বরের আর্টিক্যাল ফোর কনসালটেশন রিপোর্ট-এর নির্মম বাস্তবতা—রাজনৈতিক অনিশ্চয়তার কারণে বেসরকারি খাতে বিনিয়োগ লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ২৫ শতাংশ কমে গেছে। এর পরিণতি সুদূরপ্রসারী ও ভয়াবহ: শিল্পখাত স্থবির, উৎপাদনশীলতা থমকে আছে, আধুনিক প্রযুক্তির স্পর্শ অধরা। এই অনিশ্চয়তা চলতে থাকলে দেশের অর্থনীতি ধীরে ধীরে শক্তিহীন ও পঙ্গু হয়ে পড়ার আশঙ্কা আর কেবল আশঙ্কা নয়—একটি স্পষ্ট বাস্তবতায় রূপ নিচ্ছে।

শিক্ষাঙ্গন, যা হওয়ার কথা ছিল জ্ঞানচর্চার পবিত্র ভূমি, তা আজ পরিণত হয়েছে রণক্ষেত্রে। শিক্ষা মন্ত্রণালয় কর্তৃক ২০২৫ সালের জুলাই মাসে প্রকাশিত ‘বার্ষিক শিক্ষা জরিপ’-এর তথ্য আমাদের হৃদয়ে রক্তক্ষরণ ঘটায়। সেখানে বলা হয়েছে, রাজনৈতিক সংঘাত ও অস্থিরতার কারণে গত ১ বছরে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে পাঠদান কার্যক্রম অন্তত ৪০ দিন সম্পূর্ণ বন্ধ ছিল। এই ৪০ দিনের বিরতি কেবল সময়ের অপচয় নয়, বরং এটি শিক্ষার্থীদের মেধা ও মননের বিকাশে এক অপূরণীয় ক্ষতি। সেশনজটের এই অভিশাপে আটকা পড়ে হাজারো শিক্ষার্থী সময়মতো কর্মজীবনে প্রবেশ করতে পারছে না, ফলে পারিবারিক ও সামাজিকভাবে তারা এক গভীর হীনম্মন্যতায় ভুগছে এবং অনেকেই হতাশা থেকে বিপথগামী হচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (UGC)-এর ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে প্রকাশিত ৫০তম বার্ষিক প্রতিবেদন-এ উঠে এসেছে এক করুণ চিত্র, যেখানে দেখা যায় দেশের প্রায় ৭০% উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নিয়মিত ছাত্র সংসদ নির্বাচন হয় না। এই তথ্যটি আমাদের ইঙ্গিত দেয় যে, আমরা এমন এক নেতৃত্বহীন ভবিষ্যৎ প্রজন্ম তৈরি করছি, যারা গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ ও পরমতসহিষ্ণুতার চর্চা ছাড়াই বেড়ে উঠছে। এর ফলে ভবিষ্যতে জাতীয় রাজনীতিতে স্বৈরাচারী মনোভাবাপন্ন নেতৃত্বের উদ্ভব হওয়ার প্রবল সম্ভাবনা তৈরি হচ্ছে, যা গণতন্ত্রের জন্য এক বড় হুমকি।

সুশাসনের চিত্রটি আরও ভয়াবহ। ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (TIB)-এর ২০২৪ সালের ১০ ডিসেম্বর আন্তর্জাতিক দুর্নীতিবিরোধী দিবসে প্রকাশিত গবেষণা প্রতিবেদন আমাদের সামনে এক লজ্জাজনক বাস্তবতা তুলে ধরে। সেখানে দেখা যায়, সরকারি সেবা নিতে গিয়ে দেশের ৮০% মানুষ কোনো না কোনোভাবে হয়রানি বা দুর্নীতির শিকার হচ্ছেন। এই বিশাল শতাংশের মানুষ যখন রাষ্ট্রের কাছেই শোষিত হয়, তখন রাষ্ট্রের প্রতি নাগরিকের আস্থা ও মমত্ববোধ সম্পূর্ণরূপে ভেঙে পড়ে। এই অবিশ্বাসের সংস্কৃতি সমাজে আইন অমান্য করার প্রবণতা এবং "জোর যার মুল্লুক তার"—এই বন্য মানসিকতাকে উসকে দিচ্ছে। এমনকি মানুষের মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর এই সংঘাতের প্রভাব কতটা গভীর, তা ফুটে উঠেছে জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট-এর ২০২৫ সালের ১০ অক্টোবর বিশ্ব মানসিক স্বাস্থ্য দিবসে প্রকাশিত বিশেষ বুলেটিনে। সেখানে বলা হয়েছে, রাজনৈতিক সহিংসতা প্রত্যক্ষ করা প্রায় ৬৫% মানুষ দীর্ঘমেয়াদী মানসিক ট্রমা বা আতঙ্কে ভুগছেন। এর অর্থ হলো, আমরা একটি মানসিকভাবে বিপর্যস্ত জাতিতে পরিণত হচ্ছি, যেখানে কর্মস্পৃহা, সৃজনশীলতা এবং পারিবারিক সম্প্রীতি সবই ভয়ের চাদরে ঢাকা পড়ে যাচ্ছে। আর স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ২০২৫ সালের আগস্ট মাসের মাঠ পর্যায়ের জরিপ জানাচ্ছে, রাজনৈতিক অস্থিরতার দিনগুলোতে গ্রামীণ স্বাস্থ্যকেন্দ্রে চিকিৎসকদের উপস্থিতি ৩০% হ্রাস পায়। এই অনুপস্থিতির কারণে গ্রামের অসহায় মানুষগুলো, বিশেষ করে প্রসূতি মা ও শিশুরা জরুরি চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত হয়ে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ছে, যা মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন।

ইতিহাসের দিকে তাকালে আমরা দেখি রাজনীতির যূপকাষ্ঠে কত তাজা প্রাণ বলি হয়েছে। নব্বইয়ের স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে ডা. মিলনের আত্মত্যাগের স্মৃতি আজও অমলিন। কিন্তু বর্তমান সময়ের চিত্র আরও বিভীষিকাময়। আইন ও সালিশ কেন্দ্র (ASK) এবং পুলিশ সদর দপ্তরের ২০২৪ সালের বার্ষিক অপরাধ পরিসংখ্যান সমন্বয় করলে দেখা যায়, বিগত এক যুগে ছাত্র রাজনীতির নামে ক্যাম্পাসে ও রাজপথে ঝরে গেছে ৭০-এরও বেশি তরতাজা প্রাণ। এই সংখ্যাগুলো কেবল পরিসংখ্যান নয়, এগুলো একেকটি নিভে যাওয়া নক্ষত্র। এই হত্যাকাণ্ডের প্রভাব সুদূরপ্রসারী—মেধাবী শিক্ষার্থীরা রাজনীতি বিমুখ হচ্ছে এবং দেশ পরিচালনায় যোগ্য নেতৃত্বের এক বিশাল শূন্যতা তৈরি হচ্ছে। বুয়েটের মেধাবী ছাত্র আবরার ফাহাদের ২০১৯ সালের সেই নির্মম হত্যাকাণ্ড আমাদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়েছিল যে, ভিন্নমত দমনের রাজনীতি কতটা পৈশাচিক হতে পারে। এই ঘটনাটি প্রমাণ করে যে, আমাদের সমাজে সহনশীলতার শেষ বিন্দুটিও মুছে গেছে এবং ভিন্ন মতাবলম্বীকে শত্রু ভাবার এক বিষাক্ত সংস্কৃতি গেড়ে বসেছে। হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (HRW)-এর ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে প্রকাশিত ‘বিশ্ব প্রতিবেদন’-এ উল্লেখ করা হয়েছে যে, বাংলাদেশে রাজনৈতিক সহিংসতায় প্রতি বছর গড়ে ৩০ জন সাধারণ মানুষ প্রাণ হারাচ্ছেন। এই মৃত্যুর মিছিল প্রমাণ করে যে, সাধারণ মানুষের জীবনের নিরাপত্তা আজ রাজনীতির গুটি চালার কাছে তুচ্ছ হয়ে গেছে, যা একটি সভ্য সমাজের জন্য চরম কলঙ্কের। বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান (BIDS)-এর ২০২৫ সালের মে মাসে প্রকাশিত আর্থ-সামাজিক জরিপ ইঙ্গিত দেয় যে, বারংবার ঘটে যাওয়া এমন ১৫০-এর অধিক বড় মাপের রাজনৈতিক সংঘাতের ফলে সাধারণ মানুষের মধ্যে নিরাপত্তাহীনতার বোধ ৮০% বৃদ্ধি পেয়েছে। এই নিরাপত্তাহীনতা মানুষকে ঘরকুনো করে তুলছে, সামাজিক উৎসব ও মেলামেশা কমে যাচ্ছে এবং মানুষ সারাক্ষণ এক অজানা আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছে, যা সামাজিক বুননকে ছিঁড়ে ফেলছে।

বিশ্বের উন্নত গণতন্ত্রের সাথে আমাদের রাজনীতির পার্থক্য আজ যোজন যোজন। ইকোনমিস্ট ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (EIU)-এর ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে প্রকাশিত ‘গণতন্ত্র সূচক’-এ বাংলাদেশকে আবারও ‘হাইব্রিড রেজম’ বা মিশ্র শাসনব্যবস্থার ক্যাটাগরিতে রাখা হয়েছে, যা বৈশ্বিক গণতান্ত্রিক মানদণ্ড থেকে প্রায় ৫০% নিচে। এই সূচকটি বিশ্ব দরবারে আমাদের মাথা নিচু করে দেয় এবং বিদেশি রাষ্ট্রগুলোর কাছে আমাদের কূটনৈতিক গ্রহণযোগ্যতা কমিয়ে দেয়। ফলে আন্তর্জাতিক চুক্তি বা দ্বিপাক্ষিক আলোচনায় আমরা সমমর্যাদা দাবি করার নৈতিক শক্তি হারিয়ে ফেলি। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক এনজিও-এর ২০২৫ সালের মার্চ মাসে প্রকাশিত যৌথ গবেষণা বলছে, প্রতিবেশী দেশগুলোর তুলনায় বাংলাদেশে রাজনৈতিক সহনশীলতার হার ৪০% কম। এই অসহিষ্ণুতা সমাজে বিভেদ ও ঘৃণার প্রাচীর তুলে দিচ্ছে, যার ফলে জাতীয় ঐক্য গড়ে তোলা অসম্ভব হয়ে পড়ছে এবং গৃহযুদ্ধের মতো পরিস্থিতি সৃষ্টির ঝুঁকি বাড়ছে।

বিশ্বব্যাংকের ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বরে প্রকাশিত ‘গভর্ন্যান্স ইন্ডিকেটরস’ ডেটাবেস জানাচ্ছে, কেবল আমলাতান্ত্রিক দুর্নীতি ও রাজনৈতিক অস্বচ্ছতার কারণে প্রতি বছর আমাদের জিডিপির প্রায় ২% হাওয়া হয়ে যাচ্ছে। এই বিপুল পরিমাণ অর্থ পাচার বা অপচয় হওয়ার ফলে আমরা উন্নত স্বাস্থ্যসেবা, আধুনিক শিক্ষা এবং মানসম্মত অবকাঠামো থেকে বঞ্চিত হচ্ছি, যা দেশকে উন্নয়নের মহাসড়ক থেকে ছিটকে ফেলছে। ফ্রিডম হাউস-এর ২০২৫ সালের ‘ফ্রিডম ইন দ্য ওয়ার্ল্ড’ রিপোর্ট অনুযায়ী, রাজনৈতিক অধিকার ও নাগরিক স্বাধীনতার সূচকে আমরা বৈশ্বিক গড়ের চেয়ে নিচে অবস্থান করছি। এর অর্থ হলো, একজন নাগরিক হিসেবে আমাদের বাকস্বাধীনতা ও ন্যায়বিচার পাওয়ার অধিকার আজ ভূলুণ্ঠিত, যা একটি স্বাধীন দেশের নাগরিকদের জন্য পরাধীনতারই নামান্তর।

তবুও আমরা আশাহত হতে চাই না। ২০২৫ সালের এই অন্ধকার সময় পেরিয়ে আমরা ২০৪০ সালের একটি আলোকিত বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখি। পরিসংখ্যান বলছে, যদি আমরা এখনই ঘুরে দাঁড়াই, তবে ২০৩০ সালের মধ্যে রাজনৈতিক সহিংসতা সূচক ৪-এর ঘরে এবং ২০৪০ সালে তা ২-এর ঘরে নামিয়ে আনা সম্ভব। এই লক্ষ্য অর্জনে ২০২৬ থেকে ২০৫০ সাল পর্যন্ত আমাদের করণীয় অত্যন্ত সুনির্দিষ্ট।

প্রথমত, সাংবিধানিক সংস্কারের কোনো বিকল্প নেই। নির্বাচনকালীন সরকারব্যবস্থা এবং বিচার বিভাগের পূর্ণ স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে হবে। দ্বিতীয়ত, তৃণমূল গণতন্ত্রের ভিত্তি মজবুত করতে হবে। স্থানীয় সরকার বিভাগের ২০২৫ সালের বার্ষিক পর্যালোচনা বলছে, স্থানীয় সরকার নির্বাচনে জনসম্পৃক্ততা বাড়লে রাজনৈতিক সচেতনতা ২০% বৃদ্ধি পায়। এই সচেতনতা বৃদ্ধির ফলে জনগণ তাদের অধিকার সম্পর্কে সোচ্চার হবে এবং জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে পারবে। তৃতীয়ত, শিক্ষাঙ্গনকে সম্পূর্ণরূপে রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত করতে হবে। চতুর্থত, দুর্নীতি দমন কমিশনকে হতে হবে নখদন্তহীন বাঘের পরিবর্তে সত্যিকার অর্থে শক্তিশালী। টিআইবি-এর ২০২৪ সালের এক সুপারিশমালা অনুযায়ী, দুর্নীতির বিরুদ্ধে গণসচেতনতা ৭০% বাড়াতে পারলে সুশাসন প্রতিষ্ঠা সহজতর হয়। আর সবশেষে, রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ ও সহনশীলতার সংস্কৃতি গড়ে তুলতে হবে।আমাদের এই প্রিয় মাতৃভূমিকে আর রক্তে রঞ্জিত হতে দেওয়া যাবে না। আসুন, আমরা শপথ নিই—রাজনীতি হবে মানুষের কল্যাণে, কোনো মায়ের কোল খালি করার জন্য নয়। রক্তের দাগ মুছে যাক রাজপথ থেকে, চেতনার মশাল জ্বালো প্রতিটি প্রাণে; ক্ষমতার দম্ভ নয়, সেবার ব্রত নিয়ে— এসো নতুন সূর্য আনি এই বাংলার আসমানে।

লেখক
ড. তারনিমা ওয়ারদা আন্দালিব
সহকারী অধ্যাপক
ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়

দাউদ ইব্রাহিম হাসান
মাস্টার্স শিক্ষার্থী
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়

সর্বশেষ
logo
প্রকাশকঃ অধ্যাপক ড. জোবায়ের আলম
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদকঃ এডভোকেট মো: গোলাম সরোয়ার
কার্যালয় : বিটিটিসি বিল্ডিং (লেভেল:০৩), ২৭০/বি, তেজগাঁও (আই/এ), ঢাকা-১২০৮
মোবাইল: +880 2-8878026, +880 1736 786915, +880 1300 126 624
ইমেইল: tbtbangla@gmail.com (online), ads@thebangladeshtoday.com (adv) newsbangla@thebangladeshtoday.com (Print)
বাংলাদেশ টুডে কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি ও বিষয়বস্তু অন্য কোথাও প্রকাশ করা বে-আইনী।
Copyright © 2025 The Bangladesh Today. All Rights Reserved.
Host by
linkedin facebook pinterest youtube rss twitter instagram facebook-blank rss-blank linkedin-blank pinterest youtube twitter instagram