চিলমারী (কুড়িগ্রাম) প্রতিনিধি: ভারতে মাছ ধরতে গিয়ে অবৈধ অনুপ্রবেশের দায়ে ভারতীয় হাজতে ৬ মাস ধরে আটক রয়েছেন কুড়িগ্রামের চিলমারী, রৌমারী ও রাজিবপুর উপজেলার ৭ জেলে। রাজিবপুর উপজেলাধীন জিঞ্জিরাম নদী হয়ে নদী পথে ভারতের ভেতরে মাছ ধরতে গিয়ে গত বছরের ৪ নভেম্বর তারিখে বিএসএফ’র হাতে আটক হয় তারা। দীর্ঘদিন বাড়ী না ফেরায় উৎকন্ঠায় মানবেতর জীবন যাপন করছে ৭ বন্দির পরিবার। দীর্ঘদিন না জানলেও সম্প্রতি এক গোপন মাধ্যমে তাদের আমপাতি থানায় আটক থাকার কথা জানা যায়।
জানা গেছে, কুড়িগ্রাম জেলার চিলমারী, রৌমারী ও রাজিবপুর উপজেলা মিলে মোট ৭ জন জেলে গত বছরের ৩ নভেম্বর তারিখে রাজীবপুর উপজেলার জিঞ্জিরাম নদী হয়ে নদীপথে ভারতের অংশে প্রবেশ করে। এসময় অনুপ্রবেশের দায়ে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফ তাদের আটক করে হাজতে দেয়। দীর্ঘদিন তাদের খোঁজ না থাকায় ওই ৭ জেলের পরিবার পরিজন দিন-রাত উৎকন্ঠা নিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করে আসছে।
সম্প্রতি ভারতের আমপাতি জেলার মাহিন্দগঞ্জ থানার তুরা মেঘালয় এলাকার এক বাসিন্দার মাধ্যমে হাজতি এক জেলে গোপনে পরিবারের কাছে চিঠি লেখে। মীর জাহান আলী নামে ওই জেলের পাঠানো চিঠির মাধ্যমে পরিবারের কাছে বন্দি জেলেদের সন্ধান মেলে। আটক জেলেরা হলেন, চিলমারী উপজেলার হরিনেরবন্দ এলাকার মৃত আবুল হোসেনের ছেলে রাসেল মিয়া (৩৫), রমনা ব্যাপারী পাড়া এলাকার বাহাদুর মিয়ার ছেলে বিপ্লব মিয়া (৪৫), শামছুল হকের ছেলে মীর জাহান আলী (৪৫), মৃত এছাহক আলীর ছেলে বকুল মিয়া (৩২), পকের আলীর ছেলে আমির আলী (৩৫), রাজিবপুর উপজেলাধীন বালিয়ামারী ব্যাপারীপাড়ার জরিপ উদ্দিনের ছেলে আঙ্গুর হোসেন (২০) ও রৌমারী উপজেলাধীন যাদুরচর বকবান্ধা এলাকার ছলিম উদ্দিনের ছেলে চাঁন মিয়া (৬০)।
এদিকে গোপনে স্ত্রীকে পাঠানো মীর জাহান আলীর চিঠির মাধ্যমে জানা যায়, বর্তমানে তারা মেঘালয়ের কালাইর চর পেট্রোল থানা আমপাতিতে রয়েছেন। চলতি মাসে তাদেরকে হাজত থেকে ছাড়িয়ে নিতে না পারলে তাদের স্থায়ী সাজা দেয়া হবে।এদিকে হাজতে আটক জানার পর থেকে জেলে পরিবার গুলো উৎকণ্ঠতায় দিন কাটাচ্ছে।
আটক জেলেদের পরিবারের সদস্যরা জানান, গত বছরের ৩ নভেম্বর ভারতে মাছ ধরার উদ্দেশ্যে বাড়ী থেকে বেড়িয়ে পড়েন ওই সাত জেলে। এরপর থেকে তাদের কোন সন্ধান পাওয়া যাচ্ছিল না। সম্প্রতি ভারতের আমপাতি জেলার মাহিন্দগঞ্জ থানার তুরা মেঘালয় এলাকার এক বাসিন্দার মাধ্যমে গোপনে পাঠানো চিঠির মাধ্যমে তাদের সন্ধান মেলে।
ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্যরা আরো জানান, তাদের সন্ধান পাওয়ার পর চেয়ারম্যান, ইউএনও ও ডিসি মহোদয়ের কাছে লিখিতভাবে জানিয়েছেন। জেলেদের হাজত থেকে ছাড়িয়ে আনতে তারা আশ্বাস দিয়েছেন। অতি দ্রুত তাদেরকে পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দিতে আটক জেলেদের পরিবার আকুতি জানায়।
স্থানীয় ইউপি সদস্য রুকুনুজ্জামান স্বপন বলেন, হাজতে আটক ব্যাক্তিরা সকলে পেশায় জেলে। তারা দীর্ঘদিন ধরে বৈধভাবে ভারতে গিয়ে মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করে আসছে। রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর তারা বৈধভাবে যেতে না পারায় অবৈধভাবে মাছ ধরতে গিয়ে বিএসএফ’র হাতে আটক হন।
রমনা মডেল ইউনিয়নের চেয়ারম্যান গোলাম আশেক আঁকা বলেন, ভারতীয় হাজতে আটক জেলেরা রাজীবপুর উপজেলার জিঞ্জিরাম নদীর সীমান্ত এলাকা থেকে আটক হয়েছে। আমরা ভুক্তভোগীদের যাবতীয় সহযোগীতার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।
চিলমারী উপজেলা নির্বাহী অফিসার সবুজ কুমার বসাক জানান, বিষয়টি আমাদের হাতে নেই। জেলেদের হাজত থেকে ছাড়িয়ে আনার ব্যাপারে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে লিখিত ভাবে জানানো হয়েছে।