এস আই মল্লিক, ঝিনাইদহ: উদ্বোধনের পর থেকেই নানা সমস্যার মধ্যে শিশুদের সেবা দিয়ে চলেছে ঝিনাইদহ ২৫ শয্যা সরকারি শিশু হাসপাতালটি। অর্থের অভাবে হাসপাতাল চত্বরে আবাদ করা কলা বিক্রির টাকা ও অনুদানে চলে চিকিৎসা সেবা। সরকারি উল্লেখযোগ্য কোন বরাদ্দ না থাকায় চিকিৎসা সেবায় প্রয়োজনীয় যে কোন জিনিস কিনতে হয় অনুদানের টাকায়।
২৫ শয্যার সরকারি এ শিশু হাসপাতালটিতে প্রতিদিন গড়ে ৬০ জনের বেশি রোগী চিকিৎসা সেবা নিয়ে থাকেন।
হাসপাতালে চিকিৎসকের পদ আছে পাঁচটি। চিকিৎসা সেবা দিচ্ছেন তিনজন। ফার্মাসিস্ট, মেডিকেল টেকনোলজিস্ট, মেডিকেল টেকনোলজিস্ট (রেডিওগ্রাফি), প্রধান সহকারী কাম হিসাবরক্ষক, অফিস সহকারী কাম ডাটা এন্ট্রি অপারেটর ও স্টোরকিপারের পদ খালি। এছাড়া ২১ নার্স পদের বিপরীতে আছেন ১৭ জন। এমএলএসএস, ওয়ার্ড বয়, আয়া, মালি, নিরাপত্তাপ্রহরী ও পরিচ্ছন্নতাকর্মীর কোন পদই নেই। তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির এ পদগুলো না থাকলেও নিয়োগকৃতদের বেতন হয় অনুদানের টাকায়।
যশোরের কিছু ব্যবসায়ী, কয়েকজন চিকিৎসক এবং আলী হাসান ফরিদের একাধিক বন্ধুর সহয়তায় শয্যা, যন্ত্রপাতি ও জনবল দিয়ে সহায়তা করছেন। ঝিনাইদহ পৌরসভা এবং জাহেদি ফাউন্ডেশন নিয়মিত সহায়তা করে। এ ছাড়া ১৫ জন হৃদয়বান ব্যক্তি কিছু সহায়তা দেন। এছাড়া হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের অক্সিজেন ও ওষুধের যে চাহিদা তার অর্ধেকও বরাদ্দ নেই সরকারের।
২০০৫ সালের ৭ই মে ঝিনাইদহ জেলা শহরের টার্মিনাল এলাকায় ২৫ শয্যা বিশিষ্ট বাংলাদেশের প্রথম সরকারি এ শিশু হাসপাতালের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া। রাজনৈতিক বেড়াজালে আটকে বছরের পর পর বন্ধ থাকে হাসপাতালটি। নানা চড়াই উৎরাই পেরিয়ে ২০২১ সালের ৯ জানুয়ারি থেকে হাসপাতালটি তার সেবা কার্যক্রম শুরু করে।
হাসপাতালের চিকিৎসক ও নার্সদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, উদ্বোধনের পর হাসপাতালে কোন সরঞ্জাম না থাকায় কনসালট্যান্ট আলী হাসান ফরিদ তার বাসা থেকে ব্যক্তিগত কম্পিউটার নিয়ে আসেন। ওই কম্পিউটার হাসপাতালের কাজে ব্যবহার করেন এবং শিশুদের চিকিৎসা ও মায়েদের পরামর্শ দেন। এভাবে আস্তে আস্তে হাসপাতালটি আশপাশের এলাকার মানুষের কাছে সুনাম অর্জন করেছে। মানুষ এখন এ হাসপাতালের চিকিৎসা সেবাই আস্থাও রাখেন। কিন্তু সিভিল সার্জন কার্যালয় বা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের হাসপাতালটির ওপর কোন নজর নেই। যে কারণে হাসপাতালের কর্মকর্তারা বারবার অনুরোধ করেও জনবল, যন্ত্রপাতি ও অর্থসহায়তা পান না।
সরেজমিন শিশু হাসপাতালে গিয়ে দেখা গেছে, প্রথমে বড় একটি প্রবেশ গেট, ভিতরে প্রবেশ করলে চারপাশে নানা ধরণের ফুলের বাগান। এর সামনে লাল ইটের দোতলা ভবন। হাসপাতাল চত্বরটি খুবই পরিপাটি করে সাজানো। ভবনের ভেতরে প্রবেশ করে বিভিন্ন ওয়ার্ডে গিয়ে দেখা গেল, পর্যাপ্ত শয্যা আছে। শয্যাগুলোর গায়ে লেখা, কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান সেগুলো দান করেছেন।
কালীগঞ্জ উপজেলা থেকে আসা একজন নারী বলেন, আমার ১৮ মাসের শিশুর শ্বাসকষ্ট হলে প্রথম উপজেলা হাসপাতালে গিয়েছিলেন। সেখান থেকে এখানে আসার পরামর্শ দেওয়া হয়। এখানে এসে সন্তান অনেকটা ভালো আছে।
হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা রোগ ও স্থানীয়রা জানান, দীর্ঘদিন পর চালু হলেও নানা সংকট রয়েছে হাসপাতালটিতে। দেশের একমাত্র সরকারি শিশু হাসপাতাল হওয়া সত্ত্বেও নেই পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য কোনো ল্যাব। যে কারণে হাসপাতালে ভর্তি থাকার পরও বাড়তি টাকা খরচ করে বাইরে থেকে পরীক্ষা করতে হচ্ছে। এতে ভোগান্তির পাশাপাশি বাড়তি টাকা খরচ হচ্ছে। তাই দ্রুত হাসপাতালটিতে পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য ল্যাব চালু করার দাবি রোগীর স্বজনদের।
কনসালট্যান্ট আলী হাসান ফরিদ বলেন, হাসপাতালে নানা সমস্যা নিয়ে চিকিৎসা নিতে আসা শিশুদের জন্য বছরজুড়ে কৃত্রিম অক্সিজেনের দরকার হয়। এতে বছরে প্রায় সাড়ে তিন লাখ টাকার অক্সিজেন লাগে। সরকারের কাছ থেকে সর্বোচ্চ দেড় লাখ টাকা পাওয়া যায়। হাসপাতালের পড়ে থাকা তিন বিঘার মতো জমিতে কলা চাষ করা হয়। কলা বিক্রি করে গত বছর আশি হাজার টাকার অক্সিজেন কিনেছেন। এ বছরও তাই করতে হবে। এছাড়া হাসপাতালে রাতের নিরাপত্তার জন্য লাইট ও অন্যান্য জিনিসপত্র কলা বিক্রির টাকা দিয়েই কিনতে হয়। এছাড়া ওষুধ, অক্সিজেন এ তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীদের বেতন ভাতা দিতে হয় অনুদানের টাকায়। জনবল ও অন্যান্য সহযোগিতার জন্য সিভিল সার্জন এবং স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হাসপাতাল শাখায় অনেকবার আবেদন জানিয়েছেন। কিন্তু কাজ হয়নি, বলছিলেন কনসালট্যান্ট আলী হাসান ফরিদ।