ঢাকা
১২ই জুন, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
বিকাল ৩:০৬
logo
প্রকাশিত : জুন ১১, ২০২৫

তীব্র গরমে উল্টো চিত্র ঠাকুরগাঁওয়ে, জুনের সকালে ঘন কুয়াশা

সারা দেশ যখন তীব্র দাবদাহে পুড়ছে, মানুষ বৃষ্টির জন্য হাহাকার করছে—তখন প্রকৃতির এক অভাবনীয় ও ব্যতিক্রমী রূপ দেখল উত্তরের জেলা ঠাকুরগাঁওয়ের মানুষ। জুন মাসের এই সময়ে সাধারণত বর্ষার জলে প্লাবিত থাকে চারপাশ, কিন্তু এবার দেখা গেছে ভিন্ন চিত্র। টানা কয়েকদিনের প্রখর রোদের পর আজ বুধবার (১১ জুন) সকালে জেলা শহরসহ পুরো এলাকা ঢেকে গিয়েছিল কুয়াশার সাদা চাদরে। আষাঢ়ের সকালে এমন কুয়াশাচ্ছন্ন পরিবেশ দেখে বিস্মিত ও হতবাক স্থানীয়রা।

ক্ষণিকের জন্য ভোরের শীতলতা স্বস্তি দিলেও বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ফিরে আসে সেই চিরচেনা তীব্র গরম, যা জনজীবনকে আরো বিপর্যস্ত করে তুলেছে।


ঠাকুরগাঁও জেলায় গত কয়েকদিন ধরে তাপমাত্রা ৩৬ থেকে ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে ওঠানামা করছে। প্রচণ্ড গরমে মানুষের জীবনযাত্রা যখন স্থবির হওয়ার পথে, ঠিক তখনই গত শুক্রবার শেষরাত থেকে প্রকৃতি তার খামখেয়ালী রূপ দেখাতে শুরু করে। রাত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তাপমাত্রা কমতে থাকে এবং বাতাসে আর্দ্রতা বেড়ে যাওয়ায় সৃষ্টি হয় কুয়াশা।

আজ বুধবার ভোরে ঘুম থেকে উঠে ঠাকুরগাঁওবাসী এক ভিন্ন দৃশ্য দেখতে পান। রাস্তাঘাট, ফসলের মাঠ, গাছপালা—সবকিছুই ছিল কুয়াশার দখলে। সকাল ৯টা পর্যন্ত এই কুয়াশার দাপট ছিল। অনেকেই এমন দৃশ্য ক্যামেরাবন্দী করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করেছেন।

সালান্দর এলাকার বাসিন্দা শরিফুল ইসলাম বলেন, ‘সকালে ঘুম থেকে উঠে জানালা খুলে তো আমি অবাক! বাইরে কিছুই দেখা যাচ্ছে না, চারদিকে শুধু সাদা আর সাদা। প্রথমে ভেবেছিলাম হয়তো চোখে ভুল দেখছি। জুন মাসে এমন কুয়াশা জীবনে দেখিনি। মনে হচ্ছিল যেন শীতকালের সকাল।’

গ্রামাঞ্চলের মানুষের মধ্যে এই আবহাওয়া নিয়ে বিস্ময়।

সদর উপজেলার বেগুনবাড়ি গ্রামের সত্তরোর্ধ্ব কৃষক আব্দুল করিম শেখ লাঠিতে ভর দিয়ে ফসলের মাঠের দিকে তাকিয়ে ছিলেন। তিনি বলেন, ‘আমার এই সত্তর বছর বয়সে জ্যৈষ্ঠ মাসে এমন কুয়াশা দেখি নাই বাবা। এটা আল্লাহর কী লীলাখেলা, কিছুই বুঝতেছি না। আগে তো এই সময় ঝুম বৃষ্টি হতো, খাল-বিল পানিতে টইটম্বুর থাকত। আর এখন বৃষ্টির দেখা নাই, উল্টো কুয়াশা পড়ছে। ধানের চারা সব শুকিয়ে যাচ্ছে, পাটগাছ বাড়ছে না। বড় চিন্তায় আছি।’

একই উপজেলার মিলনপুর গ্রামের গৃহবধূ আমেনা বেগম বলেন, ‘শেষ রাতে হঠাৎ করে বেশ ঠাণ্ডা লাগছিল। কাঁথা গায়ে দিয়ে ঘুমাতে হয়েছে। সকালে উঠে দেখি উঠানজুড়ে কুয়াশা। ছেলেমেয়েরা তো অবাক । তবে বেলা বাড়তেই যে গরম শুরু হয়েছে, তাতে আর বাইরে বের হওয়ার উপায় নেই।’

কৃষক রমজান আলী বলেন, ‘সকালে কুয়াশা দেখে ভয় পেয়ে গেলাম। ভাবলাম ফসলের কী হবে, পোকমাকড়ের উপদ্রব বাড়বে কিনা। আবার বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে যে প্রখর রোদ, তাতে সবজি খেত শুকিয়ে কাঠ হয়ে যাচ্ছে। পানির অভাবে আমন ধানও লাগাতে পারছি না। আবহাওয়ার এই খামখেয়ালিপনায় আমরা কৃষকেরা দিশেহারা হয়ে পড়েছি।’

স্বাস্থ্য ঝুঁকি : অসুস্থ হচ্ছে শিশু ও বৃদ্ধরা
আবহাওয়ার এই আকস্মিক পরিবর্তনে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে শিশু ও বৃদ্ধরা। দিনের বেলায় তীব্র গরম এবং শেষ রাতের শীতল ও আর্দ্র আবহাওয়ার কারণে নানা রোগবালাই বাড়ছে। ঠাকুরগাঁও আধুনিক সদর হাসপাতালের তথ্যমতে, গত এক সপ্তাহে ডায়রিয়া, জ্বর, সর্দি-কাশি এবং হিটস্ট্রোকের রোগীর সংখ্যা আশঙ্কাজনকভাবে বেড়েছে।

হাসপাতালের চিকিৎসক কর্মকর্তা রকিবুল আলম চয়ন বলেন, ‘তাপমাত্রার এই তারতম্য শিশু ও বয়স্কদের জন্য খুবই বিপদজনক। দিনে প্রচণ্ড গরমের কারণে পানিশূন্যতা এবং রাতে ঠাণ্ডা আবহাওয়ার কারণে ফুসফুসের সংক্রমণ বা নিউমোনিয়ার ঝুঁকি বাড়ছে। আমরা সবাইকে, বিশেষ করে শিশু ও বয়স্কদের এই সময়ে বাড়তি সতর্ক থাকার পরামর্শ দিচ্ছি। প্রচুর পরিমাণে বিশুদ্ধ পানি ও তরল খাবার গ্রহণ করতে হবে এবং দিনের বেলায় যথাসম্ভব ঘরের বাইরে বের হওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে।’

বিশেষজ্ঞদের মতামত : জলবায়ু পরিবর্তনের অশনি সংকেত
আষাঢ় মাসে এমন ঘন কুয়াশার ঘটনাকে জলবায়ু পরিবর্তনের একটি বড় লক্ষণ হিসেবে দেখছেন আবহাওয়াবিদরা। ঠাকুরগাঁও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপ-পরিচালক মো. আলমগীর কবির বলেন, ‘‘সাধারণত বাতাসে প্রচুর জলীয় বাষ্প থাকলে এবং রাতের তাপমাত্রা হঠাৎ করে কমে গেলে ভূপৃষ্ঠ সংলগ্ন এলাকায় কুয়াশার সৃষ্টি হয়, যাকে ‘রেডিয়েশন ফগ’ বা বিকিরণ কুয়াশা বলে। এবারের তীব্র গরমের কারণে বাতাসে জলীয় বাষ্পের পরিমাণ অনেক বেশি। রাতে মেঘমুক্ত আকাশে ভূপৃষ্ঠ দ্রুত তাপ বিকিরণ করে ঠাণ্ডা হয়ে যাওয়ায় এই ব্যতিক্রমী কুয়াশা দেখা দিয়েছে। এটি জলবায়ু পরিবর্তনের সরাসরি প্রভাব। আবহাওয়ার স্বাভাবিক চক্র ব্যাহত হওয়ায় এ ধরনের অস্বাভাবিক ঘটনা আগামীতে আরো বাড়তে পারে।’’

logo
প্রকাশকঃ অধ্যাপক ড. জোবায়ের আলম
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদকঃ তাপস রায় সরকার
মোবাইল: +৮৮০ ১৭৩৬ ৭৮৬৯১৫
কার্যালয় : বিটিটিসি বিল্ডিং (লেভেল:০৩), ২৭০/বি, তেজগাঁও (আই/এ), ঢাকা-১২০৮
মোবাইল: +880 2-8878026, +880 1736 786915, +880 1300 126 624
ইমেইল: tbtbangla@gmail.com (online), ads@thebangladeshtoday.com (adv) newsbangla@thebangladeshtoday.com (Print)
বাংলাদেশ টুডে কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি ও বিষয়বস্তু অন্য কোথাও প্রকাশ করা বে-আইনী।
Copyright © 2025 The Bangladesh Today. All Rights Reserved.
Host by
linkedin facebook pinterest youtube rss twitter instagram facebook-blank rss-blank linkedin-blank pinterest youtube twitter instagram