ঢাকা
২রা নভেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
রাত ১:৪৭
logo
প্রকাশিত : নভেম্বর ১, ২০২৫

অনুদানের ‘অবৈধ’ ৮ মেশিন এখন ‘গলার কাঁটা’

নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে অননুমোদিত মেশিন গ্রহণ, ব্যবহারবিহীন অবস্থায় অত্যাধুনিক যন্ত্র বাক্সবন্দি রাখা এবং স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্দেশনা অমান্যের অভিযোগে আগেই আলোচনায় এসেছিল জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল। এবার সেই অনিয়মের তালিকায় যুক্ত হলো নতুন অধ্যায় ‘অনুদানের আট মেশিন’, যা এখন হাসপাতালটির গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে।

চলতি বছরের আগস্টে নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করেই আটটি মেশিন গ্রহণ করেন জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের তৎকালীন প্যাথলজি বিভাগের প্রধান (ভারপ্রাপ্ত) মেডিকেল অফিসার ডা. আব্দুল্লাহ আল মুয়ীদ খান। এ নিয়ে হৃদরোগ হাসপাতালে দানের মেশিনে ‘মধু’ শিরোনামে সংবাদ প্রকাশিত হয় । পরে ডা. মুয়ীদ খানকে তার পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়। তবে রয়ে যায় মেশিনগুলো।

অনিয়ম করে নেওয়া ওই মেশিন নিয়ে বেশ বেকায়দায় হাসপাতাল প্রশাসন। মেশিন গ্রহণে চিকিৎসকদের একটি পক্ষের চাপ আছে। কিন্তু সংশ্লিষ্ট কমিটি ও বিভাগীয় প্রধানরা এর চরম বিরোধিতা করছেন। অনুদান নিতে অস্বীকৃতি জানালে সংশ্লিষ্ট মহল অসন্তুষ্ট হবে, আবার নিলে নতুন অনিয়মের অভিযোগে পড়বে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

এবিসি করপোরেশনের দেওয়া ওই মেশিন গ্রহণে আব্দুল্লাহ আল মুয়ীদ খানের পাশাপাশি আবাসিক চিকিৎসক (আরপি) ডা. একরামুল রেজার (টিপু) সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেছে। এবিসি করপোরেশনের বিপণন কর্মকর্তা আহসানুল রেজা আরপি একরামুল রেজার ভাই। সেই সম্পর্কের সুবাদে তারা হাসপাতালে অবৈধ প্রক্রিয়ায় মেশিন সরবরাহ ও রিঅ্যাজেন্ট বিক্রি করে ব্যবসার পথ প্রসারে জোর চেষ্টা চালাচ্ছেন। সে কারণে ডা. মুয়ীদ, ডা. একরামুল রেজাসহ বেশ কয়েকজন চিকিৎসক অবৈধ প্রক্রিয়ায় নেওয়া এই মেশিন গ্রহণে হাসপাতালকে চাপ দিচ্ছেন।

বিষয়টি সমাধানে গত ১৭ সেপ্টেম্বর হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক ডা. আব্দুল ওয়াদুদ চৌধুরী চার বিভাগের প্রধানকে একটি চিঠি দেন। এতে তিনি লেখেন, ‘বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে অনুদানের জন্য নিম্নোক্ত মেশিনসমূহের প্রস্তাবনা রয়েছে— সিসম্যাক্স- এক্সএন-১০০০ (সেল সেন্টার), মাইন্ডরে-বিসি-৭৬০ (সেল কাউন্টার), মাইন্ডরে সি১-২৬০০আই (অটোইমিউনোকেমিস্ট্রি অ্যান্ড বায়েকেমিস্ট্রি অ্যানালাইজার), কোয়াট্রন এক্স (পিটি-আইএনআর/এপিটিটি অ্যানালাইজার), ওয়ানডফো-ফাইন কেয়ার থ্রি প্লাস -মডেল এসিসিআরই ৮ (এইচবিএ১সি+ডি-ডাইমার অ্যানালাইজার/সিএলআই অ্যানালাইজার), এসটি-১০০ (ইলেক্ট্রোলাইট অ্যানালাইজার), ম্যাগলুমি-স্নাইব ৮০০ (ফুলি অটোমেটেড কেমিলুমিনেসেন্স ইমিউনোঅ্যাসে অ্যানালাইজার) এবং মাইন্ডরে (ইউরিন আর/এম/ই অ্যানালাইজার)। আপনার বিভাগে উল্লেখিত মেশিনসমূহের প্রয়োজনীয়তা আছে কি না আগামী পাঁচ কর্মদিবসের মধ্যে অবহিত করার জন্য অনুরোধ করা হলো।’

‘প্রয়োজন নেই’ জানিয়েছে সব বিভাগ
পরিচালকের এই চিঠির জবাবে চার বিভাগের প্রধানই লিখিতভাবে জানিয়েছেন এসব মেশিন তাদের প্রয়োজন নেই। গত ২২ সেপ্টেম্বর দেওয়া জবাবে মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের প্রধান সহযোগী অধ্যাপক ডা. ইশরাত শারমিন লিখেছেন, ‘অনুদানের জন্য প্রস্তাবিত মেশিনসমূহ আমাদের মাইক্রোবায়োলজি ল্যাবে বর্তমানে প্রয়োজন নেই।’

একই দিনে দেওয়া জবাবে প্যাথলজি বিভাগের ভারপ্রাপ্ত প্রধান সহযোগী অধ্যাপক ডা. দিলশাদ পারভীন লিখেছেন, ‘অত্র বিভাগে বর্তমানে সিবিসি টেস্ট পরিচালনার জন্য ওএমসি’র দুটি মেশিন— বেকম্যান কোলটার ডিএক্সএইচ ৫৬০ ও ডিএক্সএইচ ৫২০ সচল রয়েছে। অনুদানে সরবরাহকৃত তিনটি মেশিন (হেমাটোলজি অ্যানালাইজার, মালটি চ্যানেল কোঅ্যাগুলেশন অ্যানালাইজার, মাইক্রোসকোপ) চালুর প্রক্রিয়ায় আছে। এসব চালু হলে সিবিসি ও পিটি/আইএনআর টেস্ট শুরু করা যাবে। বর্তমান পরিস্থিতিতে নতুন কোনো মেশিনের প্রয়োজন নেই।’

বায়োকেমিস্ট্রি বিভাগের ভারপ্রাপ্ত প্রধানও লিখিতভাবে জানান, প্রস্তাবিত আটটি মেশিনের কোনোটিই বায়োকেমিস্ট্রি বিভাগের প্রয়োজন নেই। বর্তমানে বিভাগে চারটি অটোইমিউনো অ্যানালাইজার, চারটি অটোমেটেড বায়োকেমিস্ট্রি অ্যানালাইজার এবং তিনটি এবিজি অ্যানালাইজার সচল রয়েছে। ফলে নতুন কোনো যন্ত্রপাতির প্রয়োজন দেখা যায়নি।’

রক্ত পরিসঞ্চালন বিভাগের প্রধান সহকারী অধ্যাপক ডা. মো. ওয়াসীমও বলেন, ‘চলমান কার্যপরিধি বিবেচনায় উপরোক্ত যন্ত্রপাতি প্রয়োজন নেই।’

সংশ্লিষ্টদের জবাব
এ বিষয়ে প্যাথলজির প্রাক্তন বিভাগীয় প্রধান (ভারপ্রাপ্ত) ডা. আব্দুল্লাহ আল মুয়ীদ খান বলেন, ‘হাসপাতালের স্বার্থেই এই মেশিনগুলো নিয়েছি। তবে এটা ঠিক যে, প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হয়নি। তবে, আমার ইনটেনশন খারাপ ছিল না।’

আবাসিক চিকিৎসক (আরপি) ডা. একরামুল রেজা (টিপু) বলেন, ‘মেশিনগুলোর সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান এবিসি করপোরেশনে আমার ভাই আহসানুল রেজা চাকরি করেন ঠিক। তারা আমার কাছে এসেছিল। আমি বলেছি, সংশ্লিষ্ট বিভাগে যোগাযোগ করতে। আমি তাদের জন্য কোনো তদবির করিনি।’

এ বিষয়ে জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের পরিচালকের বক্তব্য জানতে তার অফিসে গিয়েও তাকে পাওয়া যায়নি। মুঠোফোনে চেষ্টা করলে খুদে বার্তা দিতে বলেন। তবে বিষয়টি উল্লেখ করে খুদে বার্তা পাঠালেও জবাব দেননি তিনি।

হাসপাতালটির সহকারী পরিচালক ডা. মেজবাহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘এ নিয়ে এখনো সুনির্দিষ্ট সিদ্ধান্ত হয়নি। তবে সংশ্লিষ্ট কমিটি হয়তো মেশিনগুলো নিয়ে যাওয়ার জন্য তাদের (এবিসি করপোরেশন) চিঠি দেবে।’

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (হাসপাতাল) ডা. এ এইচ এম মইনুল আহসান বলেন, ‘হৃদরোগ ইনস্টিটিউটের মেশিন সংক্রান্ত অনিয়মের বিষয়টি আমরা আগে থেকেই পর্যবেক্ষণ করছি। তদন্ত প্রতিবেদন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। নতুন প্রস্তাবিত মেশিনগুলো নিয়েও মন্ত্রণালয় অবহিত আছে।’

এ বিষয়ে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ উপদেষ্টা নূরজাহান বেগম বলেন, ‘অনুদানের নামে যদি কেউ অনিয়ম বা স্বার্থসিদ্ধি করে, তাকে ছাড় দেওয়া হবে না। বিষয়টি আমরা নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছি।’

সর্বশেষ
logo
প্রকাশকঃ অধ্যাপক ড. জোবায়ের আলম
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদকঃ এডভোকেট মো: গোলাম সরোয়ার
কার্যালয় : বিটিটিসি বিল্ডিং (লেভেল:০৩), ২৭০/বি, তেজগাঁও (আই/এ), ঢাকা-১২০৮
মোবাইল: +880 2-8878026, +880 1736 786915, +880 1300 126 624
ইমেইল: tbtbangla@gmail.com (online), ads@thebangladeshtoday.com (adv) newsbangla@thebangladeshtoday.com (Print)
বাংলাদেশ টুডে কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি ও বিষয়বস্তু অন্য কোথাও প্রকাশ করা বে-আইনী।
Copyright © 2025 The Bangladesh Today. All Rights Reserved.
Host by
linkedin facebook pinterest youtube rss twitter instagram facebook-blank rss-blank linkedin-blank pinterest youtube twitter instagram