শাহজাহান হেলাল, মধুখালী (ফরিদপুর) প্রতিনিধি: অদম্য মেধাবী প্রান্তি বিশ্বাসের পিতা পেশায় একজন কাঠ মিস্ত্রী, মা গৃহিণী। এক ভাইসহ চারজনের পরিবার। বড় ভাই একটি কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে ডিপ্লোমা শেষ করে বেকার রয়েছে। বাবার একার আয়ে দু’ভাই বোনের পড়ালেখা ও পরিবারের খরচ চলে। পাশাপাশি মা মুড়ি ভেজে বাবাকে একটু সহযোগিতা করছেন।
ধারদেনা করে দু’ভাইবোনকে পড়াশোনা করিয়েছেন রমেন চন্দ্র বিশ্বাস ও চঞ্চলা বিশ্বাস দম্পতি। অভাব ও টানাপোড়েনের সংসার থাকার পরেও মেয়ে মেডিকেলে ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছে। তবে এই মেধাবী প্রান্তি বিশ্বাস মেডিকেলে চান্স পেয়েও তার পরিবার ভর্তির টাকা জোগাড় করতে হিমশিম হয়ে পড়ছে।
অদম্য মেধাবী প্রান্তি বিশ্বাস ফরিদপুর জেলার সদর উপজেলা কৃষ্ণনগর ইউনিয়নের হাট গোবিন্দপুর গ্রামের কাঠ মিস্ত্রী রমেন বিশ্বাস ও চঞ্চলা বিশ্বাস দম্পতির মেয়ে। নিম্ন পরিবারের সন্তান হয়েও আকাশ সমান স্বপ্ন বাস্তবায়ন করেছেন এ অদম্য মেধাবী শিক্ষার্থী। হাট গোবিন্দপুর প্রাইমারি স্কুল থেকে তিনি প্রাথমিক শিক্ষায় জিপিএ-৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হন। এরপর ২০২২ সালে কানাইপুর বেগম রোকেয়া কিশলয় বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পরিক্ষায়ও জিপিএ-৫ পেয়ে সাফল্য অর্জন করে। ফরিদপুর সারদা সুন্দরী কলেজ থেকে ইন্টারমিডিয়েটেও জিপিএ-৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়। প্রান্তি বিশ্বাস অত্যন্ত মেধাবী হওয়ায় কানাইপুর বেগম রোকেয়া কিশলয় বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক চঞ্চল দত্ত তার নিজেস্ব অর্থ দিয়ে ফরিদপুর উন্মেষ নামে একটি কোচিং সেন্টারে ভর্তি করান। সেখানে পাঠদান করে প্রথম বার পরীক্ষা দিয়ে ফরিদপুর মেডিকেলে উত্তীর্ণ হয়। তবে মেধাবী শিক্ষার্থীর স্বপ্ন বাঁধাগ্রস্থে টাকায় যেন কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাই তিনি ও তার পরিবার সরকারি সুযোগ সুবিধা ও বিত্তবানদের এগিয়ে এসে সহযোগিতার হাত বাড়ানোর আহবান জানান।
মেধাবী প্রান্তি বিশ্বাস বলেন, মা বাবার অভাবের সংসারে আমাকে তারা তাদের সর্বোচ্চ দিয়ে মানুষ করেছেন। আমার বাবা বিভিন্নজনের কাছ থেকে টাকা ধারদেনা করে পড়ালেখা চালাচ্ছেন। এমনকি টাকার অভাবে বাবা ও মা’র নামে পাওনাদার মামলাও দায়ের করেছেন। এখন এত কষ্ট করে স্বপ্নের দিগন্তে পা ফেলেও অনিশ্চিত ভবিষ্যতে দিন পার করছি। নুন আনতে পান্তা ফুরায় আমাদের। বাবা মাত্র ৫শ টাকা দিন আয় করেন। আবার কোন দিন কাজ বন্ধও থাকে। বাবার টাকা দিয়ে সংসার চালাতেই কষ্ট হয়। আমার পড়ালেখার খরচ কেমনে দিবে!
মা চঞ্চলা বিশ্বাস বলেন, আমার মেয়ে ছোট সময় থেকে পড়াশোনায় ভালো। সকল শ্রেণীতে প্রথম হয়েছেন। বর্তমানে সে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজে চান্স পেয়েছে। অভাবের সংসার থাকার পরও অভাব আমার মেয়েকে মেডিকেলে চান্স পাওয়া আটকাতে পারেনি। তবে ভর্তির টাকা ও সামনের পড়ালেখা খরচ নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছি।
কানাইপুর বেগম রোকেয়া কিশলয় বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় এর প্রধান শিক্ষক চঞ্চল দত্ত বলেন, প্রান্তি বিশ্বাস অনেক মেধাবী, শুধু লেখাপড়ায় না খেলাধুলায়ও জেলা চ্যাম্পিয়ন। প্রান্তি বিশ্বাসের লেখাপড়ার খরচ দিতাম। এখন সে মেডিকেলে চান্স পেয়েছে আমরা সবাই যদি একটু সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেই, তাহলে মেয়েটা সবার মুখ উজ্জ্বল করবে।