জিহাদ রানা, বরিশাল ব্যুরো চীফ: প্রতিষ্ঠার এক যুগের বেশি সময় পরেও গবেষণা কার্যক্রমে তেমন উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি নেই বলে হতাশ বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। পর্যাপ্ত গবেষণা পরিবেশ, অবকাঠামো, গবেষণা সামগ্রীর অভাব এবং প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ না থাকায় পিছিয়ে রয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়টির গবেষণা কার্যক্রম। বিশেষ করে শিক্ষার্থীদের গবেষণার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কোনো রকম বাজেট বরাদ্দ না থাকায় তাদের গবেষণা কার্যক্রম সার্বিকভাবে ব্যাহত হচ্ছে।
কীর্তনখোলা ও খয়রাবাদ নদীর মোহনায় মনোরম পরিবেশে বরিশাল বিশ্ববিদ্যায়ে নানা অপূর্ণতা এখানের ছাত্র-ছাত্রীদের হতাশার সাথে ক্ষোভও রয়েছে। বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, শিক্ষকদের গবেষণার জন্য বাজেট বরাদ্দ থাকলেও শিক্ষার্থীদের জন্য কোনো বাজেট নেই। ফলে মাস্টার্স পর্যায়ে শিক্ষার্থীরা গবেষণা করতে আগ্রহ হারাচ্ছেন। হাতে গোনা যে কয়জন শিক্ষার্থী থিসিস নেন মাস্টার্সে, অর্থাভাবে তাদেরও অনেকে আশা হারিয়ে ফেলছেন। এমনকি অর্থাভাবে মানসম্মত থিসিস করতে পারেন না।
বিশ্ববিদ্যালয়টির অর্থ দপ্তরের তথ্য মতে, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে রেগুলার শিক্ষকদের গবেষণার জন্য ১ কোটি টাকা বাজেট বরাদ্দ ছিল। এছাড়াও পিএইচডি শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের জন্য ৩০ লাখ টাকা বরাদ্দ থাকলেও বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের পিএইচডি’র সুযোগ না থাকায় এই অর্থ অব্যবহৃতই থেকে যায়। তবে রেগুলার শিক্ষার্থীদের গবেষণার জন্য কোনো রকম বাজেট বরাদ্দ নেই।
বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বলছেন, তারা বিভিন্ন প্রজেক্ট বা থিসিসের কাজ করার সময় প্রায়শই আর্থিক সংকটে পড়েন। নিজেদের অর্থায়নে গবেষণা করা অনেকের পক্ষেই সম্ভব হচ্ছেনা। অনেকে নিজের অর্থায়ণে গবেষণা শুরু করলেও তহবিল সংকটে তাদের অনেকর কাজ অসমাপ্তই থেকে যায়। প্রয়োজনীয় উপকরণ সংগ্রহ, ডেটা বিশ্লেষণ, সার্ভে পরিচালনা বা জার্নালে প্রকাশনার ক্ষেত্রে তাদের নিজস্ব পকেট থেকে খরচ করতে হয়, যা তাদের পক্ষে বহন করা কঠিন।
বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো আয়োজিত কার্বন ফেস্টে প্রথম হওয়া মৃত্তিকা ও পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মো. মনিরুল ইসলাম গবেষণার ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের মুখোমুখি হওয়া আর্থিক সমস্যার কথা তুলে ধরে বলেন, গবেষণা করার ক্ষেত্রে আর্থিক সমস্যা আমাদের জন্য একটি বড় বাধা। অনেক সময় গবেষণার কাজে গিয়ে আমরা আর্থিক সংকটে পড়ি। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ যদি এ বিষয়ে সহায়তা করে, তবে আমাদের জন্য গবেষণার কাজটি অনেক সহজ হবে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের শিক্ষার্থী সোহেল রানা বলেন, একটি বিশ্ববিদ্যালয়কে গবেষণাধর্মী উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পরিণত করতে হলে এ বিষয়ে বিশেষ নজর দেয়া প্রয়োজন। বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণা কালচার তৈরির জন্য তার প্রধান স্টেকহোল্ডার শিক্ষার্থীদের গবেষণায় অনুপ্রাণিত করতে আর্থিক প্রেরণা দিতে হবে। শুধুমাত্র শিক্ষকদের গবেষণায় নামমাত্র বরাদ্দ দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে কখনোই পুরোপুরি গবেষণা সংস্কৃতি তৈরি করা সম্ভব নয়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান ও সহযোগী অধ্যাপক ড. রহিমা নাসরিন বলেন, আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা নিজেরা গবেষণার জন্য কোনো বাজেট পান না। শিক্ষার্থীদের জন্য বাজেট বরাদ্দ দিলে এবং তাদের সুযোগ দিলে শিক্ষার্থীরা গবেষণায় অনেক এগিয়ে যাবে বলে মনে করে তিনি।
পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. খোরশেদ আলম বলেন, আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের মাস্টার্সে ভর্তি শিক্ষার্থীদের জন্য কোনো বাজেট নাই। অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের গবেষণার জন্য একটি বাজেট থাকে। এ বিষয়ে কর্তৃপক্ষকে অনেকবার বলা সত্ত্বেও বাজেট বরাদ্দ হয়নি। আমরা যারা শিক্ষার্থীদের সাথে গবেষণা করি, অনেক সময় দেখা যায় এই অর্থগুলো আমাদের জোগাড় করতে হয়। যেটা খুবই ডিফিকাল্ট। আমরা আশাকরছি বর্তমান ভিসি এবিষয়ে সুনজর দিবেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা এবং সম্প্রসারণ প্রধান ড. সোনিয়া খান সনি বলেন, “হ্যাঁ, এটা সত্য যে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের গবেষণার জন্য কোনো বাজেট নেই। বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণাটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এ বিষয়ে আমরা কথা বলবো কিভাবে শিক্ষার্থীদের জন্য বাজেট বরাদ্দ রাখা যায়।”
বিশ্ববিদ্যালয় ভিসি অধ্যাপক ড. তৌফিক আলম’র দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি এ বিষয়ে বলেন, গবেষণার মান যেন বাড়ানো যায় সেজন্য গবেষণার সার্বিক বিষয়ে একটি কমিটি গঠন করা হবে। পাশাপাশি আমাদের সেন্ট্রাল ল্যাবে যেসব যন্ত্রপাতি অকেজো হয়ে পড়ে আছে, খুব শীঘ্রই সেগুলো ঠিক করার উদ্যোগ নেয়া হবে বলেও জানান ভিসি।