

সাইফুল ইসলাম, বাবুগঞ্জ (বরিশাল) প্রতিনিধি: বরিশাল-৩ (বাবুগঞ্জ-মুলাদী) আসনে বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী, দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক প্রতিমন্ত্রী বেগম সেলিমা রহমানকে এমপি প্রার্থী হিসেবে দেখতে চেয়ে মানববন্ধন, বিক্ষোভ, সড়ক অবরোধ ও অবস্থান ধর্মঘট অনুষ্ঠিত হয়েছে।
বরিশালের বাবুগঞ্জ উপজেলার সর্বস্তরের জনগণের উদ্যোগে আয়োজিত এই মানববন্ধনে এলাকার বিভিন্ন স্তরের নাগরিক, স্থানীয় নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষ ব্যাপক অংশগ্রহণ করেন।
শুক্রবার (২৮ নভেম্বর) বিকেলে বরিশালের বাবুগঞ্জ উপজেলার ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কের রহমতপুর নামক স্থানে ঘন্টাব্যাপী প্রায় ১ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে ‘বাবুগঞ্জ ও মুলাদী উপজেলার সর্বস্তরের জনগণ’-এর ব্যানারে আয়োজিত এ কর্মসূচিতে দলটির একাংশের নেতাকর্মীরা অংশ নেন। এছাড়া এ সময় এই কর্মসূচিতে বাবুগঞ্জ উপজেলার ৬টি ইউনিয়ন থেকে আগত স্থানীয় রাজনৈতিক কর্মী, ব্যবসায়ী, শিক্ষক-শিক্ষার্থী, দিনমজুর, কৃষকসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার কয়েক হাজার মানুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবে মানববন্ধনে যোগ দেন।
মানববন্ধন কর্মসূচি চলাকালে বাবুগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি ও বরিশাল দক্ষিণ জেলা বিএনপির সদস্য ইসরত হোসেন কচি তালুকদার এর সভাপতিত্বে এ সময় সংক্ষিপ্ত বক্তব্য রাখেন, বরিশাল জেলা কৃষক দলের আহবায়ক মোঃ মোহসীন আলম, বরিশাল জেলা যুবদলের সহ-সভাপতি মোঃ আওলাদ হোসেন, বাবুগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোঃ জাকির হোসেন, আলহাজ্ব মোঃ কামাল সরদার, সেলিম সরদার, দেহেরগতি ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক মোঃ মিলন খান, মাধবপাশা ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সভাপতি মোঃ মাহবুব তালুকদার, বাবুগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সদস্য মোঃ পারভেজ মৃধা, মনিরুজ্জামান মিল্টন, মিজানুর রহমান, বাবুগঞ্জ উপজেলা কৃষক দলের সভাপতি মোঃ আরিফুর রহমান রতন, কৃষক দলের সহ-সভাপতি মোঃ মাহবুব আলম তালুকদার, বরিশাল জেলা ছাত্রদলের সহ-সভাপতি মোঃ আরিফুর রহমান রবিন, মোঃ জহিরুল ইসলাম জহির, বাবুগঞ্জ উপজেলা ছাত্র দলের যুগ্ম আহবায়ক আবদুল্লাহ আল মামুন প্রমুখ।
মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, তিনবারের প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া এবং ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জনাব তারেক রহমানের আস্থাভাজন হিসেবে পরিচিত বেগম সেলিমা রহমান দীর্ঘদিন ধরে বরিশাল-৩ আসনের মানুষের পাশে থেকেছেন। তাঁর সুদীর্ঘ রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা, ত্যাগ ও যোগ্যতাকে মূল্যায়ন করে আগামী নির্বাচনে তাকে বিএনপির মনোনীত প্রার্থী করা সময়ের দাবি।
আয়োজকরা জানান, বাবুগঞ্জ–মুলাদীর জনগণ ঐক্যবদ্ধভাবে বেগম সেলিমা রহমানকে এমপি প্রার্থী হিসেবে দেখতে চান এবং তাকে নিয়ে আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে দলকে আরও সুসংগঠিত করতে প্রস্তুত।
এ সময় বক্তারা আরো বলেন, ত্যাগী ও জনপ্রিয় এই নেত্রীকে উপেক্ষা করে অন্য কাউকে মনোনয়ন দেওয়া হলে তৃণমূলে বিভ্রান্তি সৃষ্টি হবে, সংগঠন দুর্বল হবে এবং নির্বাচনেও নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে বলে মন্তব্য করেন তারা।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও কেন্দ্রীয় নেতাদের প্রতি মানববন্ধনে অংশগ্রহণকারী নেতারা অবিলম্বে বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য বেগম সেলিমা রহমানকে বরিশাল-৩ আসনের আনুষ্ঠানিক প্রার্থী ঘোষণার আহ্বান জানান। পরে মানববন্ধন ও অবস্থান ধর্মঘট শেষে একটি র্যালি মহাসড়ক প্রদক্ষিণ করে শেষে অংশগ্রহণকারীরা শান্তিপূর্ণভাবে কর্মসূচি সমাপ্ত করেন।
উল্লেখ্য, বরিশালের ৬টি আসনের মধ্যে ৫টিতে প্রার্থী ঘোষণা করলেও বরিশাল-৩ (বাবুগঞ্জ–মুলাদী) আসনে এখনো নীরব বিএনপি। এর ফলে নেতাকর্মীদের মধ্যে দেখা দিয়েছে অনিশ্চয়তা আর জল্পনা-কল্পনার ঝড়।
গত ৩ নভেম্বর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ২৩৭টি আসনের প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করেন। সেখানেই বরিশাল-৩ আসনটি শূন্য রেখে আলোচনার নতুন দ্বার খুলে দেয় দলের হাইকমান্ড।
স্থানীয় নেতাকর্মীরা কিছুটা হতাশ হলেও এখনো আশাবাদী। এ আসনে ৪ জন মনোনয়ন প্রত্যাশী আলোচনায় রয়েছেন এরা হলেন, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক প্রতিমন্ত্রী বেগম সেলিমা রহমান, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট জয়নাল আবেদিন, কেন্দ্রীয় আইনজীবী ফোরামের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার মনিরুজ্জামান আসাদ ও বরিশাল জেলা বিএনপির সদস্য ও সাবেক মুলাদী উপজেলা চেয়ারম্যান আব্দুস সাত্তার খান।
এই ৪ জনের মধ্যে বেগম সেলিমা রহমান, ব্যারিস্টার আসাদ এবং আব্দুস সাত্তার খান—একই মঞ্চে একাধিক সভা-সমাবেশ, উঠান বৈঠক ও গণসংযোগে জোর দিচ্ছেন রাষ্ট্র মেরামতের ৩১ দফা বাস্তবায়নে। অন্যদিকে, দলের ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট জয়নাল আবেদিনও দলীয় সভা সমাবেশে অংশ নিয়ে সক্রিয় রয়েছেন।

