ঢাকা
১লা নভেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
বিকাল ৩:২৩
logo
প্রকাশিত : নভেম্বর ১, ২০২৫

গণভোটে ঝুলে যেতে পারে জাতীয় নির্বাচন

আগে গণভোট হলে ফেব্রুয়ারিতে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঝুলে যাওয়ার আশঙ্কা দেখছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও নির্বাচন বিশেষজ্ঞরা। তাদের মতে, কোনো কারণে গণভোটে বিশৃঙ্খলা হলে সেই অজুহাতে ফেব্রুয়ারির নির্বাচন পেছানোর বড় ক্ষেত্র তৈরি করা হতে পারে। ভিন্ন ভিন্ন দাবিতে রাজনৈতিক দলগুলোর অনড় থাকায় গণভোট নিয়ে ভুল বোঝাবুঝিও হতে পারে। এতে ষড়যন্ত্রও যুক্ত হতে পারে। আর গণভোটের ফল বিপক্ষে গেলে পুরো সংস্কার কার্যক্রম বিফলে যাবে, যাতে পরিস্থিতি সংঘাতময় হয়ে উঠতে পারে। তাই গণভোট নিয়ে গোলমালের অবকাশ আছে।

এ ছাড়া গণভোটে ভোটার উপস্থিতি চ্যালেঞ্জিং হওয়ায় এ নিয়ে বিতর্ক তৈরি হতে পারে। আবার আগে গণভোট করতে হলে চলতি নভেম্বরে করতে হবে। অথচ এ সময়ে সুষ্ঠু গণভোট আয়োজনে মোটেও প্রস্তুত নয় নির্বাচন কমিশন (ইসি)। কারণ আগামী মাসেই জাতীয় নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা নিয়ে ব্যস্ত ইসি। ফলে বেশ কয়েকটি কারণেই আগে গণভোটের আয়োজন ফেব্রুয়ারির জাতীয় নির্বাচনকে সংশয়ে ফেলবে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও নির্বাচন বিশেষজ্ঞদের মতে, এত অল্প সময়ের ব্যবধানে জাতীয় পর্যায়ের দুটি নির্বাচন করার মতো সক্ষমতা ইসির নেই। সংসদ নির্বাচনের মতোই ভোটকেন্দ্র, ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা, ব্যালট পেপার, কালি, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ যাবতীয় আয়োজন গণভোটেও থাকবে। তাই জাতীয় সংসদ নির্বাচনে যে খরচ, তার কাছাকাছি খরচ গণভোটেও। আগামী ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে ২ হাজার ৮০০ কোটি টাকা। প্রয়োজনে এই অর্থ বাড়তে পারে। অর্থাৎ প্রায় ৩ হাজার কোটি খরচ হবে। দেশের বর্তমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে দুটো ভোটে ৬ হাজার কোটি টাকা খরচ করা রাষ্ট্রের জন্য বড় বোঝা মনে করেন তারা।

তা ছাড়া ‘হ্যাঁ-না’ ভোটে কোনো কারণে না ভোট বেশি পড়লে পুরো রাষ্ট্রসংস্কার বিঘ্নিত হওয়ার দিকে ধাবিত হতে পারে। তাতে দেশের মধ্যে রাজনৈতিক সংঘাত বাড়তে পারে। রাজনৈতিক সংঘাত থেকে গৃহযুদ্ধের দিকে রূপ নেওয়ার আশঙ্কার কথাও বলেছেন অনেকে। ভেস্তে যেতে পারে জুলাই সনদ।

অন্যদিকে রাজনৈতিক অঙ্গনে হঠাৎ গণভোট ইস্যু নিয়ে উত্তাপ ছড়ানোতে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের বিষয়টি ভোটার ও রাজনৈতিক কর্মীদর মাথা থেকে উধাও হয়ে যাচ্ছে। নির্বাচন কমিশনও তাদের যাবতীয় কাজ গুছিয়ে নেওয়ার পর সিদ্ধান্তহীন অবস্থায় রয়েছে।

দেশের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপট বিবেচনায় আলাদা দিনে গণভোট করার যুক্তি খুঁজে পান না রাষ্ট্রবিজ্ঞানী অধ্যাপক সাব্বির আহমেদ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের এই অধ্যাপক বলেন, আলাদা দিনে গণভোট করা ঠিক হবে না। সংসদ নির্বাচনের দিনই গণভোট হওয়া উচিত। গণভোট করতে হলে ভোটারদের কাছে গণভোটের বিষয়টি বোঝানো দরকার, সেই সময় এখন আর নেই। একই দিনে হলে রাজনৈতিক দলগুলো নিজেদের প্রার্থীদের বিজয়ী করার জন্য ভোটারদের কেন্দ্রে আনতে যতটা উৎসাহী হবেন, আলাদা দিনে সেই আগ্রহ নাও থাকতে পারে।

বিশ্লেষকদের মতে, জাতীয় নির্বাচনে যেভাবে উৎসবমুখর পরিবেশ থাকে আলাদা দিনে গণভোট হলে সেই আগ্রহ না-ও থাকতে পারে। এক মাসের মধ্যে রাজনৈতিক দলগুলো ভোটারদের কাছে গণভোটের বিষয়বস্তু তুলে ধরতে পারবে কিনা তা নিয়েও সংশয় রয়েছে। তাই সংসদ নির্বাচনের আগে গণভোট হলে ভোটার উপস্থিতি একটা বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াতে পারে। আর বড় রাজনৈতিক দল বিএনপি যেহেতু সংসদ নির্বাচনের আগে গণভোটের বিপক্ষে, তাই তাদের কর্মীরা আগ্রহ হারাবেন সেটা মোটামুটি স্পষ্ট।

এ অবস্থায় কোনো কারণে গণভোট বিতর্কিত হলে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে পারে। তখন তত্ত্বাবধায়ক বা ভিন্ন ফরম্যাটে নতুন সরকার গঠনের দাবি ওঠার সম্ভবনাও দেখছেন বিশ্লেষকরা। তেমন পরিস্থিতি দেখা দিলে ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় সংসদ নির্বাচন করার পরিবেশ বিঘ্নিত হবে। যার ফলে পিছিয়ে যেতে পারে ফেব্রুয়ারির সংসদ নির্বাচন। যদিও সরকারের পক্ষ থেকে ফেব্রুয়ারির নির্বাচন করার ব্যাপারে দৃড় অবস্থান ব্যক্ত করা হয়েছে।

তবে গণভোট যখনই হোক চ্যালেঞ্জিং মনে করেন নির্বাচন বিশ্লেষক ড. আব্দুল আলীম। তিনি বলেন, গণভোট যখনই হোক চ্যালেঞ্জিং ব্যাপার হবে। আলাদা দিনে গণভোট করলে বিরাট অংকের অর্থ দরকার হবে। তা ছাড়া জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে গণভোট করলে ইসির সব ফোকাস গণভোটের দিকে চলে যাবে, তাতে জাতীয় সংসদ নির্বাচন ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। তিনি বলেন, আমাদের সাধারণ ভোটাররা গণভোটের ধারণা প্রায় ভুলে গেছে। কাজেই গণভোটের বিষয়বস্তু সম্পর্কে ভোটারদের ব্যাপক ক্যাম্পেইন দরকার। আছে মাত্র এক মাস। এই সময়ের মধ্যে ভোটারদের মাঝে গণভোটের বিষয় জাগ্রত করা বেশ দুরূহ ব্যাপার।

এত অল্প সময়ে দুটি জাতীয় নির্বাচন করা রাষ্ট্রের জন্য বিরাট বোঝা হয়ে দেখা দিতে পারে বলেও মনে করেন বিশ্লেষকরা। তাদের মতে, বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশে শুধু ভোটের পেছনে ৬ হাজার কোটি টাকা খরচ করা বাড়াবাড়ি ব্যাপারও বটে। যার প্রভাব পরবর্তী সরকারের ওপর বর্তাবে। দেশের অর্থনীতিতে বিরাট ধাক্কা আসতে পারে বলেও মনে করেন অনেকে।

এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) সাবেক অতিরিক্ত সচিব জেসমিন টুলী বলেন, পরপর দুটো জাতীয় নির্বাচন করলে সংসদ নির্বাচনের যে বাজেট তার দ্বিগুণ করতে হবে ‘নির্বাচনী বাজেট’। একই দিনে করলে জাতীয় নির্বাচনের জন্য যে বাজেট তার থেকে ১০-২০ শতাংশ বাড়ালেই গণভোট করা সম্ভব। আমাদের দেশের মতো রাষ্ট্রে শুধু নির্বাচনের পেছনে এত বড় খরচ মেটানো সম্ভব?

জেসমিন টুলী বলেন, জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মতোই গণভোটেও সব কেন্দ্র থাকবে, সব পোলিং কর্মকর্তাকে রাখতে হবে, ব্যালট প্রিন্ট করতে হবে, মানে নির্বাচনী সব সরাঞ্জম লাগবে। জাতীয় পর্যায়ের নির্বাচনে যেমন খরচ, গণভোটেও তাই লাগবে। নভেম্বরে গণভোট করতে হলে নির্বাচনী সামগ্রীগুলো তো কেনাকাটা করতে হতো। এখন কী ইসির হাতে সেই সময় আছে, প্রশ্ন রাখেন তিনি।

বিশেষজ্ঞদের মতে, কোনো কারণে নভেম্বরে গণভোটের ঘোষণা হলে দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি সংঘাতময় হয়ে উঠতে পারে, যা দেশকে চরম অস্থিতিশীলতার দিতে নিয়ে যাবে। এমনিতেই দেশে অর্থনীতিতে স্থবিরতা চলছে। এমন অবস্থায় নতুন করে অস্থিতিশীলতা তৈরি হলে দেশের একেবারে অর্থনীতি ভেঙে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। এর প্রভাব পড়বে প্রতিটি নাগরিকের জীবনে। ভেঙে পড়তে পারে দেশের সার্বিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিও।

সর্বশেষ
logo
প্রকাশকঃ অধ্যাপক ড. জোবায়ের আলম
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদকঃ এডভোকেট মো: গোলাম সরোয়ার
কার্যালয় : বিটিটিসি বিল্ডিং (লেভেল:০৩), ২৭০/বি, তেজগাঁও (আই/এ), ঢাকা-১২০৮
মোবাইল: +880 2-8878026, +880 1736 786915, +880 1300 126 624
ইমেইল: tbtbangla@gmail.com (online), ads@thebangladeshtoday.com (adv) newsbangla@thebangladeshtoday.com (Print)
বাংলাদেশ টুডে কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি ও বিষয়বস্তু অন্য কোথাও প্রকাশ করা বে-আইনী।
Copyright © 2025 The Bangladesh Today. All Rights Reserved.
Host by
linkedin facebook pinterest youtube rss twitter instagram facebook-blank rss-blank linkedin-blank pinterest youtube twitter instagram