ঢাকা
৪ঠা জুন, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
ভোর ৫:১৫
logo
প্রকাশিত : মে ২৬, ২০২৫

নবীনগরে মিজান মাঝির বৈঠা হাতে তিতাস নদীতে ৫৩ বছর

মো. আনোয়ার হোসেন, নবীনগর (ব্রাহ্মণবাড়িয়া) প্রতিনিধি: ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর উপজেলার রতনপুর ইউনিয়নের ভিটি বিশাড়া গ্রামের নিবেদিত প্রাণ এক মাঝি। তার নদীর বুকে সূর্য ওঠে, আবার রাতের আঁধারে মিলিয়ে যায়। সেই আলো-আঁধারির খেলা যেন প্রতিনিয়ত নতুন করে লিখে জীবন সংগ্রামের গল্প। এমনই এক গল্পের নায়ক মিজান মাঝি। ৫৩ বছর ধরে তিতাস নদীতে বৈঠা হাতে শুধু নৌকায় যাত্রী পারাপার নয়, সাথে এগিয়ে নেন সংসার জীবনের পথ চলাও।

১৯৭২ সাল থেকে তিতাস নদীর বুকে যাত্রী পারাপারের জন্য ছুটে চলা মিজান মিয়ার রক্তে যেন মিশে আছে এই পেশা। তাঁর চার ছেলে তিন মেয়ে নিয়ে সংসার। নৌকা চালিয়ে সংসার চলে না তাই পালাক্রমে তিন ছেলেকে বিদেশ পাঠিয়েছেন। দ্বিতীয় ছেলে মালদ্বীপ গিয়ে এখন আর যোগাযোগ করে না, আসেও না। তিনি জানান, এখন আমার বয়স হয়েছে, অচল হয়ে যাচ্ছি, আর নৌকা বাইতে পারি না। গ্রামবাসীকে বললাম আমি আর পারি না। অন্য কাউকে নৌকা চালাতে আনুন। তারা আমায় জানায় এত কষ্ট করে কেউ এখন আর এ পেশায় আসতে রাজি হয় না। তাই আল্লাহ যতদিন আমাকে বাঁচিয়ে রাখে ততদিন আমি এ কাজ চালিয়ে যাব। একজনকে নৌকা চালাতে সাহায্য করার জন্য রাখি। আমি প্রতিদিন ফজরের সময় থেকে কাজ শুরু করি, আর রাত হলে ঘরে ফিরি। অনেক সময় রাতের বেলা যাত্রীরা বিপদে পড়ে আমাকে ডাকাডাকি করে গাং (নদী) পার করে দেওয়ার জন্য।

রোদ, বৃষ্টি, ঝড় কোন প্রকৃতিক প্রতিকূলতাই থামাতে পারেনি মিজান মাঝিকে। এ বিরতিহীন সংগ্রাম যেনো এক জীবন্ত দৃষ্টান্ত। তার জীবনের পথচলায় এসেছে নানা বিপর্যয়। স্কুলের ছাত্র- ছাত্রীদের নিয়ে নৌকা ডুবে যাওয়া, যাত্রীদের অবজ্ঞা, সমাজের অবহেলা স্বত্বেও দমে যাননি মিজান মাঝি।

তিনি জানান, কোনো দিন সরকারের পক্ষ থেকে সাহায্যের মুখ দেখেনি। যেন নদীর মাঝেই ফেলে রাখা হয়েছে তাঁদের প্রাপ্য অধিকার গুলো, যা আর তীরে এসে পৌঁছায় না। তার সহকর্মী অহিদ মিয়া বলেন, রৌদ, বৃষ্টি, ঝড় তুফানে নৌকা চালায়ে যে টাকা পায়, তা দিয়ে সংসারের বাজার খরচই হয় না। অর্থাভাবে অনেক সময় সন্তানের পড়ালেখা বন্ধ হয়ে যায়। আমাদের নিকট নৌকা চালানো শুধু একটি পেশা নয়, এ এক জীবনভর লড়াই। তবুও তারা থেমে যান না। নেই কোনো অভিযোগ, কষ্টের কথা চেপে রেখে প্রতিদিন চালিয়ে যান নৌকা।

অষ্টম শ্রেণীর শিক্ষার্থী আয়েশা নুসরাত ভূঁইয়া বলেন, আমরা স্কুলে আসা যাওয়ার সময় ভয়ে আতঙ্কে থাকি। বৃদ্ধ মিজান মাঝি আমাদের নৌকা দিয়ে নদী পার করে দেয়। এখানে একটি ব্রিজ হলে আমাদের কষ্ট লাঘব হতো। আরেক শিক্ষার্থী নিয়ামুল ইসলাম ভূঁইয়া বলেন, আমরা মিজান মাঝির নৌকা দিয়ে পারাপারের সময় অনেক ভোগান্তির শিকার হচ্ছি। ঝড় তুফানের সময় আমরা স্কুলে আসা-যাওয়ায় সমস্যা হয়ে দাঁড়ায়। এখানে একটি ব্রিজ হলে শিক্ষার্থীসহ সকলেরই উপকার হবে।

স্থানীয় জনগণের মতে, মিজান মিয়া একজন পরিশ্রমী মানুষ। অনেক আগে থেকে দেখে আসছি, তিনি অনেক কষ্ট করে যাত্রী পারাপার করেন।

সর্বশেষ
logo
প্রকাশকঃ অধ্যাপক ড. জোবায়ের আলম
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদকঃ তাপস রায় সরকার
মোবাইল: +৮৮০ ১৭৩৬ ৭৮৬৯১৫
কার্যালয় : বিটিটিসি বিল্ডিং (লেভেল:০৩), ২৭০/বি, তেজগাঁও (আই/এ), ঢাকা-১২০৮
মোবাইল: +880 2-8878026, +880 1736 786915, +880 1300 126 624
ইমেইল: tbtbangla@gmail.com (online), ads@thebangladeshtoday.com (adv) newsbangla@thebangladeshtoday.com (Print)
বাংলাদেশ টুডে কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি ও বিষয়বস্তু অন্য কোথাও প্রকাশ করা বে-আইনী।
Copyright © 2025 The Bangladesh Today. All Rights Reserved.
Host by
linkedin facebook pinterest youtube rss twitter instagram facebook-blank rss-blank linkedin-blank pinterest youtube twitter instagram