ঢাকা
৯ই মে, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
রাত ৮:২৪
logo
প্রকাশিত : মার্চ ১৭, ২০২৫

চালে অস্বস্তি, অন্য পণ্যে স্বস্তি

উচ্চ মূল্যস্ফীতিতে কিছুটা লাগাম টানা গেছে গত মাসে। শাক-সবজিজাতীয় পণ্যের দাম কিছুটা সহনীয়। তবে এই আত্মতৃপ্তির মধ্যেই নীরবে উত্তাপ ছড়াচ্ছে চালের দাম। বিশেষ করে মিনিকেট হিসেবে পরিচিত চালের দাম এক লাফে কেজিতে ৫ থেকে ১০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে।

ফলে অত্যাবশ্যক এই নিত্যপণ্যের দামের এ নৈরাজ্য নতুন করে মূল্যস্ফীতি উসকে দেওয়ার ঝুঁকি তৈরি করছে। মিনিকেটের পাশাপাশি মোটা চালের দামও কেজিতে নতুন করে এক-দুই টাকা পর্যন্ত বাড়িয়ে দিয়েছেন বিক্রেতারা। এতে ভোক্তাদের মধ্যে অস্বস্তি তৈরি হচ্ছে। বিক্রেতারা বলছেন, গত দুই সপ্তাহেই মিল পর্যায়ে মিনিকেট চালের দাম অস্বাভাবিক হারে বেড়েছে।

এর প্রভাবে খুচরা ও পাইকারিতে দাম বেড়েছে। চালকল মালিকদের দাবি, বাজারে মিনিকেট চালের ধানের সংকটের কারণে বাড়তি দাম দিয়ে কিনতে হচ্ছে। উৎপাদন খরচ বেড়ে যাওয়ার কারণে চালের দাম বেড়েছে। এদিকে রোজা শুরুর আগে থেকেই টমেটো, আলু, পেঁয়াজসহ শাক-সবজির দাম নাগালের মধ্যে।

চালে অস্বস্তি, অন্য পণ্যে স্বস্তিগতকাল রবিবার রাজধানীর কারওয়ান বাজার, বাবুবাজার, বাড্ডা বাজার ও জোয়ারসাহারা বাজার এবং দুই জেলা নওগাঁ ও কুষ্টিয়ার বড় পাইকারি মোকামে খোঁজ নিয়ে ও বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে। বাজার ঘুরে দেখা গেছে, রাজধানীর খুচরা বাজারে দুই সপ্তাহ আগেও ভালো মানের মিনিকেট চাল খুচরায় প্রতি কেজি ৮৫ টাকায় বিক্রি হলেও এখন বিক্রি হচ্ছে ৯২ থেকে ৯৫ টাকায়। তবে মানভেদে কিছু মিনিকেট চাল ৮৫ থেকে ৯০ টাকায়ও বিক্রি হচ্ছে। নাজিরশাইল মানভেদে ৮৫ থেকে ৯৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তবে মোটা চাল ব্রি-২৮ ও পাইজাম কেজি ৬২ থেকে ৬৪ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

রাজধানী ঢাকার বাড্ডার পিরোজপুর রাইস এজেন্সির ম্যানেজার শাহ আলম গতকাল বলেন, ‘মিল পর্যায়ে মিনিকেট চালের দাম মাত্রাতিরিক্ত বেড়ে গেছে। রোজার শুরুতে মোজাম্মেল মিনিকেট চালের বস্তার (৫০ কেজি) দাম ছিল চার হাজার ১২০ থেকে চার হাজার ১৩০ টাকা। সেই চালের দাম বেড়ে হয়েছে চার হাজার ৬৪০ টাকা।

মাত্র দুই সপ্তাহের ব্যবধানে বস্তায় বেড়েছে ৫১০ থেকে ৫২০ টাকা, অর্থাত্ কেজিপ্রতি দাম বেড়েছে ১০ টাকার মতো। অবিশ্বাস্য হারে দাম বাড়ার কারণে মিনিকেট চালের বিক্রি কমে গেছে। মোটা চালের মধ্যে ব্রি-২৮ বস্তাপ্রতি ৫০ টাকা পর্যন্ত বেড়ে দুই হাজার ৮২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।’

রাজধানীর জোয়ারসাহারা বাজারের মেসার্স ভাই ভাই স্টোরের বিক্রেতা মো. নজরুল ইসলাম গতকাল বলেন, ‘এক সপ্তাহ আগেও ভালো মানের মোজাম্মেল মিনিকেট চাল প্রতি কেজি ৮৫ টাকায় বিক্রি করেছি। এখন আমাদেরই কিনতে হচ্ছে ৯২ টাকা কেজি দরে। হঠাত্ পাইকারিতে ৫০ কেজির বস্তাপ্রতি সাত টাকা পর্যন্ত বেড়ে গেছে। এখন পরিবহন খরচ ও দোকান খরচ মিলিয়ে প্রতি কেজি ভালো মানের মিনিকেট চাল ৯৫ টাকার নিচে বিক্রি করা যাচ্ছে না।’ তিনি বলেন, রমজান মাসে শুধু চাল ছাড়া অন্য কোনো পণ্যের দাম বাড়েনি। বরং কিছু পণ্যের দাম আগের তুলনায় কমেছে। দীর্ঘদিন ধরে চলা ভোজ্যতেলের সংকটও এখন অনেকটাই কেটে গেছে বলেও তিনি জানান।

কারওয়ান বাজারের মেসার্স ঢাকা রাইস এজেন্সির ব্যবসায়ী মো. সায়েম হোসেন গতকাল বলেন, ‘নতুন করে শুধু মিনিকেট চালের দাম বেড়েছে, পাইকারিতে অন্যান্য চালের দাম তেমন বাড়েনি। মূলত মিনিকেট চালের ধানের সংকটের কারণে এখন এই চালের দাম বেড়েছে। মিনিকেট চালের ধান প্রতিবছর বৈশাখ মাসে উৎপাদন হয়, এখন শেষ পর্যায়ে হওয়ায় বাজারে ধানের সংকট দেখা দিয়েছে, যার ফলে মিলাররা তাঁদের চাহিদামতো ধান পাচ্ছেন না। যেসব ধান কিনছেন সেগুলোও বাড়তি দরে কিনছেন। মূলত এসব কারণে মিল পর্যায়ে নতুন করে মিনিকেট চালের দাম বেড়েছে। তবে এক মাস পর নতুন মিনিকেট চালের ধান উৎপাদন শুরু হবে, তখন আবার দাম কমে আসবে।’

এ বিষয়ে রাজধানীর বাবুবাজার পাইকারি চাল ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক নিজাম উদ্দিন গতকাল বলেন, ‘দেশের বাজারে মিনিকেট চালের ধান শর্ট, যার কারণে এই চালের দাম বাড়তি। এবার চালের দাম বাড়ার আর অন্য কোনো কারণ নেই। পাইকারি পর্যায়েই গত এক মাসে কেজিতে পাঁচ টাকা বেড়েছে।’ তিনি বলেন, ‘ভারত থেকে মোটা চাল ও নাজির চাল আমদানি হওয়ার কারণে বাজারে অন্যান্য চালের কোনো সংকট নেই। তাই শুধু মিনিকেট চালের দাম বাড়লেও অন্যান্য চালের দাম স্বাভাবিক রয়েছে। বৈশাখ মাসে মিনিকেট চালের ধানের উৎপাদন শুরু হবে, তখন আবার চালের দাম নেমে যাবে।’

কুষ্টিয়ার প্রগতি রাইস মিলের মালিক হযরত আলী বলেন, ‘চালের দাম বাড়লেই আপনারা মিল মালিকদের দোষারোপ করেন। বাজারে যে ধান পাওয়া যাচ্ছে না বা বেশি দামে ধান কিনতে হচ্ছে সেটা তো আপনারা দেখেন না। গত ১৫ দিনে সব ধরনের ধানের দাম প্রতি মণে ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকা বেড়েছে। তা-ও পাওয়া যাচ্ছে না।’ বর্তমানে তাঁর মিলসহ কুষ্টিয়ার খাজানগরের কোনো মিলেই কোনো চিকন ধান বা চাল নেই বলেও তিনি জানান।

এদিকে চালের দাম সহনীয় পর্যায়ে রাখতে গত বছরের নভেম্বর মাসে আমদানির ওপর ২ শতাংশ অগ্রিম আয়কর রেখে বাকি আমদানি শুল্ক ও নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক প্রত্যাহার করে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। আশানুরূপ আমদানি না হওয়ায় চালের দামে এর কোনো প্রভাব পড়েনি।

নওগাঁ : ধানসমৃদ্ধ এলাকা নওগাঁয়ও মাত্র দুই দিনের ব্যবধানে চিকন (মিনিকেট) চালের দাম কেজিতে চার টাকা বেড়েছে। প্রতি ৫০ কেজির বস্তায় প্রায় ২০০ টাকা দাম বেড়েছে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, শুধু দেশে উৎপাদিত চিকন চালের দামই বেড়েছে। আমদানীকৃত চালের দাম আগের অবস্থাতেই আছে। নওগাঁ পাইকারি বাজারে দেশি কাটারি (নাজির) দুই দিন আগে ৫০ কেজির প্রতি বস্তা বিক্রি হয়েছে প্রকারভেদে তিন হাজার ৬০০ থেকে তিন হাজার ৭০০ টাকা দরে। গতকাল নওগাঁ বাজারে ৫০ কেজির প্রতি বস্তা প্রকারভেদে দাম বেড়ে বিক্রি হয়েছে তিন হাজার ৭০০ থেকে তিন হাজার ৯০০ টাকা দরে। এদিকে আমদানীকৃত চিকন কাটারি চাল ২৫ কেজির বস্তা বিক্রি হচ্ছে প্রকারভেদে এক হাজার ৬৫০ থেকে এক হাজার ৭০০ টাকা দরে।

নওগাঁ পৌর বাজারের চাল ব্যবসায়ী উত্তম কুমার সরকার বলেন, স্থানীয়ভাবে বা দেশে উৎপাদিত চালের দামই শুধু বেড়েছে। কারণ হিসেবে তিনি বলেন, বাজারে স্থানীয় চিকন জাতের চালের সরবরাহ চাহিদার তুলনায় অনেক কম হওয়ায় মূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে।

নওগাঁর একাধিক চাল ব্যবসায়ী জানান, এবার সময়মতো বিদেশ থেকে চাল আমদানি না হলে স্থানীয় জাতের চিকন চালের পাশাপাশি মোটা চালে মূল্য আরো বৃদ্ধি পাওয়ার সম্ভাবনা ছিল।

কুষ্টিয়া : গত পনেরো দিনের ব্যবধানে দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম চালের মোকাম কুষ্টিয়ার খাজানগরে সব ধরনের চালের দাম কেজিতে দুই-তিন টাকা বেড়েছে। আর খুচরা বাজারে মিনিকেট নামধারী চালসহ সব ধরনের চিকন চালের দামও কেজিপ্রতি বেড়েছে চার-পাঁচ টাকা। এতে করে ১ মার্চ কুষ্টিয়ার খুচরা বাজারে মিনিকেট নামধারী যে চালের দাম ছিল ৭৮ থেকে ৭৯ টাকা কেজি, গতকাল তা বিক্রি হয়েছে ৮৪ থেকে ৮৬ টাকা কেজি। ৯৫ টাকার বাসমতী গতকাল বিক্রি হয়েছে ৮৯ থেকে ১০০ টাকা কেজি। ৫৪ টাকার ২৮ চালসহ সব ধরনের মোটা চাল গতকাল বিক্রি হয়েছে ৫৫ থেকে ৬০ টাকার মধ্যে। মিল মালিকরা বলছেন, গত ১৫ দিনে পাঁচবার ধানের দাম বাড়ছে। আমাদের কী করার আছে।

শহরের পৌর বাজারের খুচরা চাল বিক্রেতা মনজুরুল ইসলাম বলেন, ‘মিল গেট থেকে আমরা যে দামে কিনে আনছি তা থেকে দুই টাকা বেশি দামে বিক্রি করছি। গতকাল আমরা মিনিকেট ৮৪ থেকে ৮৬ এবং বাসমতী ৯৮ থেকে ১০০ টাকায় বিক্রি করেছি।’

জেলা খাদ্য কর্মকর্তা ওয়াজিউর রহমান বলেন, ১ মার্চ থেকে শুধু চিকন চালের দাম বাড়া শুরু হয়েছে। আবার বাজারে ধানের সংকটও রয়েছে। তবে অযৌক্তিকভাবে চালের দাম বাড়ানো হলে দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সেই সঙ্গে চালকল মালিকদের ধান ও চালের মজুদের বিষয়ে কোনো গরমিল পাওয়া গেলে তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এদিকে রোজা ঘিরে বাজার আরো অস্থির হবে বলে আশঙ্কা করা হলেও শেষ পর্যন্ত বাজার বেশ স্বস্তিরই ছিল। টমেটো, আলুর দর নেমে এসেছে হাতের নাগালে। পেঁয়াজের দামেও ছিল স্বস্তি। এ ছাড়া সব ধরনের সবজির দামও বেশ কমে আসে। এ ধারা এখনো বজায় রয়েছে। রোজার পণ্যের দরও তেমন বাড়েনি। বরং এখনো স্থিতিশীল রয়েছে। বাজার ঘুরে দেখা যায়, দেশি পেঁয়াজ কেজি মানভেদে ৩৫ থেকে ৫০ টাকা, ছোলা মানভেদে কেজি ১০০ থেকে ১১০ টাকা, চিনি কেজি ১২০ টাকা, আলু কেজি ২০ টাকা, দেশি আদা কেজি ১২০ থেকে ১৩০ টাকা, দেশি নতুন রসুন ১২০ থেকে ১৫০ টাকা এবং আমদানীকৃত রসুন কেজি ২৩০ থেকে ২৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

রোজার শুরুতে মুরগি কিছুটা চড়া দামে বিক্রি হলেও এখন অনেকটাই কমে বিক্রি হচ্ছে। সোনালি মুরগি কেজি মানভেদে ২৬০ থেকে ২৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, যা রোজার শুরুতে বিক্রি হয় ৩০০ থেকে ৩৪০ টাকায়। তবে সোনালি মুরগির দাম যে হারে কমেছে ব্রয়লার মুরগির দাম সেই হারে কমেনি। কেজিতে ২০ টাকা পর্যন্ত কমে ব্রয়লার মুরগি কেজি ১৯০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

logo
প্রকাশকঃ অধ্যাপক ড. জোবায়ের আলম
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদকঃ তাপস রায় সরকার
মোবাইল: +৮৮০ ১৭৩৬ ৭৮৬৯১৫
কার্যালয় : বিটিটিসি বিল্ডিং (লেভেল:০৩), ২৭০/বি, তেজগাঁও (আই/এ), ঢাকা-১২০৮
মোবাইল: +880 2-8878026, +880 1736 786915, +880 1300 126 624
ইমেইল: tbtbangla@gmail.com (online), ads@thebangladeshtoday.com (adv) newsbangla@thebangladeshtoday.com (Print)
বাংলাদেশ টুডে কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি ও বিষয়বস্তু অন্য কোথাও প্রকাশ করা বে-আইনী।
Copyright © 2025 The Bangladesh Today. All Rights Reserved.
Host by
linkedin facebook pinterest youtube rss twitter instagram facebook-blank rss-blank linkedin-blank pinterest youtube twitter instagram