জিহাদ রানা, বরিশাল ব্যুরো চীফ: বরিশালে জাতীয় পার্টির জেলা ও মহানগর কার্যালয় হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। শনিবার (৩১ মে) রাত সাড়ে ৮টার দিকে নগরীর ফকির বাড়ি রোডে এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনার সঙ্গে গণঅধিকার পরিষদসহ বেশ কয়েকটি সংগঠনের নেতা-কর্মীরা জড়িত বলে অভিযোগ করেছেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা অধ্যাপক মহসিন উল ইসলাম হাবুল।
এদিকে বিকেলে জাতীয় পার্টির মিছিল থেকে নেতা-কর্মীর ওপরে হামলার অভিযোগ করেছে গণঅধিকার পরিষদের নেতারা। এ নিয়ে নগরীতে কিছুটা উত্তেজনা দেখা দিয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদেরের বাসভবনে হামলার প্রতিবাদে বিকেলে বিক্ষোভ সমাবেশ করা হয়।
মিছিল শেষে দলটির নেতা-কর্মীরা ফকির বাড়ি রোডের দলীয় কার্যালয়ে যাওয়ার পথে একদল যুবক তাদের ওপর হামলা চালায়। প্রতিরোধে জাতীয় পার্টির নেতা-কর্মীরা পালটা হামলা করে। এ সময় একজনকে মেরে পুলিশে দিয়েছে জাতীয় পার্টির নেতা-কর্মীরা।
হামলায় জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা অধ্যাপক মহসিন উল ইসলাম হাবুল, জেলা সদস্য সচিব এ্যাড. এম এ জলিল, যুগ্ম আহ্বায়ক রফিকুল ইসলাম গফুর, আক্তার রহসান সফরু, তরুণ পার্টির আহ্বায়ক জুম্মান হায়দার আহত হন।
এর মধ্যে জুম্মান হায়দারকে বরিশাল শের ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। পরে এ ঘটনার জের ধরে শনিবার রাতে গণঅধিকার পরিষদের নেতা-কর্মীরা নগরীর ফকির বাড়ি রোডে জাতীয় পার্টির কার্যালয়ের জেলা ও মহানগর কার্যালয়ে ভাঙচুর চালায়।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, রাতে গণঅধিকার পরিষদের নেতা-কর্মীরা অশ্বিনীকুমার হলের সামনে থেকে মিছিল বেড় করে। মিছিলটি নগরীর ফকিরবাড়ী রোডে এসে জাতীয় পার্টির জেলা ও মহানগর কার্যালয়ে সামনে অবস্থান নিয়ে বিভিন্ন স্লোগান দেয়। একপর্যায়ে তারা দলটি কার্যালয়ে ভাঙচুর চালায়। এ সময়ে সেখানে জাতীয় পার্টির কোন নেতা-কর্মী উপস্থিত ছিলেন না।
অধ্যাপক মহসিন উল ইসলাম হাবুল বলেন, 'জাপা চেয়ারম্যান জিএম কাদেরের বাসভবন হামলা ও ভাঙচুরের প্রতিবাদে সারাদেশে বিক্ষোভ-সমাবেশ কেন্দ্রীয়ভাবে ঘোষণা করা হয়। এরই ধারবাহিকতায় আমরা বিকেলে বরিশালে কর্মসূচি পালন শুরু করি। সমাবেশ শেষে বিক্ষোভ নিয়ে নগরীর ফকিরবাড়ি কার্যালয় থেকে সদর রোডের কাছাকাছি পৌঁছালে পেছন থেকে গণঅধিকার পরিষদের নাম করে কিছু টোকাই মার্কা সন্ত্রাসী লাঠিসোঁটা এবং দেশীয় অস্ত্র নিয়ে আমাদের ওপর হামলা চালায়। আমাদের নেতা-কর্মীরা তা প্রতিহত করতে ধাওয়া দেয়। এ সময়ে হামলাকারীদের একজনকে পুলিশে দেওয়া হয়। রাতে গণঅধিকার পরিষদের নেতা-কর্মীরা মিছিল সহকারে গিয়ে আমাদের জেলা ও মহানগর কার্যালয় ভাঙচুরে করে।'
বরিশাল মহানগর গণঅধিকার পরিষদের সিনিয়র সহ সভাপতি শফিকুল ইসলাম সাগর জানান, 'বিকেলে জাতীয় পার্টি নগরীতে মিছিল বের করে। এ সময় তারা গণঅধিকার পরিষদের নেতা-কর্মীদের নিয়ে কটূক্তি ও সরকারের সমালোচনা করে স্লোগান দিতে থাকে। গণঅধিকার পরিষদের পক্ষ থেকে সরকার বিরোধী স্লোগান না দেওয়ার জন্য অনুরোধ জানানো হয়। কিন্তু জাতীয় পার্টির নেতা-কর্মীরা গণঅধিকার পরিষদের নেতা-কর্মীদের ওপর হামলা চালায়। জাতীয় পার্টির হামলায় আমাদের ১৫ জন নেতা-কর্মী আহত হন। এরমধ্যে সাতজনের অবস্থা গুরুতর।'
আহতরা হলেন, বরিশাল মহানগর গণঅধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক ফয়সাল হোসেন তালুকদার, জেলা কমিটির সভাপতি শামীম রেজা, সাধারণ সম্পাদক এইচ এম হাসান, মহানগরের সাংগঠনিক সম্পাদক সোহাগ ফরাজি, কেন্দ্রীয় যুব অধিকার পরিষদের মানবাধিকার বিষয়ক সম্পাদক মিরাজ হোসাইন।
তিনি আরও বলেন, 'জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদেরসহ ১৮ জনের নাম উল্লেখ ও অজ্ঞাত আরও ২০০-২৫০ জনের বিরুদ্ধে বরিশাল কোতোয়ালি মডেল থানায় একটি অভিযোগ দেওয়া হয়েছে।'
কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মিজানুর রহমান বলেন, 'হামলার ঘটনায় কাউকে আটক করা হয়নি। তবে জাপার লোকজন একজনকে মারধর করে আহতাবস্থায় পুলিশে দিয়েছে। তাকে শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। নগরীর পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে। জাতীয় পার্টির কার্যালয় ভাঙচুরের ঘটনায় কেউ আমাদের কাছে অভিযোগ করেনি।'