

রাণীশংকৈল (ঠাকুরগাঁও) প্রতিনিধি: নিয়ম অনুযায়ী কাজ শেষ হওয়ার পর বিল উত্তোলনের কথা থাকলেও, কাজ অসম্পূর্ণ রেখেই সরকারি অর্থ তুলে নিয়ে উধাও হয়েছেন এক ঠিকাদার। ফলে পাঁচ বছর ধরে টয়লেটবিহীন অবস্থায় মানবেতর জীবনযাপন করছে তিনটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শত শত শিক্ষার্থী ও শিক্ষক।
ঘটনাটি ঘটেছে ঠাকুরগাঁওয়ের রাণীশংকৈল উপজেলায় জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের আওতাধীন একটি ওয়াশব্লক নির্মাণ প্রকল্পে।
জানা গেছে, জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের অধীনে একটি প্যাকেজের মাধ্যমে উপজেলার তিনটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ওয়াশব্লক নির্মাণের জন্য টেন্ডার আহ্বান করা হয়। টেন্ডার অনুযায়ী মোস্তাফিজুর রহমান নামের এক ঠিকাদার প্রায় পাঁচ বছর আগে কাজ শুরু করেন। কার্যাদেশে উল্লেখ ছিল, কাজ শুরুর ৮ থেকে ১০ মাসের মধ্যেই নির্মাণ শেষ করার বাধ্যবাধকতা।
কিন্তু বাস্তবে দেখা যায়, সামান্য কিছু কাজ করে ঠিকাদার বিল উত্তোলন করে আত্মগোপনে চলে যান। আজও কাজের কোনো অগ্রগতি নেই।
অর্ধসমাপ্ত অবস্থায় পড়ে থাকা প্রতিষ্ঠানগুলো হলো—কাতিহার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, বাঁশনাহার গুচ্ছগ্রাম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং ভবানীপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়।
অফিস সূত্রে জানা গেছে, তিনটি ওয়াশব্লক নির্মাণে মোট বরাদ্দ ছিল প্রায় ৪২ লাখ টাকা। কিন্তু বিদ্যালয়গুলো সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, কোথাও শুধু ইটের গাঁথুনি, কোথাও ভিত্তির চিহ্ন—সম্পূর্ণ ওয়াশব্লকের কোনো অস্তিত্বই নেই।
এর ফলে সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগে পড়েছে শিক্ষার্থীরা। বিশেষ করে ছাত্রীদের জন্য চরম ভোগান্তির সৃষ্টি হয়েছে। শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের খোলা জায়গায় অথবা আশপাশের বাড়িতে টয়লেট ব্যবহারের জন্য যেতে হচ্ছে।
বাঁশনাহার গুচ্ছগ্রাম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ইকবাল হোসেন ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “সাংবাদিক ভাই, কার কথা কে শোনে? শিক্ষা অফিসে গেছি, জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলী অফিসে গিয়েছি—ধর্না দিয়েও কোনো কাজ হয়নি। ঠিকাদার কে, কোথায়—সেটাও আমরা জানি না।”
এ বিষয়ে উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের সহকারী প্রকৌশলী রোকনুজ্জামান ওয়াশব্লক প্রকল্পের তথ্য দিতে গড়িমসি করেন। তিনি বলেন, আমি মাত্র তিন মাস আগে এখানে যোগদান করেছি। এই টেন্ডার সংক্রান্ত তেমন কোনো তথ্য আমার কাছে নেই। আমি সপ্তাহে মাত্র দুই দিন অফিস করি। বিষয়টি জেলা নির্বাহী প্রকৌশলীর দপ্তরে আছে।
অন্যদিকে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, ঠিকাদারকে খুঁজে পাচ্ছি না। জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল বিভাগকে একাধিকবার জানানো হয়েছে। মাসিক সমন্বয় সভায়ও বিষয়টি বারবার উপস্থাপন করেছি, কিন্তু এখনো কোনো কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
পাঁচ বছর পেরিয়ে গেলেও একটি মৌলিক সুবিধা থেকে বঞ্চিত থেকে যাচ্ছে শিক্ষার্থীরা। প্রশ্ন উঠেছে—ঠিকাদারের বিল কীভাবে ছাড় হলো, আর দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা কবে নেওয়া হবে?

