অতুল পাল, বাউফল (পটুয়াখালী) প্রতিনিধি: বাউফলের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আমিনুল ইসলামের অপসারণ দাবি করে ছাত্র জনতার ব্যানারে বিক্ষোভ কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে। কালের কণ্ঠের পটুয়াখালী জেলা প্রতিনিধি শহীদুল হক ওরফে এমরান হাসান সোহেলকে জেলে ভরার হুমকি দেওয়ার প্রতিবাদে আগামীকাল বিকেলে বাউফল পাবলিক মাঠে ওই কর্মসূচীর ডাক দেওয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সংগঠক মুনতাসির তাসরিপ বলেন, ইউএনও আমিনুল ইসলাম একজন দুর্নীতিবাজ। তিনি মানিকগঞ্জের ঘিওরে থাকাকালীন ব্যাপক অনিয়ম-দুর্নীতি করেছেন। জুলাই আন্দোলনের সময় ছাত্র-জনতার রোষানলে পড়ায় তাকে ঘিওর থেকে বাউফলে বদলী করা হয়েছে। কিন্তু তার চরিত্রের পরিবর্তন হয়নি। বাউফলে যোগদানের পরই তিনি পূর্বের রুপে ফিরেছেন। তার কারণে সাধারণ মানুষ সরকারি নানা সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। সাংবাদিকদের ভয়ভীতি প্রদর্শন ও অসৌজন্যমূলক আচরণ করছেন। সাধারণ মানুষের সাথেও খারাপ ব্যাবহার করেন। আমরা এখন আর তাকে বাউফলে ইউএনও হিসেবে দেখতে চাই না। দ্রুত তাকে বাউফল থেকে অপসারণ করা না হলে দুর্বার আন্দোলন গড়ে তোলা হবে।
উল্লেখ্য, গতকাল সোমবার দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির বাউফল উপজেলা শাখার সভাপতি সাংবাদিক সোহেলকে জেলে ভরে শাস্তির হুমকি দিয়েছেন ইউএনও আমিনুল ইসলাম। সোমবার পটুয়াখালী জেলা দুর্নীতি দমন কমিশন(দুদক) ও বাউফল উপজেলা দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির উদ্যোগে বাউফল আদর্শ বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে আয়োজিত একটি অনুষ্ঠানে দাওয়াত না পেয়ে তিনি ফুঁসে ওঠেন। এসময় ইউএনও আরও বলেন, ‘আমি কারো ফোন ধরতে বাধ্য না। আমাকে চিঠি দিয়ে দাওয়াত দিতে হবে। আমরা প্রজাতন্ত্রের এমন চাকর যে মালিককে জেলে ভরে শাস্তি দিতে পারি।’ ক্ষমতার অপব্যহার করে ইউএনও আমিনুলের ঔদ্ধত্যপূর্ণ এ আচরণে সকলে হতবাক হয়ে যান।
অনুষ্ঠানের আয়োজক কমিটির সভাপতি সাংবাদিক সোহেল বলেন, 'অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে আমন্ত্রণ জানানোর জন্য তার কার্যালয়ে একাধিকবার যাওয়া হয়েছে। কিন্তু তিনি অফিসে ছিলেন না। অফিসে না পেয়ে প্রত্যেকবার আমি তাকে ফোন করলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি। সর্বশেষ রোববার সন্ধ্যার পর তাকে ফোন দিলে তিনি ফোন কেটে দেন।'
সোমবার অনুষ্ঠানাস্থলে উপস্থিত হওয়ার জন্য বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জাহানারা বেগম তাকে ফোনে আমন্ত্রণ জানালে তিনি অনুষ্ঠানের শেষ দিকে উপস্থিত হন। অনুষ্ঠানে এসেই তিনি চটে যান। এ সময় তাকে আমন্ত্রণ না দেওয়ার কৈফিয়ত তলব করেন। একপর্যায়ে হঠাৎ করে ইউএনও উত্তেজিত হয়ে সাংবাদিক সোহেলকে বলেন, আপনারা একটা অ্যারেজমন্ট করেছেন ইউএনও জানবে না, আপনারা কিসের অ্যারেজমেন্ট করেছেন? আশ্চর্য ব্যাপার। ইউএনওকে অবহিত না করে আপনাকে এ আয়োজন করার এখতিয়ার কে দিয়েছে? আপনারা দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির প্রেসিডেন্ট-সেক্রেটারি হয়ে মনে করছেন রাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট-সেক্রেটারি হয়ে গেছেন। আমি আপনাদের ফোন ধরতে বাধ্য না।
সে সময় সভাপতি সোহেল বলেন, ‘আপনি একজন প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী। আপনি একজন কৃষকের ফোন ধরতেও বাধ্য।’ এরপর ইউএনও আমিনুল ইসলাম বলেন, আমি প্রজাতন্ত্রের এমন কর্মচারী যে এর মালিককেও শাস্তি দিতে পারি।
অপরদিকে এইচএম বাবলু নামের এক সাংবাদিককেও হয়রানি করা হয়েছে বলে জানা গেছে। বাউফলের একাধিক সিনিয়র সাংবাদিক জানান, ইউএনও আমিনুল ইসলাম অনেক সাংবাদিকদের সাথেই ভাল ব্যবহার করেন না। অনেক সিনিয়রদের চিনেনও না। সব সময় মুডেই থাকেন। এছাড়া ইউএনও'র বদ অভ্যাস হলো তিনি সাংবাদিকসহ সাধারণ মানুষের ফোন রিসিফ করেন না।
এ ব্যাপারে জানার জন্য উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আমিনুল ইসলামকে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
এদিকে সিনিয়র সাংবাদিক সোহেলকে হুমকি দেওয়ার প্রতিবাদ করে আগামীকাল বুধবার বিকেলে ছাত্র জনতার ব্যানারে পাবলিক মাঠ থেকে বিক্ষোভ কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে।