শেখ দীন মাহমুদ, পাইকগাছা (খুলনা) প্রতিনিধি: খুলনার পাইকগাছার শিবসা নদীর উপর প্রায় দু’যুগ আগে নির্মিত জনগুরুত্বপূর্ণ শিবসা ব্রিজের মাথার দু'পাশে গাইড পোস্ট না থাকায় তা মরণফাঁদে পরিণত হয়েছে। ঘণ কুয়াশা, বর্ষা মৌসুমসহ সারা বছর সামান্য অসাবধানতায় নিয়মিত ব্রীজের ঐ এলাকা থেকে পণ্যবাহী বিভিন্ন পরিবহন ছিটকে নীচে পড়ে ভয়াবহ দুর্ঘটনায় পতিত হচ্ছে। সব মিলিয়ে সেতুটি এখন রুপ নিয়েছে মরণফাঁদে।
পাইকগাছা পৌরসদরের পুরানো পরিবহন কাউন্টার থেকে আদালত চত্বরের সামনে দিয়ে সোলাদানা ইউনিয়ন অভিমুখে শিবসা নদীর উপর ব্রিজটি দিয়ে প্রতিদিন স্কুল, কলেজের ছাত্র-ছাত্রীসহ বিস্তীর্ণ জনপদের হাজার হাজার মানুষের পাশাপাশি প্রতিদিন পণ্যবাহী ট্রাক, পিকআপ, মাইক্রো, প্রাইভেট, বাসসহ নসিমন-করিমন, ট্রলি ও শত শত মোটরসাইকেল চলাচল করে। তাছাড়া এ ব্রিজটি দিয়ে সোলাদানা থেকে ট্রলার যোগে দারুনমল্লিক হয়ে দ্রুত সময়ের মধ্যে খুলনা যাওয়ার অন্যতম মাধ্যম। এছাড়া সোলাদানাসহ বিস্তীর্ণ অঞ্চলের বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি প্রকল্পের পণ্যবাহী বাস, ট্রাক, ট্রলিসহ বিভিন্ন যানবাহন চলাচল করে এ সড়কে। যার একমাত্র মাধ্যম এই ব্রীজ।
প্রায় দু’যুগ আগে নির্মিত ব্রীজটিতে পাইকগাছা অভিমুখে ওঠা-নামার জন্য ব্রীজের কোন গাইড পোস্ট নেই। এতে করে ব্রিজের উপর ওঠার সময় প্রায়ই মালবাহী বিভিন্ন গাড়ি ও যানবাহন উল্টে দুর্ঘটনার মুখে পতিত হয়। এছাড়াও ব্রীজের নীচ দিয়ে পাইকগাছা মৎস্য আড়ৎ থেকে লতা ইউনিয়ন অভিমুখে একটি রাস্তা প্রবাহিত। এ রাস্তা দিয়েও প্রতিদিন স্কুল, কলেজ পড়ুয়া ছাত্র-ছাত্রীসহ শত শত লোকের চলাচল। উপরে ব্রীজের গাইড পোস্ট না থাকায় তারা যেমন ঝুঁকির মুখে চলাচল করছেন তেমনি, নীচের সড়কের যাত্রী সাধারণও উপরের কারণে ঝুঁকি নিয়ে রাস্তায় চলাচল করছেন।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ব্রিজটির উপরে ওঠা-নামার এ্যপ্রোচ সড়কটি অপেক্ষাকৃত অনেক নিচু হওয়ায় গাইড পোস্ট জরুরি। অন্যথায় ব্রিজে ওঠার মুখে উপরের কোন বাহন দেখতে না পাওয়ায় প্রায়ই আকষ্মিক মুখোমুখি অবস্থানে পৌছায়। এসময় ব্রেক চেপে না সেখানে দাঁড়ানো যায়, না নিচে নামা যায়। এমন পরিস্থিতিতে প্রায়ই সেখান থেকে পণ্যবাহী গাড়ি গড়িয়ে পড়ে নীচের ঢালু এলাকায়। সর্বশেষ এর ধারাবাহিকতায় গত ৬ জানুয়ারী (সোমবার) সকালে ইটবাহী একটি ট্রলি উল্টে পড়ে ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। স্থানীয়রা জানান, ট্রলিটি উল্টে পড়ে স্লোপের গাছে আটকে যাওয়ায় নীচের রাস্তায় চলাচলকৃত মানুষগুলোর জানমাল রক্ষা পেয়েছে। তারা বলেন, প্রতি মাসে অন্তত পাঁচ/সাতটি এমন দুর্ঘটনার ঘটে সেখানে।
এ বিষয়ে ব্রিজ সংলগ্নে পৌরসভার ৬ নং ওয়ার্ডের বাতিখালী পূর্বপাড়া জামে মসজিদের সভাপতি এম জালাল উদ্দীনসহ স্থানীয় এলাকাবাসী জানান, প্রায় দু’ যুগ আগে নির্মিত শিবসা ব্রিজটির প্রথম থেকেই কোন গাইড পোস্ট নেই। তাছাড়া সংযোগ সড়ক থেকে ব্রিজটি অপেক্ষাকৃত উঁচু হওয়ায় ওঠা-নামা করতে প্রায়ই মালবাহী বিভিন্ন যানবাহন দুর্ঘটনার কবলে পড়ে।
এ বিষয়ে পৌরসভার ৬ নং ওয়ার্ড সাবেক কাউন্সিলর কামাল আহমেদ সেলিম নেওয়াজ জানান, দীর্ঘদিন ব্রিজের দু পাশে গাইড পোস্ট না থাকায় প্রতিনিয়ত গাড়ি উল্টে পড়ার ঘটনা ঘটছে, যা অত্যন্ত দুখজনক। তিনি এ ব্যাপারে জরুরি ভিত্তিতে পদক্ষেপ গ্রহনের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি কামনা করেন।
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মাহেরা নাজনীন জানান, গাইড পোস্ট না থাকায় দুর্ঘটনার বিষয়টি সত্যিই দু:খজনক। জনস্বার্থে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি অবহিতপূর্বক শিবসা ব্রীজের গাইড পোস্ট নির্মাণ কাজ বাস্তবায়নে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহনে তিনি চেষ্টা করবেন বলেও জানান।