

আবু হেনা সাকিল, রাবি প্রতিনিধি: প্রায় ছয় বছর পর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) অনুষ্ঠিত হয়েছে দ্বাদশ সমাবর্তন। বুধবার (১৭ ডিসেম্বর) বিশ্ববিদ্যালয় স্টেডিয়ামে এই সমাবর্তন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এতে তিন ব্যাচের প্রায় ৬ হাজার শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করেন।
অনুষ্ঠানটি দুটি পর্বে অনুষ্ঠিত হয়। প্রথম পর্বে এদিন সকালে অতিথি ও গ্র্যাজুয়েটদের আসন গ্রহণ, শোভাযাত্রা, স্বাগত বক্তব্য, ডিগ্রি উপস্থাপন ও গ্রহণ, শুভেচ্ছা ও সমাবর্তন বক্তব্য শেষে সভাপতির বক্তব্যের মাধ্যমে শেষ হয়। পরে দুপুর আড়াইটায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় পর্ব শুরু হয়।
সমাবর্তনে সভাপতি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের শিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. চৌধুরী রফিকুল আবরার। বিশেষ অতিথি হিসেবে পরিকল্পনা উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. ওয়াহিদ উদ্দিন মাহমুদ এবং সমাবর্তন বক্তা হিসেবে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. এস এম এ ফায়েজ উপস্থিত ছিলেন।
সভাপতির বক্তব্যে শিক্ষা উপদেষ্টা বলেন, "আজকের দিনটি শুধু শিক্ষার্থীদের ব্যক্তিগত অর্জনের নয়, বরং এই ঐতিহাসিক বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্জিত জ্ঞান ও অবস্থানের স্বীকৃতি। বিশ্ববিদ্যালয় কেবল পেশাগত দক্ষতা অর্জনের স্থান নয়, এটি নৈতিকতা, বিবেক ও ন্যায়ের পক্ষে অবস্থান নেওয়ার শিক্ষা কেন্দ্র। এখানে ধারণা ও মূল্যবোধ গড়ে ওঠে, যা সমাজের কল্যাণে ভূমিকা রাখে।"
তিনি আরও বলেন, "বাংলাদেশে দক্ষ পেশাজীবীর প্রয়োজন থাকলেও শিক্ষা যেন কেবল চাকরির প্রস্তুতিতে সীমাবদ্ধ না থাকে। বিশ্ববিদ্যালয় হলো জনগণের আমানত, যেখানে অর্জিত জ্ঞান সমাজ ও দেশের কল্যাণে ব্যবহৃত হওয়াই মূল লক্ষ্য। শিক্ষার্থীদের নাগরিক দায়িত্ব, সচেতনতা, সমালোচনামূলক চিন্তা ও সাহসিকতার সঙ্গে জন জীবনে অংশ নেওয়ার আহ্বান জানান তিনি। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের দীর্ঘ ঐতিহ্য ও আত্মত্যাগের ইতিহাস তুলে ধরে তিনি বলেন, এই প্রতিষ্ঠান সবসময়ই ন্যায় ও বিবেকের পক্ষে দাঁড়ানোর শিক্ষা দিয়ে এসেছে।"

সমাবর্তন বক্তা হিসেবে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. এস এম এ ফায়েজ বলেন, "এই সমাবর্তন যেমন একদিক থেকে তোমাদের শিক্ষা যাত্রার সমাপ্তি অন্যদিকে তোমাদের বৃহৎ দায়িত্ব অর্পণ করে। আজকের এই অর্জন তোমাদের আগামী দিনের দায়িত্ব পালনের সোপান। তোমরা সর্বস্তরে নিজ নিজ দায়িত্ব সুন্দর ভাবে পালন করবে।"
তিনি বলেন, "আমাদের দেশে দক্ষ গ্রাজুয়েট প্রয়োজন। যারা এদেশের উন্নয়নে সম্মূখ সারিতে থেকে অবদান রাখবে। এটি এমন এক বিনিয়োগ, যা এই বিশ্বাস ধারণ করে যে জ্ঞান ব্যক্তিগত উচ্চাকাঙ্ক্ষা ধারণ করে না, বরং জন সাধারণের মঙ্গলের জন্যই। তোমরা জনসাধারণের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করবে, তাদের মঙ্গলে কাজ করবে। ক্রম পরিবর্তনশীল এই বিশ্বে ওয়ার্ল্ড ক্লাস সিটিজেন থাকার জন্য নিজের মধ্য দিয়েই পরিবর্তনের শুরু করতে হবে।"
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক সালেহ্ হাসান নকীব বলেন, "গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ, ন্যায় ও নৈতিকতার পক্ষে দাঁড়াতে সক্ষম দক্ষ মানবসম্পদ গড়ে তুলতেই রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে নানা প্রতিকূলতার মধ্যেও আপনারা যে অধ্যবসায় ও দৃঢ়তা দেখিয়েছেন, সেটিই আপনাদের অন্যতম বড় অর্জন।"
উপাচার্য বলেন, "আজকের প্রযুক্তিনির্ভর ও পরিবর্তনশীল বিশ্বে টিকে থাকতে হলে জ্ঞানকে মানবতার সেবায় নিয়োজিত করতে হবে, ন্যায়ের পক্ষে রাখতে হবে কণ্ঠস্বর এবং সততাকে রাখতে হবে জীবনের মূলনীতি হিসেবে। আপনারা এমন এক জাতির প্রতিনিধিত্ব করছেন, যার সম্ভাবনা অপরিসীম। এই দেশ আপনাদের সৃজনশীলতা, জ্ঞান ও ন্যায়পরায়ণ মানসিকতার দিকে তাকিয়ে আছে।"
অনুষ্ঠানে অন্যান্যদের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্যদ্বয়, জনসংযোগ দপ্তর প্রশাসক, রেজিস্ট্রার ও প্রক্টরসহ বিভিন্ন অনুষদের অধিকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। এবারের সমাবর্তনে ৬০, ৬১ ও ৬২ মোট ব্যাচের ৫ হাজার ৯৬৯ জন শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করেন।
এর আগে সর্বশেষ একাদশ সমাবর্তন ২০১৯ সালের ৩০ নভেম্বর অনুষ্ঠিত হয়।

