ঢাকা
৩০শে এপ্রিল, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
দুপুর ১২:৪৯
logo
প্রকাশিত : এপ্রিল ২৮, ২০২৫

ছাত্র আন্দোলনে নিহত তামিনের মা'কে সন্তানের অংশ থেকে বঞ্চিত করে অর্থ আত্মসাতের পাঁয়তারা

পলাশ (নরসিংদী) প্রতিনিধি: বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে পুলিশের গুলিতে নিহত তামিন হৃদয়ের নামে বেসরকারি বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠন থেকে বরাদ্দকৃত আর্থিক সহায়তা ও সুযোগ সুবিধা থেকে মাকে বঞ্চিত করে একাই সকল টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে নিহতের পিতা তমিজ উদ্দিনের বিরুদ্ধে। শুধু তাই নয়, সরকারি সুযোগ সুবিধা থেকেও যেন তামিনের গর্ভধারিণী মায়ের নাম পুরোপুরি বাদ দেওয়া যায়, সেই লক্ষ্যে তামিনের পিতা বিভিন্ন মাধ্যমে মিথ্যা মানহানিকর মন্তব্য করে অপপ্রচার ও ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।

এ ঘটনার প্রতিকার ও সরকারি সুযোগ সুবিধা সমহারে বণ্টনের ব্যবস্থা করতে ছাত্র আন্দোলনে নিহত তামিন হৃদয়ের মা রুমি বেগম গেল বছরের ২৬ সেপ্টেম্বর নরসিংদী জেলা প্রশাসক বরাবরে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন।

তামিন হৃদয়ের মা রুমি বেগমের লিখিত অভিযোগে বলা হয়, ২০০৬ সালে শিবপুর উপজেলার দক্ষিণ সাধারচর গ্রামের মৃত সিরাজ উদ্দিনের ছেলে তমিজ উদ্দীন মীরের সাথে পলাশ উপজেলার চরসিন্দুর ইউনিয়নের দক্ষিণ দেওড়া গ্রামের মজনু কাজীর মেয়ে রুমি বেগমের পারিবারিক আনুষ্ঠানিকতার মাধ্যমে বিয়ে হয়। বিয়ের পর তাদের সংসারে একটি পুত্র সন্তান জন্মগ্রহণ করে তামিন হৃদয়। দাম্পত্য জীবনে বনিবনা না হওয়ায় স্বামী তমিজ উদ্দিন ৩য় বিয়ে করেন ও নিহতের মা রুমি বেগমের ২য় বিয়ে হয়। সংসার জীবন আলাদা হলেও তামিন হৃদয়ের সাথে তার মায়ের নিয়মিত যোগাযোগ, খোঁজ-খবর, আসা-যাওয়া ছিল তাদের মা-ছেলের। গত ১৯ জুলাই শিবপুর উপজেলার ইটাখলা মোড়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে পুলিশের গুলিতে নিহত হয় তামিন হৃদয়। পরবর্তীতে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন থেকে তামিন হৃদয়ের নামে আর্থিক সহায়তা ও ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়। যা তার গর্ভধারিণী মাকে জানানো হয়নি। সেখান থেকে বরাদ্দকৃত ক্ষতিপূরণের কোন অংশও দেওয়া হয়নি তামিনের মা রুমি আক্তার ওরফে রুমি বেগমকে। সম্পূর্ণ টাকা তামিনের পিতা তমিজ উদ্দিন নিজের কব্জায় রেখেছেন। বর্তমানে বিভিন্ন মাধ্যমে জানতে পেয়েছেন জীবিত মাকে মৃত দেখিয়ে সরকারিভাবে বরাদ্দকৃত সমস্ত অনুদানের টাকা ও বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা তামিনের পিতা তমিজ উদ্দিন একাই আত্মসাতের পাঁয়তারা করছেন। আর এসব বিষয়ে সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে ছাত্র আন্দোলনে পুলিশের গুলিতে নিহত শহীদ পরিবারকে সরকারিভাবে বরাদ্দকৃত আর্থিক অনুদান ও সুযোগ সুবিধা আইন অনুযায়ী প্রাপ্য অংশ সমাহারে বন্টনের ব্যবস্থা করতে জেলা প্রশাসক বরাবরে আবেদন জানান তামিনের মা রুমি আক্তার ওরফে রুমি বেগম।

তামিন হৃদয়ের মা রুমি বেগম অভিযোগ করে বলেন, লিখিত অভিযোগ দেওয়ার পর থেকে আমার প্রাক্তন স্বামী তমিজ উদ্দিন বিভিন্নভাবে আমাকে কু-প্রস্তাব দিয়ে আসছেন। তাতে রাজি না হলে আমাকে সামাজিকভাবে হেয় প্রতিপন্ন করতে বিভিন্ন মিথ্যাচার ও ভয়-ভীতি দেখানোর হুমকি দিয়ে আসছে। এ বিষয়ে আমি প্রশাসনের দ্বারস্থ হলে শিবপুর উপজেলা প্রশাসন আমাদের দুইজনেরই কথা শুনে গত ২২ এপ্রিল ২০২৫ আমরা দুইজনই লিখিত অঙ্গিকার নামা দিয়ে এসেছি। অঙ্গিকার নামায় সরকার কর্তৃক নির্ধারিত হারে প্রদেয় আর্থিক সুবিধা বিধি মোতাবেক নিতে আমাদের কারও কোন আপত্তি নাই এবং ভবিষ্যতে এ বিষয় নিয়ে আর কোন অভিযোগ করবো না বলে উল্লেখ করা হয়েছে। এরপরও আমার নিহত ছেলের পিতা তমিজ উদ্দিন আমার বিরুদ্ধে সোশ্যাল মিডিয়াসহ বিভিন্ন মিডিয়ায় মিথ্যা ও ভুল তথ্য অপপ্রচার করে মানহানি করার অপচেষ্টায় লিপ্ত রয়েছেন। সরকারি আর্থিক সুযোগ সুবিধা থেকে আমাকে বঞ্চিত করে একাই আত্মসাতের পাঁয়তারা করছেন। আমি এ বিষয়ে প্রশাসন থেকে শুরু করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়কসহ যথাযথ কর্তৃপক্ষ ও দেশের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।

তবে এ বিষয়ে তামিন হৃদয়ের পিতা তমিজ উদ্দিন মীর সব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তিনি জানান, তামিন হৃদয়ের মা রুমি বেগমের করা অভিযোগ মিথ্যা ও বানোয়াট। সরকারিভাবে কিছু অংশ তাকে দেওয়া হয়েছে। জুলাই স্মৃতি ফাউন্ডেশন থেকেও তাকে টাকা দেওয়া হয়েছে। তবে, তাদের বিরোধ নিষ্পত্তি ও শিবপুর উপজেলা প্রশাসনের কাছে লিখিত অঙ্গীকারনামা দেওয়ার বিষয়ে তিনি স্বীকার করেন।

নরসিংদী জজ কোর্টের এডভোকেট মাইন উদ্দিন সোহেল জানান, আইন অনুযায়ী নিহত ছেলের ওয়ারিশ থেকে মাকে বঞ্চিত করার কোন সুযোগ নেই। সন্তানের স্থলাভিষিক্ত ওয়ারিশগণ পিতা-মাতা উভয়ই সকল সুযোগ সুবিধা পাওয়ার অধিকার রাখেন।

এ বিষয়ে শিবপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ফারজানা ইয়াসমিন জানান, আমাদের এখানে ও ডিসি অফিসে তামিন হৃদয়ের বাবা এবং মা দুইজনেরই ডকুমেন্টস রয়েছে। গত সপ্তাহে আমাদের এখানে দুইজনই লিখিত অঙ্গীকারনামা দিয়ে গেছেন। আইন অনুসারে আমাদের পক্ষ থেকে যা হওয়ার তাই হবে।

এ বিষয়ে নরসিংদীর জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ রাশেদ হোসেন চৌধুরী জানান, তামিন হৃদয়ের বাবা এবং মাকে আইন অনুযায়ী সাহায্য-সহযোগিতা ভাগ করে দেওয়া হচ্ছে। আইনে যা আছে আমরা তাই করব।

logo
প্রকাশকঃ অধ্যাপক ড. জোবায়ের আলম
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদকঃ তাপস রায় সরকার
মোবাইল: +৮৮০ ১৭৩৬ ৭৮৬৯১৫
কার্যালয় : বিটিটিসি বিল্ডিং (লেভেল:০৩), ২৭০/বি, তেজগাঁও (আই/এ), ঢাকা-১২০৮
মোবাইল: +880 2-8878026, +880 1736 786915, +880 1300 126 624
ইমেইল: tbtbangla@gmail.com (online), ads@thebangladeshtoday.com (adv) newsbangla@thebangladeshtoday.com (Print)
বাংলাদেশ টুডে কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি ও বিষয়বস্তু অন্য কোথাও প্রকাশ করা বে-আইনী।
Copyright © 2025 The Bangladesh Today. All Rights Reserved.
Host by
linkedin facebook pinterest youtube rss twitter instagram facebook-blank rss-blank linkedin-blank pinterest youtube twitter instagram