ঢাকা
২৬শে মে, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
রাত ১২:৪৮
logo
প্রকাশিত : জানুয়ারি ২৬, ২০২৫

পোষ মেনেছে বিলুপ্তপ্রায় বন্যপ্রাণি সজারু

টাঙ্গাইল প্রতিনিধি: ভালোবাসার মানবিক অনুভূতি ও আবেগকেন্দ্রীক অভিজ্ঞতা এবং উদারতা, সহানুভূতি, স্নেহ এবং বিপরীতের ভালোর জন্য নিঃস্বার্থ-উদ্বেগ প্রকাশে যেমন প্রস্ফূটিত হয়। তেমনই বিশেষ কোন মানুষ বা প্রাণির জন্য স্নেহের শক্তিশালী বহিঃপ্রকাশও ঘটে। মানুষ ও প্রাণির এমনই এক ভালোভাসার অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে টাঙ্গাইলের ঘাটাইল উপজেলার সন্ধানপুর ইউনিয়নের কুশারিয়া গ্রামের বাসিন্দা ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চালক লিটন মিয়া।

লিটন মিয়ার অকৃত্তিম ভালোবাসায় সাড়া দিয়ে কুড়িয়ে পাওয়া বিলুপ্তপ্রায় বন্যপ্রাণি সজারু পোষ মেনেছে। কুড়িয়ে পাওয়া বন্য সজারুটির তাঁর ও এলাকার লোকজনেরও দারুণ সখ্যতা গড়ে ওঠেছে। প্রাণিটি দিনরাত লোকালয়ে ইচ্ছেমতো ঘুরে বাড়ির এদিক-সেদিক দৌঁড়ে বেড়াচ্ছে। প্রায় ১১ মাস আগে রমজানের পঞ্চম রাতে ঘাটাইল-সাগরদদিঘী স্থানিক সড়কে কুড়িয়ে পেয়ে কুশারিয়ায় নিজের বাড়িতে আনার পর থেকে সজারুর ছানাটিকে পরম যত্নে লালন-পালন করছেন ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চালক লিটন। ভালোবাসা পেয়ে বর্তমানে প্রাণিটি অবিশ্বাস্য পোষ মেনে পরিবারের সদস্যের মতো বসবাস করছে।

ঘাটাইলের সন্ধানপুর ইউনিয়নের কুশারিয়া গ্রামে লিটনের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, বাড়ির এপার-ওপার দৌঁড়ে বেড়াচ্ছে সজারুর ছানা। কেউ চলার পথে বাধা দিলে পুরো শরীরের কাঁটাগুলো মেলে ধরছে। আদরে গায়ে হাত বুলিয়ে দিলে আনন্দ পাচ্ছে। প্রতিদিন দুপুর ও বিকালে গর্ত থেকে বের হয়ে বাড়ির আশপাশে ঘুরে বেড়াচ্ছে। প্রাণিটি দেখতে উৎসুক জনতা লিটনের বাড়িতে ভিড় করছে। কুড়িয়ে পাওয়া বন্য সজারু ছানাটির নাম রেখেছেন ‘পাগলা’।

ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চালক লিটন মিয়া বলেন, ‘পাগলা’ বলে ডাক দিলে সজারুটি খাবারের জন্য ছুটে আসে। পেছন পেছন যেতে বললে সে পোষা অন্য প্রাণির মতো সাথে সাথে চলতে থাকে। পোষ মানা সজারু ‘পাগলা’ সাধারণত কলা, আলু, ফুলকপি, বাধাকপি, পাউরুটি, ভাত, দুধ, বিস্কুট ইত্যাদি খেতে বেশি পছন্দ করে।

লিটন মিয়া জানান, প্রায় ১১ মাস আগে রমজানের পঞ্চম রাতে ঘাটাইল-সাগরদিঘী সড়কের পাশে কুশারিয়া এলাকায় একটা কলার বাগানে ভেজা পড়ে থাকা অবস্থায় সম্ভবত দুই-চারদিন বয়সের সজারুর ছানাটিকে উদ্ধার করে বাড়িতে নিয়ে আসেন। পরিবারের সদস্যরা সবাই মিলে পরিচর্যার মাধ্যমে অসুস্থ সজারু ছানাটিকে পরম যত্নে সুস্থ করে তোলা হয়। এরপর থেকে সজারু ছানাটি পরিবারের একজন সদস্য হিসেবে আনন্দে তাদের সঙ্গে বসবাস করছে। ঘরের ভেতর খড় দিয়ে থাকা ও ঘুমানোর জন্যে জায়গা তৈরি করে দিয়েছিলেন। কিন্তু সজারু ছানাটি সেখানে না ঘুমিয়ে ঘরের বাইরে একটা জায়গায় মাটির নিচে নিজেই সুরঙ্গ তৈরি করে সুন্দরভাবে বসবাস করছে।

সজারু ছানার প্রেমিক লিটন মিয়া জানান, একেবারে অল্প বয়স থেকে সজারু ছানাটি তার সংস্পর্শে থাকার সুযোগে সেও যেমন পোষ মেনেছে- ঠিক তেমনই ওটার প্রতিও এতোদিনে একটা মায়া জন্ম নিয়েছে। প্রতিদিন দুপুরে সজারু ছানাটি গর্ত থেকে বের হয়ে তার হাতে খাবার খেয়ে গর্তে চলে যায়। আবার বিকালে বের হয়ে বাড়ির ঘরে এবং আশপাশের দোকানপাটেও নির্দ্বিধায় ঘুড়ে বেড়ায়। গভীর রাত পর্যন্ত সজারু ছানাটি আশপাশে লোকালয়ে খেলাধুলা ও ছোটাছুটি করে খাবার খায়। সবার কাছে ছানাটি একটা আদরের পোষ্য প্রাণি হিসেবে কোন সমস্যা ছাড়াই বসবাস করছে।

ওই গ্রামের সাগর আহমেদ জানান, বন্যপ্রাণি সজারু ছানাটি পোষ মানার বিষয়টি আশ্চর্যজনক। এ প্রাণি তো লোকালয়ে মানুষের কাছে পোষ মানার কথা নয়। এগুলো সাধারণত পাহাড়ে গর্তে লুকিয়ে থাকে। লিটনের পরিবারে প্রাণিটি প্রাকৃতিক উপায়ে পোষ মানার বিষয়টি তাকে চরম মুগ্ধ করেছে।

বন্যপ্রাণি বিশেষজ্ঞরা জানান, বাংলাদেশে সজারুর সংখ্যা এক সময় বেশ ছিল, তবে বর্তমানে অবস্থা বিপন্ন। সজারু বাদামি, ছাই কিংবা সাদা বা মিশ্র রঙের হয়ে থাকে। শরীরে ১৪ থেকে ২৮ সেন্টিমিটার পর্যন্ত কাঁটা থাকে এবং ওজন ১০ থেকে ১৮ কেজি পর্যন্ত হতে পারে। ২০১২ সালের বন্যপ্রাণি (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইন অনুযায়ী সজারু একটি সংরক্ষিত প্রজাতি এবং এর শিকার বা হত্যা আইনগত দণ্ডণীয় অপরাধ।

টাঙ্গাইল জেলা প্রাণিসম্পদ অফিসার ডা. মো. মোস্তাফিজুর রহমান জানান, সজারু একদিকে হিংস্র ও অন্যদিকে ভীত একটি প্রাণি। মানুষ বা বনের অন্য প্রাণিদের ভীষণ ভয় পায়। অত্যন্ত ছোট অবস্থায় পেয়ে আদর-যত্ন পাওয়ায় ওটা পোষ মেনে থাকতে পারে। তবে ওটা পোষ মানার কোনো প্রাণি নয়- অটোরিকশা চালকের ক্ষেত্রে অনেকটা না মেনে নেওয়ার মতো ঘটনা ঘটেছে।

টাঙ্গাইলের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা ডক্টর আবু নাসের মোহসিন হোসেন জানান, সজারু একটি বিলুপ্তপ্রায় প্রাণি। বন্যপ্রাণি (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইন অনুযায়ী সজারু একটি সংরক্ষিত প্রজাতি এবং এর শিকার বা হত্যা আইনগত দণ্ডণীয় অপরাধ। তিনি অটোরিকশা চালকের বাড়িতে লোক পাঠিয়ে সজারুটিকে এনে বনে অবমুক্ত করার ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন। ওটা তিনি কোনোভাবেই লালন-পালন বা পোষা প্রাণির মতো নিজের নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারেন না।

সর্বশেষ
logo
প্রকাশকঃ অধ্যাপক ড. জোবায়ের আলম
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদকঃ তাপস রায় সরকার
মোবাইল: +৮৮০ ১৭৩৬ ৭৮৬৯১৫
কার্যালয় : বিটিটিসি বিল্ডিং (লেভেল:০৩), ২৭০/বি, তেজগাঁও (আই/এ), ঢাকা-১২০৮
মোবাইল: +880 2-8878026, +880 1736 786915, +880 1300 126 624
ইমেইল: tbtbangla@gmail.com (online), ads@thebangladeshtoday.com (adv) newsbangla@thebangladeshtoday.com (Print)
বাংলাদেশ টুডে কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি ও বিষয়বস্তু অন্য কোথাও প্রকাশ করা বে-আইনী।
Copyright © 2025 The Bangladesh Today. All Rights Reserved.
Host by
linkedin facebook pinterest youtube rss twitter instagram facebook-blank rss-blank linkedin-blank pinterest youtube twitter instagram