করোনা পরীক্ষা ও চিকিৎসাসেবার জন্য রাজধানী ও ঢাকার বাইরে মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল এবং জেলা শহরের হাসপাতালগুলোকে প্রস্তুত রাখা হয়েছে। সংক্রমণ প্রতিরোধে মাক্স পরাসহ ১১ দফা নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। গতকাল বুধবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে এক সংবাদ সম্মেলনে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. মো. আবু জাফর ১১ দফা নির্দেশনার বিষয়টি জানান। বাস্তবে রাজধানী ও ঢাকার বাইরে সরকারি মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালগুলো সরেজমিনে অনুসন্ধান ও কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলাপ করে করনীয় প্রতিরোধ পরীক্ষা ও চিকিৎসা কার্যক্রম চোখে পড়ে না। কোনো কোনো হাসপাতালে পরীক্ষার যন্ত্র আছে কিন্তু পরীক্ষার কিট নাই। হাসপাতালগুলোতে কোনো ধরনের স্বাস্থ্যবিধি মানার দৃশ্য চোখে পড়ে না।
মহাপরিচালক বলেন, বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ন্যায় বাংলাদেশেও করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ বৃদ্ধি পাচ্ছে। ভাইরাসটি নতুন কিছু উপ-ধরনের (সাব ভ্যারিয়েন্ট) আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ায়। এ কারণে ১১ দফা সতর্কতা অবলম্বন বাস্তবায়নে জোর দিয়েছেন। ডিজি বলেন, ভাইরাসজনিত সংক্রমণের হার বৃদ্ধি পেয়েছে। স্বাস্থ্যবিধি মানা নিশ্চিত করা গেলে সহজে করোনা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। এ বিষয়টি একা স্বাস্থ্য অধিদপ্তর কিংবা মন্ত্রণালয়ের পক্ষে সম্ভব নয়। অন্যান্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলোর সহযোগিতা জরুরি। এ বিষয় দ্রুত অন্যান্য মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলোর সঙ্গে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বৈঠক হবে। করোনা নিয়ন্ত্রণে সম্মিলিত উদ্যোগ নেওয়া হবে।
মাস্ক পরাসহ স্বাস্থ্যবিধি মানা নিশ্চিত করা গেলে করোনা সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে থাকবে বলে মহাপরিচালক জানান।
চাহিদা অনুযায়ী পরীক্ষানিরীক্ষার কিট টিকার সংকট রয়েছে। দ্রুত এ বিষয় কার্যকর পদক্ষেপ মন্ত্রণালয় নেওয়া হয়েছে। স্বল্প সময়ের মধ্যে চাহিদা অনুযায়ী রাজধানী ও ঢাকার বাইরে কিট ও টিকা সরবরাহ করা হবে বলেও মহাপরিচালক জানান। ইতিমধ্যে পরীক্ষার জন্য ১৭ লাখ কিট সিভিল কার্যালয়ে ইতিমধ্যে সরবরাহকরা হয়েছে।
সংক্রমণ প্রতিরোধে জনসাধারণের করণীয় :
১। জনসমাগম যথাসম্ভব এড়িয়ে চলুন এবং উপস্থিত হতেই হলে সেক্ষেত্রে অবশ্যই মাস্ক ব্যবহার করা;
২। শ্বাসতন্ত্রের রোগসমূহ হতে নিজেকে রক্ষার জন্য মাস্ক ব্যবহার করুন;
৩। হাঁচি/ কাশির সময় বাহু বা টিস্যু দিয়ে নাক মুখ ঢেকে রাখুন;
৪। ব্যবহৃত টিস্যুটি অবিলম্বে ঢাকনা যুক্ত ময়লা ফেলার ঝুড়িতে ফেলুন;
৫। সাবান ও পানি কিংবা হ্যান্ড স্যানিটাইজার দিয়ে ঘন ঘন হাত ধুয়ে ফেলুন (অন্তত ২০ সেকেন্ড);
৬। অপরিষ্কার হাতে চোখ, নাক, মুখ ধরবেন না;
৭। আক্রান্ত ব্যক্তিদের সংস্পর্শ এড়িয়ে চলুন এবং কমপক্ষে ৩ ফুট দূরত্ব বজায় রাখুন;
সন্দেহজনক রোগীদের ক্ষেত্রে করণীয় :
১। জ্বর, কাশি এবং শ্বাসকষ্টে আক্রান্ত হলে সুস্থ না হওয়া পর্যন্ত বাড়িতে থাকুন;
২। রোগীর নাক, মুখ ঢাকার জন্য মাস্ক ব্যবহার করতে বলুন;
৩। রোগীর সেবাদানকারীগণও সতর্কতা হিসেবে মাস্ক ব্যবহার করুন;
৪। প্রয়োজন হলে নিকটস্থ হাসপাতালে অথবা আইইডিসিআর (০১৪০১-১৯৬২৯৩) অথবা যোগাযোগ করুন।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (হাসপাতাল) ডা. মাইনুল আহাসান ও পরিচালক (রোগ নিয়ন্ত্রণ) অধ্যাপক ডা. মো. হালিমুর রশীদ।
বিশিষ্ট মেডিসিন বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. এ বি এম আব্দুল্লাহ, জাতীয় প্রতিষেধক ও সামাজিক চিকিৎসা প্রতিষ্ঠান (নিপসম) এর কীটতত্ত্ব বিভাগের প্রধান ড. মো. গোলাম ছারোয়ার ও জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. বেনজীর আহমেদ বলেন, করোনার নতুন ভ্যারিয়েন্ট পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে সংক্রমণ ব্যাপক হারে বাড়ছে। বাংলাদেশে এটাকে হালকা করে দেখার সুযোগ নাই। সর্বক্ষেত্রে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার বিষয়টি শতভাগ নিশ্চিত করতে হবে। এই বিষয়টি সফল হলে করোনা সহজেই নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। ঈদের ছুটি শেষ। সামনে স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় খুলবে। অনেক স্কুল-কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে পরীক্ষা শুরু হবে। অভিভাবকদের সমাগমও বৃদ্ধি পাবে। মার্কেট ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান খুলবে। এ ধরনের পরিবেশে করোনা সংক্রমণ হওয়ার ঝুঁকি সবচেয়ে বেশি। বিশেষজ্ঞদের মতে করোনা নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব শুধু স্বাস্থ্য বিভাগের একার নয়। এর সঙ্গে অন্যান্য বিভাগের দায়িত্ব রয়েছে। সব বিভাগ মিলিয়েই বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে টাস্কফোর্স গঠন করা জরুরি। বিগত করোনার সময়েও এ ধরনের টাস্কফোর্স গঠন করা হয়েছিলো। টাস্কফোর্স পুরো করোনা পরিস্থিতি মনিটর করবে। চিকিৎসাসেবার জন্য পরামর্শও দেবে। এই টাস্কফোর্সের মধ্যে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী অন্তর্ভুক্ত ছিল। মাস্ক পরাসহ স্বাস্থ্যবিধি মানার ক্ষেত্রে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কার্যকর ভূমিকা পালন করেছে। এবারও সেই ব্যবস্থা নিলে করোনার যত বড় ধাক্কাই আসুক না কেন নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব।
বিশেষজ্ঞরা বলেন স্বাস্থ্যবিধি মানাই হলো করোনা নিয়ন্ত্রণের প্রথম কাজ। এ বিষয়টি নিশ্চিত করতে পারে একমাত্র আইনশৃঙ্খলা বাহিনীই।