রাজশাহী থেকে মোঃ হায়দার আলী: “রাখিব নিরাপদ দেখাব আলোর পথ" এ মিশন ভিশনকে বাস্তবায়ন করতে তারুণ্যের উৎসব–২০২৫ উদযাপন এবং সফলভাবে সম্পন্ন করার লক্ষ্যে রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারা কর্তৃপক্ষ তরুণদের নিয়ে তিন দিনব্যাপী বিশেষ কর্মসূচির আয়োজন করেছে। কারাগারে অন্তরীণ ও কর্মকর্তাদের একটি বড় অংশই তরুণ। এই তরুণ সমাজকে ঐক্যবদ্ধ রাখা, তাদের মাঝে পারস্পরিক সহযোগিতা ও বন্ধুত্বের সম্পর্ক গড়ে তোলা এবং সর্বোপরি মাদক ও ধূমপানের কুফল সম্পর্কে সচেতন করার লক্ষ্যে এই কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে।
এই আয়োজনের অংশ হিসেবে গত ২৬ জুন ২০২৫ তারিখে রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারে মাদকবিরোধী আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন রাজশাহী বিভাগের কারা উপ-মহাপরিদর্শক মোঃ কামাল হোসেন এবং বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর, বিভাগীয় কার্যালয়, রাজশাহী এর অতিরিক্ত পরিচালক মোঃ আলি আসলাম হোসেন। সভাপতিত্ব করেন রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার মোঃ শাহ আলম খান।
অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, সমাজের অমূল্য সম্পদ এই তরুণরা। মাদক থেকে দূরে রেখে তাদের যথাযথভাবে গড়ে তুললে তারা দেশ গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারবে। বন্দিদের মাঝে মাদকবিরোধী বার্তা ছড়িয়ে দিতে নাটক, গান ও কবিতা আবৃত্তির আয়োজন করা হয়। পরে অংশগ্রহণকারীদের মাঝে পুরস্কার বিতরণ করা হয়।
অপরদিকে, (২৭ জুন ২০২৫) তারিখে রাজশাহী কারা প্রশিক্ষণ কেন্দ্র প্রাঙ্গণে রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগার ও কোকো স্মৃতি ক্লাবের তরুণ ফুটবলারদের অংশগ্রহণে একটি প্রীতি ফুটবল ম্যাচ অনুষ্ঠিত হয়। এই আয়োজনে উপস্থিত থেকে বিজয়ী দল কোকো স্মৃতি ক্লাব এবং বিজিত দলের মাঝে ট্রফি বিতরণ করেন কারা উপ-মহাপরিদর্শক মোঃ কামাল হোসেন।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন, রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার মোঃ শাহ আলম খান, কারা প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের সিনিয়র প্রধান প্রশিক্ষক মোঃ তারেক কামাল, কারাগারের উপ-তত্ত্বাবধায়ক নুর মোহাম্মদ মৃধা, জেলার আমানুল্লাহ ও অন্যান্য কারা কর্মকর্তা-কর্মচারীবৃন্দ। এই প্রীতি ম্যাচের মধ্য দিয়ে তরুণদের শরীরচর্চা, শৃঙ্খলা ও সহমর্মিতার চর্চা যেমন হয়েছে, তেমনি তাদের মাঝে একটি ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গিও গড়ে উঠেছে।
রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারের এধরনের প্রথম ব্যতিক্রমী উদ্যোগ প্রশংসনীয়। কারাগারের আবদ্ধ পরিবেশে তরুণদের জন্য এমন সচেতনতা ও খেলাধুলার আয়োজন তাদের মানসিক স্বাস্থ্য উন্নয়নে ভূমিকা রাখবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন সংশ্লিষ্টরা।
গত ঈদুল আজহা উপলক্ষে বেশকিছু কয়দি, হাজতী, জামিনে ছাড়া কিংবা খালাস পেয়েছেন। বড় খানার পাশাপশি বন্দিদের জন্য অন্য অন্য সুবিধা ছিল। তবে ঈদে হাজতি ও কয়েদিদের সাথে যে সব আত্নীয় স্বজন দেখা করতে এসেছিলেন তাদের সবাইকে আপ্যায়ন করা হয়, মিষ্টি মুখ করা হয়। এসব ভাল কাজের জন্য প্রশাংসায় ভাসছেন রাজশাহী কারাগার কতৃপক্ষ। এ ধরনের উদ্যোগ, ইতিপূর্বে কেউ গ্রহন করেন নি বলে জানান উপস্থিত অনেকে।
সিনিয়র জেল সুপার মোঃ শাহ আলম বলেন, “রাখিব নিরাপদ দেখাব আলোর পথ’’ এই মূলমন্ত্রে উজ্জীবিত হয়ে দেশের অন্যতম রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, গান, কবিতা, খেলাধূলার পাশাপাশি আগত বিপথগামী লোকদের সঠিক প্রেষণা প্রদানের মাধ্যমে তাদের কৃত ভুল বুঝতে সহায়তা করা ও সংশোধন করা এবং বর্তমান যুগের সথে তাল মিলিয়ে সঠিক প্রশিক্ষণ প্রদান করে দক্ষ মানব সম্পদ হিসেবে সমাজে ফিরিয়ে দেয়ার লক্ষ্যে কারা প্রশাসন নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। বর্তমান সরকারের সদিচ্ছায় বন্দীদের আবাসন সমস্যা দূরীকরণ লক্ষে সমস্ত বন্দীর জন্য সুন্দর আবাসনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। কারাগারে আগত প্রতিটি নিরক্ষর বন্দীকে প্রাথমিক শিক্ষার সুযোগ করে দেয়া হয়েছে।
এছাড়াও কারাগারে অন্তরীন থাকাকালীন বন্দীদের আধুনিক বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে যুগোপযোগী বিভিন্ন ট্রেডে কারাগরি প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষ মানবসম্পদ হিসেবে গড়ে তোলা হচ্ছে।