ফকিরহাট (বাগেরহাট) প্রতিনিধি: বাগেরহাটের ফকিরহাট উপজেলায় ফসলের মাঠজুড়ে হলুদ সরিষা ফুলের সমারোহ। দিগন্ত জুড়ে হলুদ ফুলে স্বপ্ন বুনতে শুরু করেছে কৃষক। কৃষকের পাশাপাশি সৌন্দর্য উপভোগ করতে আসছেন বিভিন্ন বয়সী মানুষ। উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, ফকিরহাটে গত বছরের তুলনায় বেড়েছে সরিষার চাষ। ছাড়িয়ে গেছে লক্ষ্যমাত্রাও।
সরেজমিন উপজেলার বিভিন্ন মাঠ ঘুরে কথা হয় চাষিদের সঙ্গে। তারা জানান, সরিষার তেল ছাড়াও গবাদিপশুর খাবার হিসেবে খৈল হয়। সবুজ পাতা শাক হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। আমন ও বোরো ধান রোপণের মাঝখানে দু’তিন মাস জমি পতিত থাকে। এসময়ে তারা সরিষা চাষ করছেন। অন্যান্য ফসলের সঙ্গেও সরিষার চাষ করা যায় বলে বাড়তি আয়ের জন্য চাষিরা সরিষা চাষে ঝুঁকছেন।
ক্রমবর্ধমান সরিষা উৎপাদনের কারণে এই এলাকায় অনেকগুলো তেল উৎপাদন কারখানা স্থাপন করেছে উদ্যোক্তারা। চাহিদা অনুযায়ী চাষিরা বারি সরিষা ১৪, বারি সরিষা ১৭, বিনা সরিষা ৪, বিনা সরিষা ৯, বারি সরিষা ২০ ও টরি সরিষা চাষ করছেন।
তবে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার অফিস থেকে বারি সরিষা ১৪ চাষে উৎসাহ প্রদান করা হচ্ছে বলে জানান সংশ্লিষ্ট দপ্তর। এই জাতের সরিষার উৎপাদন কাল মাত্র ৮৫ দিন যা অন্যান্য জাতের তুলনায় প্রায় ২৫ দিন কম। ভালো ফলন ও বীজে তেলের পরিমান বেশি থাকায় এর চাহিদাও বেশি বলে জানান উপ সহকারী কৃষি কর্মকর্তা নয়ন সেন।
কৃষি অফিস জানায়, এবছর ফকিরহাটে ১৬৫০ জন চাষি ১৬৫.৫ হেক্টর জমিতে সরিষা চাষ করেছেন যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে দেড় হেক্টর বেশি। গত ২০২৩-২৪ অর্থবছরে সরিষা আবাদ হয়েছিল ১৬৩ হেক্টর। সে হিসেবে গত বছরের তুলনায় এবছর আড়াই হেক্টর বেশি সরিষার আবাদ হয়েছে। উপজেলার ৮ ইউনিয়নের মধ্যে ফকিরহাট সদর ইউনিয়নে সরিষার আবাদ সবচেয়ে বেশি। এই চাষে উপজেলার ৩৫০ জন কৃষককে বীজ ও সার প্রদান করা হয়েছে। এছাড়া ২০০ জন চাষি পেয়েছে প্রণোদনা।
চাষি গনেষ চন্দ্র পাল জানান, কৃষি অফিস থেকে বীজ ও সার পেয়ে তিনি আমন ও বোরো ধান চাষের মধ্যবর্তী সময়ে প্রথমবার ৫০ শতক জমিতে বারি-১৪ জাতের সরিষা চাষ করেছেন। অপর চাষি মোস্তফা সেখ ৩০ শতক জমিতে বারি-১৪ ও ১০ শতক জমিতে টরি সরিষা চাষ করেছেন। আবহাওয়া অনুকূল হওয়ায় ভালো ফসল হয়েছে। হলুদ ফুলে ভরে গেছে খেত।
ফকিরহাট বারাকা অয়েল মিলের মালিক মাও. আলামিন জানান, বর্তমানে সাদা ও লাল সরিষার বাজার দর ৩ হাজার ২০০ থেকে ৩ হাজার ৮০০ টাকা মণ। আগের চেয়ে সরিষার চাষ বেড়েছে। আশা করছি নতুন সরিষা উঠলেও দাম ভালো পাবেন।’
ফকিরহাট উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ শেখ সাখাওয়াত হোসেন জানান, দাম ও চাহিদা বেশি থাকায় গত বছরের তুলনায় চলতি মৌসুমে সরিষার চাষ বেড়েছে। কৃষি অফিস চাষিদের সঙ্গে নিবিড় যোগাযোগ রাখছে। অনেক চাষি নতুন করে সরিষা চাষে আগ্রহ প্রকাশ করছেন।