

নিজস্ব প্রতিবেদক: জাতিসংঘ ঘোষিত টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (SDGs) ও বিশ্ব শান্তির প্রচারণায় অনুপ্রাণিত হয়ে বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো অনুষ্ঠিত হলো এসডিজি-ভিত্তিক দৌড় প্রতিযোগিতা ‘রান ফর পিস ২০২৫ (Run for Peace 2025)’।
স্কাউটস ফর এসডিজি ইনিশিয়েটিভের অধীনে তরুণদের পরিচালিত সামাজিক প্রকল্প ‘প্রজেক্ট হুইলস অব পিস’ এই দৌড়ের আয়োজন করে।
এই অনন্য ইভেন্টের লক্ষ্য ছিল মানুষকে স্বাস্থ্য, শান্তি ও পরিবেশ সচেতনতার একত্রিত বার্তা পৌঁছে দেওয়া। পুরো ইভেন্টটি টেকসই উন্নয়নের ধারণাকে কেন্দ্র করে পরিকল্পনা ও বাস্তবায়ন করা হয়।
দুই ধাপে দৌড়: ভার্চুয়াল ও লাইভ ইভেন্ট “রান ফর পিস ২০২৫” আয়োজন করা হয় দুই ধাপে— ভার্চুয়াল রান এবং লাইভ কমিউনিটি ফান রান আকারে।
২১ সেপ্টেম্বর, বিশ্ব শান্তি দিবস থেকে শুরু হয় ভার্চুয়াল দৌড়, যেখানে সারাদেশের ৩৮টি জেলা থেকে শতাধিক রানার অংশগ্রহণ করেন। অংশগ্রহণকারীরা নিজ নিজ জেলা বা এলাকায় দৌড়ে তাদের দূরত্ব লগ করেন এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে “#RunForPeace2025” হ্যাশট্যাগ ব্যবহার করে শান্তি ও টেকসই উন্নয়ন বার্তা প্রচার করেন।
এরপর ৩১ অক্টোবর ঢাকার উত্তরা সেন্টার থেকে অনুষ্ঠিত হয় লাইভ কমিউনিটি ফান রান। এতে প্রায় ৮০ জন রানার অংশ নেন, যারা বিভিন্ন বয়স, পেশা ও জেলার প্রতিনিধি হিসেবে যোগ দেন।
তাদের হাতে ছিল শান্তির প্রতীক সাদা পতাকা, টি-শার্টে লেখা ছিল “Peace for Planet, Peace for People।”
আয়োজকরা জানান, এ বছরের দৌড়ের মূল বার্তা ছিল— “দৌড় শুধু শরীরচর্চা নয়, এটি এক শান্তিপূর্ণ ও টেকসই ভবিষ্যতের পথে সম্মিলিত অগ্রযাত্রা।” ‘One Runner, One Tree’: পরিবেশ ও শান্তির প্রতীক ইভেন্টটির মূল থিম ছিল “One Runner, One Tree” — অর্থাৎ প্রতিটি রানারের নামে একটি করে গাছ লাগানো হবে এবং সেই গাছের ছয় মাসব্যাপী পরিচর্যার দায়িত্বও নেবে আয়োজক সংগঠন। আয়োজকদের বিশ্বাস, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে আজ পরিবেশ যে সংকটে পড়েছে, তার সমাধান শুধু সচেতনতায় নয়, বরং প্রতিটি মানুষের হাতে বাস্তব কর্মের মাধ্যমে সম্ভব।
তাই তারা প্রতীকীভাবে দৌড়ের সঙ্গে যুক্ত করেছেন বৃক্ষরোপণের মতো কার্যকর একটি পরিবেশবান্ধব উদ্যোগ। ওমর তামীম সাফি: সবচেয়ে তরুণ ইভেন্ট আয়োজক “Run for Peace 2025”-এর প্রধান উদ্যোক্তা ও প্রজেক্ট হুইলস অব পিসের প্রতিষ্ঠাতা ওমর তামীম সাফি, যিনি বর্তমানে বাংলাদেশের সবচেয়ে কম বয়সী রানিং ইভেন্ট আয়োজক।
মাত্র কয়েক বছরের মধ্যেই তিনি স্কাউটস ফর এসডিজি ও মেসেঞ্জার্স অব পিস প্রোগ্রামের মাধ্যমে অসংখ্য তরুণকে সামাজিক কাজে যুক্ত করেছেন।
ইভেন্ট শেষে তামীম বলেন, “পরিবেশ রক্ষা শুধু সরকারের দায়িত্ব নয়, আমাদের প্রত্যেকের দায়িত্ব। মানুষ, প্রকৃতি ও শিল্প প্রতিষ্ঠান— সবাইকে একসাথে কাজ করতে হবে। জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়তে পারলেই আসবে প্রকৃত শান্তি। পরিবেশের ভারসাম্য থাকলেই হবে টেকসই উন্নয়ন।” তরুণ এই আয়োজক আরও বলেন, “আমরা চাই, প্রতিটি তরুণ তার জীবনে অন্তত একবার এমন কোনো কাজে যুক্ত হোক যা পরিবেশ ও সমাজের জন্য ইতিবাচক প্রভাব ফেলে।” হুইলস অব পিসের ধারাবাহিক কাজ
প্রজেক্ট Wheels of Peace গত পাঁচ বছরে দেশের ছয়টি জেলায় কাজ করেছে জলবায়ু পরিবর্তন, পরিবেশ সংরক্ষণ, কিশোর-কিশোরীদের স্বাস্থ্য, মাসিক সচেতনতা এবং একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিকের ব্যবহার কমানোর মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে।
তারা স্কুল ও কলেজভিত্তিক ক্যাম্প, বৃক্ষরোপণ, পরিবেশবান্ধব উদ্যোগ, কমিউনিটি আলোচনা ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম পরিচালনা করেছে।
সংগঠনটি ‘Scouts for SDGs’ ও ‘Messengers of Peace’ কর্মসূচির আওতায় কাজ করে, যেখানে তরুণ ও স্কাউট সদস্যদের সক্রিয়ভাবে যুক্ত করা হয়।
দৌড়ের মাধ্যমে টেকসই ভবিষ্যতের বার্তা ইভেন্টের অংশগ্রহণকারীরা জানান, এই দৌড় কেবল একটি প্রতিযোগিতা নয়, বরং ছিল মানবতা, সুস্থতা, ও সচেতনতার একটি প্রতীকী যাত্রা। অনেক রানারই নিজ জেলা থেকে ভার্চুয়ালভাবে অংশগ্রহণ করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শান্তির বার্তা ছড়িয়ে দিয়েছেন। একজন অংশগ্রহণকারী বলেন, “এই ইভেন্টে দৌড়ানো মানে ছিল প্রকৃতির প্রতি ভালোবাসা প্রকাশ করা। আমি বিশ্বাস করি, ছোট উদ্যোগগুলোই একদিন বড় পরিবর্তন আনতে পারে।”
পরিবেশ ও শান্তির সমন্বয়ে অনন্য উদ্যোগ আয়োজকদের মতে, বাংলাদেশে এটি ছিল এসডিজি ও পিস-থিমভিত্তিক প্রথম দৌড় ইভেন্ট।
তারা আশা করছেন, ভবিষ্যতে এই আয়োজন আন্তর্জাতিক পর্যায়েও সম্প্রসারিত হবে এবং দেশের তরুণ প্রজন্ম পরিবেশ ও টেকসই উন্নয়নের প্রচারণায় আরও সক্রিয় ভূমিকা নেবে।

