

জসিম সিদ্দিকী, কক্সবাজার: নভেম্বরের প্রথম দিন থেকেই খুলে দেওয়া হয়েছে দেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিন। সরকারি বিধিনিষেধে নয় মাস বন্ধ থাকার পর আবারও পর্যটকদের জন্য উন্মুক্ত হয়েছে দ্বীপটি। তবে নির্ধারিত সময়সূচি অনুযায়ী ১ নভেম্বর থেকেই পর্যটকবাহী জাহাজ চলাচল শুরু হওয়ার কথা থাকলেও এখনই সমুদ্রযাত্রা শুরু হচ্ছে না। জাহাজ মালিকরা জানিয়েছেন, ডিসেম্বর ও জানুয়ারি মাসে চলাচলের প্রস্তুতি নিচ্ছেন তারা। কিন্তু কেন নভেম্বরে জাহাজ চলছে না—এ প্রশ্নের জবাব মিলেছে ‘সি ক্রুজ অপারেটর ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ’-এর নেতাদের কাছ থেকে।
সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক হোসাইন ইসলাম বাহাদুর বলেন, সরকারি শর্তই মূল বাধা। নভেম্বরে পর্যটকেরা দিনে গিয়ে দিনে ফিরতে পারবেন, কিন্তু রাত যাপনের অনুমতি নেই। কক্সবাজার শহরের নুনিয়ারছড়াস্থ বাঁকখালী নদীর ঘাট থেকে সেন্টমার্টিন পৌঁছতে সময় লাগে প্রায় সাড়ে সাত ঘণ্টা। ফলে দিনে গিয়ে দিনে ফিরে আসা মানে কমপক্ষে ১৪ থেকে ১৫ ঘণ্টার সমুদ্রযাত্রা—যা বেশির ভাগ পর্যটকের জন্য অস্বস্তিকর।
তিনি জানান, “দিনে গিয়ে দিনে ফিরতে আগ্রহী পর্যটক আছেন বটে, তবে সংখ্যায় খুবই কম—গড়ে শতাধিক। অথচ একটি জাহাজ চালাতে অন্তত সাড়ে তিন শত যাত্রী প্রয়োজন হয়। একবার যাওয়া-আসার খরচ পড়ে প্রায় ১০ লাখ টাকা, তাই সীমিত যাত্রীর জন্য তা সম্ভব নয়।”
অন্যদিকে উখিয়ার ইনানী জেটি দিয়ে যাত্রা করলে সময় বাঁচানো সম্ভব হলেও পরিবেশগত কারণে ওই পথে জাহাজ চলাচলের অনুমতি নেই। টেকনাফের দমদমিয়া ঘাট থেকেও যাওয়া সম্ভব হতো কম সময়ে, কিন্তু সীমান্তের নিরাপত্তা পরিস্থিতি অনিশ্চিত হওয়ায় সেটিও ঝুঁকিপূর্ণ। মিয়ানমারের আরাকান আর্মি ও জান্তা বাহিনীর সংঘাতের প্রভাব নাফ নদী পর্যন্ত পৌঁছেছে, যা ঝুঁকি বাড়িয়েছে বলে জানান তিনি। আমরা ডিসেম্বর ও জানুয়ারি—এই দুই মাসে জাহাজ চলাচলের জন্য প্রস্তুত আছি বলেন হোসাইন বাহাদুর।
সরকারি সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, ১ ফেব্রুয়ারি থেকে পর্যটকদের প্রবেশ বন্ধের পর দীর্ঘ নয় মাস পর আবার নভেম্বর থেকে জানুয়ারি পর্যন্ত তিন মাস দ্বীপে ভ্রমণের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। প্রতিদিন সর্বোচ্চ দুই হাজার পর্যটক সেন্টমার্টিনে যেতে পারবেন। তবে মেনে চলতে হবে সরকারের ১২টি নির্দেশনা।
নির্দেশনা অনুযায়ী, নভেম্বরে কেবল দিনের বেলায় ভ্রমণ করা যাবে, রাত যাপন নিষিদ্ধ। ডিসেম্বর ও জানুয়ারিতে নির্দিষ্ট শর্তে রাত কাটানোর অনুমতি থাকবে। এছাড়া বিআইডব্লিউটিএ ও পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের অনুমতি ছাড়া কোনো নৌযান দ্বীপে চলাচল করতে পারবে না।
পর্যটকদের টিকিট কিনতে হবে বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ডের অনুমোদিত ওয়েবসাইট থেকে, যেখানে প্রতিটি টিকিটে ট্রাভেল পাস ও কিউআর কোড সংযুক্ত থাকবে। কিউআর কোডবিহীন টিকিট নকল হিসেবে গণ্য হবে।
নতুন বিধিনিষেধ অনুযায়ী, দ্বীপে পলিথিন ও একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক সামগ্রী বহন নিষিদ্ধ। সৈকতে আলো জ্বালানো, উচ্চ শব্দ সৃষ্টি, বারবিকিউ পার্টি, কিংবা প্রবাল, কাছিম ও অন্যান্য জীববৈচিত্র্য ক্ষতির কাজ কঠোরভাবে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। মোটরসাইকেল বা অন্য মোটরচালিত যানবাহনের চলাচলও সম্পূর্ণভাবে বন্ধ থাকবে। জানুয়ারি মাস পর্যন্ত পর্যটক যাতায়াতের সুযোগ থাকবে। এরপর ১ ফেব্রুয়ারি থেকে পুনরায় নয় মাসের জন্য সেন্টমার্টিনে পর্যটক যাওয়া নিষিদ্ধ থাকবে।

