ঢাকা
২৩শে জুন, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
রাত ৯:৫৫
logo
প্রকাশিত : জুন ২৩, ২০২৫

সংস্কার কমিশনের সব সুপারিশ এখনই বাস্তবায়নের জন্য নয়: আলী রীয়াজ

ঢাবি প্রতিনিধি: জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেছেন, সংস্কার কমিশনগুলোর রিপোর্ট শুধু অন্তর্বর্তীকালীন সরকারে বাস্তবায়ন করার জন্য করা হয়নি। কিছু বিষয় এ সরকার করছে। কিছু বিষয় রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে ঐকমত্যের ভিত্তিতে বাস্তবায়িত হবে। বাকিগুলো ভবিষ্যতে যারা দেশ পরিচালনা করবে তাদের জন্য পথনির্দেশ তৈরি করে দেওয়ার জন্য। সবগুলো সংস্কার অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সময়ে হবে সংস্কার কমিশনগুলো গঠনের উদ্দেশ্য এটা নয়।

রবিবার (২২ জুন) বিকেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদ ভবনের মোজাফফর আহমেদ চৌধুরী মিলনায়তনে ‘‘দ্য স্টেট রিফর্মস অ্যান্ড ইলেকশন ডিসকোর্স ইন ট্রানজিশনাল ডেমোক্রেসিস: ফ্রম মাস আপরাইজিং টু ইলেকশন অ্যান্ড স্টেট বিল্ডিং” শীর্ষক দুই দিনব্যাপী “ফার্স্ট পলিটিক্যাল সায়েন্স কনফারেন্স” এর কী-নোট স্পিস শেষে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন। কনফারেন্সের উদ্বোধনী সেশন ও কী-নোট স্পিস সেশন পরিচালনা করেন কনফারেন্সের আহবায়ক অধ্যাপক কাজী মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান।

কী-নোট স্পিসে আলী রীয়াজ বলেন, স্বৈরশাসক যেকোনো ধরনের অসন্তোষ, যেমন ভিন্নমত ও বিরোধীদল দমন করে শাসন ব্যবস্থায় স্থিতিশীলতা বজায় রাখে। অভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে ভিন্নমত প্রকাশ পায়। যেটা অনেকক্ষেত্রে অস্থিতিশীল অবস্থা তৈরি করে। যেটাকে বলা হয় অটোক্রেটিক নস্টালজিয়া। অভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে দুইটি প্রতিষ্ঠান নিয়ন্ত্রণ করা বেশি কষ্টসাধ্য হয়ে যায়। একটি বিচার বিভাগ এবং অন্যটি সামরিক ও নিরাপত্তা বাহিনী। দীর্ঘদিনের স্বৈরশাসন এই দুই প্রতিষ্ঠানকে দূর্বল করে দেয়। অনেকসময় এই প্রতিষ্ঠানগুলো প্রতিবিপ্লবের মাধ্যমে পূর্বের অবস্থায় ফিরে যাওয়ার আশঙ্কা তৈরি করে। যেমনটা আমরা বিগতে বছরগুলোতে মধ্যপ্রাচ্যে দেখেছি। এ ছাড়াও, পতিত শাসকের সমর্থকরা ট্রানজিশনাল সময়ে অস্থিরতা তৈরি করে, যা গনতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে বিঘ্নিত করে। এই প্রতিষ্ঠানগুলোকে স্থিতিশীল রাখা শুধু অন্তবর্তীকালীন সরকারের দায়িত্ব নয়। বরং রাজনৈতিক দলগুলোরও দায়িত্ব। কারণ নিকট ভবিষ্যতে রাজনৈতিক দলগুলো এসব প্রতিষ্ঠানের ওপর ভর করে শাসনকার্য পরিচালনা করবে।

তিনি বলেন, অনেক সময় যেসব সরকার ক্ষমতা হারিয়েছে, তাদের সমর্থকেরা ইচ্ছাকৃতভাবে গণতান্ত্রিক পরিবর্তন আটকে দিতে চায় এবং গণতন্ত্রকে দুর্বল করার চেষ্টা করে। তারা মিথ্যা তথ্য ছড়িয়ে দেয়। যদি সরকার সত্য তথ্য দিয়ে এর জবাব না দিতে পারে এবং কিছুটা স্থিতিশীলতা বা সদিচ্ছা দেখাতে না পারে, তাহলে এটি একটি বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়ায়। এই অভিজ্ঞতা থেকে আমরা শিক্ষা নিতে পারি। দেখা গেছে, ৬০ শতাংশ দেশ গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় ফিরে যেতে ব্যর্থ হয়েছে, আর ৪০ শতাংশ দেশ সফল হয়েছে। যেখানে এসব সমস্যা সঠিকভাবে মোকাবিলা করা গেছে, সেখানে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা সম্ভব হয়েছে। আর যেখানে মোকাবিলা করা যায়নি, সেখানে আবার পিছিয়ে যাওয়া বা গণতন্ত্র থেকে সরে যাওয়ার ঘটনা ঘটেছে।

শ্যাডো রিফর্ম কমিশন, শ্যাডো ন্যাশনাল কনসেনসাস কমিশন এবং পলিটিক্যাল অ্যান্ড পলিসি সায়েন্স রিসার্চ ফাউন্ডেশনের যৌথভাবে কনফারেন্সটি আয়োজন করেছে। এর আগে, দুপুর আড়াইটায় কনফারেন্সে উদ্বোধনী বক্তব্য রাখেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক নিয়াজ আহমদ খান।

তিনি বলেন, জুলাই-এর ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর আমরা এক ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছি। গণতন্ত্রকে সুসংহত করতে এসময় সকলকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। সকল রাজনৈতিক ও সামাজিক বিভাজন দূর করে আমাদের একযোগে সামনে এগিয়ে যেতে হবে। পারস্পরিক সম্পর্ক জোরদার ও নেটওয়ার্ক বৃদ্ধিতে এই সম্মেলন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন। অত্যন্ত সময়োপযোগী বিষয়কে উপজীব্য করে এই সম্মেলন আয়োজন করায় তিনি আয়োজকদের আন্তরিক ধন্যবাদ জানান।

সম্মানিত অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক দিল রওশন জিন্নাত আরা নাজনীন বলেন, রাষ্ট্র যখন ট্রানজিশনাল পর্যায়ে থাকে, তখন তা শক্তিশালী ও স্বচ্ছ ইনস্টিটিউশন গঠনের সুযোগ সৃষ্টি করে। যদি আমরা এই সুযোগ যথাযথভাবে কাজে লাগাতে পারি, তবে রাষ্ট্রের ভবিষ্যৎ হবে উজ্জ্বল ও আশাব্যঞ্জক। চব্বিশের গণঅভ্যুত্থানে তরুণ প্রজন্ম ফ্যাসিবাদী শাসনব্যবস্থার বিরুদ্ধে ন্যায়বিচার, স্বচ্ছ নির্বাচন এবং দুর্নীতির অবসানের দাবিতে রাস্তায় নেমে আসে। এই অভ্যুত্থান লাখো মানুষের মনে নতুন আশা ও প্রত্যাশার জন্ম দিয়েছে।

এ ছাড়াও, সম্মানিত অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক এ এস এম আমানুল্লাহ এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারপারসন অধ্যাপক নাছিমা খাতুন।

কনফারেন্সের আহবায়ক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক কাজী মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান বলেন, এই কনফারেন্সে বাংলাদেশের অধিকাংশ বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞানীসহ অন্যান্য বিষয়ের শিক্ষক, গবেষক ও শিক্ষার্থীরা তাঁদের গবেষণাধর্মী প্রবন্ধ উপস্থাপন করছেন। এসব প্রবন্ধ বর্তমান বাংলাদেশে রাষ্ট্রসংস্কার ও নির্বাচনকে ঘিরে যে সংকট তৈরি হয়েছে, তা থেকে গণতান্ত্রিক উত্তরণের পথ খুঁজে পেতে সহায়ক হবে।

তিনি সকলকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, আয়োজক কমিটির পক্ষ থেকে আমি দেশ-বিদেশ থেকে আগত সকল প্রবন্ধ উপস্থাপক, অংশগ্রহণকারী, স্বেচ্ছাসেবক এবং সম্মানিত অতিথিদের প্রতি আন্তরিক কৃতজ্ঞতা ও শুভেচ্ছা জানাই। এই সম্মেলনকে আমরা যেন একটি গুরুত্বপূর্ণ সুযোগ হিসেবে গ্রহণ করি এবং জ্ঞান আহরণ, ভাবনার বিনিময়, ন্যায়ভিত্তিক, অন্তর্ভুক্তিমূলক ও গণতান্ত্রিক বাংলাদেশের লক্ষ্যে একসাথে কাজ করার দৃঢ় অঙ্গীকার গ্রহণ করি।

কনফারেন্সে প্রথমদিন দশটি সেশন অনুষ্ঠিত হয়। এতে বিভিন্ন সেশনে চেয়ার ও আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার সারা হোসেন, সংবিধান সংস্কার কমিশনের সদস্য ব্যারিস্টার এম মঈন আলম ফিরোজী, কিশোরগঞ্জ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপউপাচার্য অধ্যাপক মো. শফিকুল ইসলামসহ দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকগণ।

সর্বশেষ
logo
প্রকাশকঃ অধ্যাপক ড. জোবায়ের আলম
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদকঃ তাপস রায় সরকার
মোবাইল: +৮৮০ ১৭৩৬ ৭৮৬৯১৫
কার্যালয় : বিটিটিসি বিল্ডিং (লেভেল:০৩), ২৭০/বি, তেজগাঁও (আই/এ), ঢাকা-১২০৮
মোবাইল: +880 2-8878026, +880 1736 786915, +880 1300 126 624
ইমেইল: tbtbangla@gmail.com (online), ads@thebangladeshtoday.com (adv) newsbangla@thebangladeshtoday.com (Print)
বাংলাদেশ টুডে কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি ও বিষয়বস্তু অন্য কোথাও প্রকাশ করা বে-আইনী।
Copyright © 2025 The Bangladesh Today. All Rights Reserved.
Host by
linkedin facebook pinterest youtube rss twitter instagram facebook-blank rss-blank linkedin-blank pinterest youtube twitter instagram