ঢাকা
১৫ই মে, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
রাত ১০:৩০
logo
প্রকাশিত : মে ১৫, ২০২৫

বদলগাছীতে গান গেয়ে সংসার চলে দৃষ্টি প্রতিবন্ধী মজিদুলের

খালিদ হোসেন মিলু, বদলগাছী (নওগাঁ) প্রতিনিধি: দু-চোখে নেই আলো। মলিন মুখে হাতে খঞ্জনি নিয়ে কখনো রাস্তার মোড়ে, হাটে বাজারে, রেলওয়ে ষ্টেশন, ট্রেনে আবার কখনো চায়ের দোকানে বসে খালি গলায় গান গেয়ে উপস্থিত জনতাকে গানের সুরে মুগ্ধ করে দৃষ্টি প্রতিবন্ধী এক যুবক তাকে অনেকেই হয়তো কমবেশি চেনে।

বলছিলাম নওগাঁর বদলগাছীর উপজেলার দৃষ্টি প্রতিবন্ধী মজিদুলের কথা। হাতের মুঠে ধরে আছেন বাদ্যযন্ত্র খঞ্জনি। গাইছেন ভবে কেউ কারও নয় দুঃখের দুঃখী আল্লা বলো মনে পাখি একবার মওলা বলো মনরে পাখি, তুমি আমার আমি তোমার এই আশা করে তোমারে পুষিলাম কত আদরে, গুরু বলো মুর্শিদ বলো মনরে আমার, স্বার্থ ছাড়া ভালোবাসে শুধু আমার মা, সহ বিভিন্ন গান।

বৈশাখের তপ্ত দুপুরে প্রখর রোদে ভ্যাপসা গরমে যখন জনজীবন অতিষ্ঠ। তখন একটু খানি প্রশান্তির ছাঁয়ায় নিজেকে জুড়িয়ে নিতে পথচারীরা সড়কের পাশে নির্মল বাতাসে বসে আড্ডা আর খোশ গল্পে মেতেছেন। এমন সময় হঠাৎ করেই বেজে উঠল পুরনো বাংলা গানের সুর। কেউ রেকর্ড বাজিয়েছেন মনে হলেও, সবার ভুল ভাঙতে সময় লাগেনি।

পথে ধারে গাইতে গাইতে উপজেলার শহরে চায়ের দোকানে এসে বসলো এক দৃষ্টি প্রতিবন্ধী যুবক। খালি গলায় গাইছেন হারানো দিনের পুরানো বাংলা গান। দৃষ্টি প্রতিবন্ধী মজিদুল গানের মাঝেই বলছেন, আমার গান শুনে কারো যদি ভালো লাগে, তাহলে আমাকে ৫ থেকে ১০ টাকা দিয়ে সহায়তা করবেন। মজিদুলের খালি কন্ঠে শোনা যায় আধুনিক, পল্লী গীতি, বিচ্ছেদ, মুর্শিদী, আধ্যাত্মিক গান।

বাংলা গানই যেন জীবন সংগ্রামে বেঁচে থাকার ঢাল হয়ে ধরা দিয়েছে মজিদুলের জীবনে। গানই তাঁর জীবন, গানই তাঁর জীবিকা। তার জীবন সংগ্রামের গল্পটা আর দশ জনের চেয়ে ব্যাতিক্রম ।

নওগাঁর বদলগাছী উপজেলার সদর ইউনিয়নের চাংলা গ্রামের ইদ্রিস আলীর দৃষ্টি প্রতিবন্ধী ছেলে মজিদুল (৩৮)। মজিদুলের পিতা কৃষি কাজ করে অতিকষ্টে সংসার চালান। মজিদুল সংসার জীবনে বিয়েসাদী না করলেও তার বাবা মা সহ আরও ছোট দুই ভাইকে নিয়ে মজিদুলের অভাবের পরিবার। পিতার অভাবী সংসারে পড়ালেখার তেমন খুব বেশি সুযোগ হয়নি। একসময় মজিদুল মুক্তবে কিছু সময় আরবি শিক্ষা গ্রহন করেন।

পিতার দারিদ্রতার কারণে তার ছোট দুই ভাইয়ের পড়ালেখা প্রায় বন্ধ হয়ে যায়। দৃষ্টি প্রতিবন্ধী মজিদুল তখন পথে পথে ভিক্ষা করেন অর্থ উপার্জন করে পরিবারকে সহায়তা করেন। এক সময় মজিদুল বুঝতে পারেন ভিক্ষা করা তেমন কোন ভালো কাজ নয়। ঠিক তখনই সে ভাবেন কিছু একটা কাজ করবেন যাতে করে অন্যর কাছে আর হাত পেতে ভিক্ষা করতে না হয়।

২যুগ আগের কথা তখন তাঁর বয়স ছিল ১৫ বছর। গ্রামে তখন আধুনিক যন্ত্রের ছোঁয়া তেমন পড়েনি। শহরেও ছিল আধুনিক যন্ত্রের ছোঁয়া। তখন গ্রামে গ্রামে বসত জারি–সারি, কিচ্ছা পালা সহ, নানা ধরনের গানের আসর। দাদা কিংবা বাবার সঙ্গে গিয়েছেন এসব আসরে। গান শুনেই তাঁর মনে ভরে যেত।

সেই ভালো লাগা থেকেই নিজেও গান গাইবেন এমনটা ভাবনা মনে উদয় হলো। যেমন ভাবনা তেমন কাজ।শুরু হয় মজিদুলের জীবন যুদ্ধ। তার জীবন যুদ্ধের হাতিয়ার হাতে একটি খঞ্জনি আর খালি গলায় মায়া ভরা কন্ঠে গানের সুর। গান গেয়ে মানুষকে বিনোদন দেওয়ায় তার কাজ। তার মিষ্টি কন্ঠে গান শুনে মুগ্ধ হয়ে অনেকেই খুশি হয়ে যে অর্থ তাকে দেন তা দিয়েই চলে মজিদুলের সংসার।

গান শেষে মজিদুল বলেন, অতি দরিদ্র পরিবারে আমার জন্ম। পিতার অভাবের সংসারের হাল ধরতেই এবং জীবন ও জীবিকার তাগিদে বাধ্য হয়ে গান গেয়ে অর্থ উপার্জনের পেশায় নিজের নাম লিখিয়েছি। গান গেয়ে যে টাকা পাই তা দিয়ে চলে আমার সংসার চলে। প্রতিদিন গান গেয়ে ৩শ থেকে ৪শ টাকা উপার্জন হয়। যদি কোন বিত্তবান মানুষ তাকে একটু সাহায্য সহায়তা করেন তাহলে সে অনেকটা উপকৃত হবেন।

বদলগাছীর হ্যাপি বলেন, দৃষ্টি প্রতিবন্ধী মজিদুল সামান্য প্রতিবন্ধী ভাতা পান সামান্য এই টাকা দিয়ে তার সংসার চলানো কষ্টকর হয়ে পড়ে। বাধ্য সে পথে ঘুরে ঘুরে গান গেয়ে মানুষের মনে আনন্দ দেয়। তার গান শুনে খুশি হয়ে শ্রোতারা যে টাকা দেয় তা দিয়ে চলে তার সংসার।

বদলগাছী উপজেলা শহরের দোকানদার সোহাগ বলেন, মজিদুল দৃষ্টি প্রতিবন্ধী হলেও কঠোর পরিশ্রমী ছেলে। গান গেয়ে তার জীবন জীবিকা চলে। সে নওগাঁ জেলার বদলগাছী, মহাদেবপুর, নজিপুর, সাপাহার, মান্দা সহ জেলা শহরের বিভিন্ন যায়গায় গান গেয়ে থাকেন। এছাড়াও পাশের জেলা জয়পুরহাটের আক্কেলপুর রেলওয়ে ষ্টেশন এ ঘুরে ঘুরে ভাম্যমান গান পরিবেশন করে শ্রোতাদের মন জয় করেন দৃষ্টি প্রতিবন্ধী মজিদুল।

সর্বশেষ
logo
প্রকাশকঃ অধ্যাপক ড. জোবায়ের আলম
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদকঃ তাপস রায় সরকার
মোবাইল: +৮৮০ ১৭৩৬ ৭৮৬৯১৫
কার্যালয় : বিটিটিসি বিল্ডিং (লেভেল:০৩), ২৭০/বি, তেজগাঁও (আই/এ), ঢাকা-১২০৮
মোবাইল: +880 2-8878026, +880 1736 786915, +880 1300 126 624
ইমেইল: tbtbangla@gmail.com (online), ads@thebangladeshtoday.com (adv) newsbangla@thebangladeshtoday.com (Print)
বাংলাদেশ টুডে কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি ও বিষয়বস্তু অন্য কোথাও প্রকাশ করা বে-আইনী।
Copyright © 2025 The Bangladesh Today. All Rights Reserved.
Host by
linkedin facebook pinterest youtube rss twitter instagram facebook-blank rss-blank linkedin-blank pinterest youtube twitter instagram