মিঠাপুকুর (রংপুর) প্রতিনিধি: আমার অতো চাওয়া পাওয়া নাই। মিঠাপুকুরে এমনো লোক আছে দিনে ১০ থেকে ২০ হাজার টাকা ইনকাম করে। আমিতো তার কাছে চেয়ে টাকা নেইনি। ঘর বরাদ্দ পাওয়ার পর ওই মহিলা খুশি হয়ে দুই দফায় বিশ হাজার টাকা চা খাওয়ার জন্য দিছলো। আমি কাজ করে দেই জন্যই অনেকে খুশি হয়ে এক দুই হাজার টাকা চা খাওয়ার জন্য এমনি দেয়। এভাবেই আশ্রয়ন প্রকল্পের ঘর বরাদ্দ দেয়ার নামে ঘুষ গ্রহণের কথা অকপটে এ প্রতিবেদককে বলছিলেন মিঠাপুকুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার কার্যালয়ের অফিস সহকারী (কাম-কম্পিউটার অপারেটর) মো. রায়হান মিয়া।
অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, উপজেলার বাতাসন লতিবপুর গ্রামের মৃত. রজব উদ্দিনের স্ত্রী কহিনুর বেগম ও তার ছেলের স্ত্রী বানেছা বেগম গৃহহীনদের জন্য আশ্রয়ন প্রকল্পের ঘর বরাদ্দ চেয়ে গত বছরের ১০ আগস্ট উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবর দুইটি আবেদন করেন। দীর্ঘদিন পর হঠাৎ মিঠাপুকুর ইউএনও অফিস সহকারী রায়হান আবেদন কপি থেকে ভুক্তভোগী বিধবা মহিলা কহিনুরের নাম্বার নিয়ে আবেদন খরচের কথা বলে দুই দফায় ৫ হাজার টাকা ঘুষ গ্রহণ করেন। এরপর কহিনুর ও বানেছা বেগম ঘর বরাদ্দ পেয়েছে এই কথা জানিয়ে দুইটি ঘরের কথা বলে দুই দফায় আরো ২০ হাজার টাকা ঘুষ গ্রহণ করেন।
এদিকে দীর্ঘদিন পর উপজেলার রাণীপুকুর ইউনিয়নের ভক্তিপুর আশ্রয়ন প্রকল্পে ঘর বরাদ্দ পায় বিধবা কহিনুর বেওয়া(৭০)। কিন্তু ঘরে উঠার আগেই আশ্রয়নের প্রকল্পের আশেপাশের স্থানীয় ব্যক্তিরা ঘর দখল করে নেয়ায় ঘরে উঠা হয়নি এই বিধবার। একদিকে সুূদ কারবারির কাছে নেয়া টাকার সুদের চাপ অন্যদিকে বরাদ্দ পাওয়া ঘরে উঠতে না পাওয়ায় টাকা ফেরত পেতে চাপ দেয়ার পর স্থানীয় এক নেতার মধ্যস্থতায় ১৩ হাজার টাকা ফেরত পেলেও বাকি ১২ হাজার টাকা ফেরত পেতে দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন বিধবা এই বৃদ্ধা নারী।
রাণীপুকুর ইউনিয়ন ভূমি অফিসের তৌসিলদার মেহফুজ আল রেজা জানান, এসিল্যান্ড স্যারের নির্দেশে রাণীপুকুর ইউনিয়নের ভক্তিপুর আশ্রয়ন প্রকল্পে বৃদ্ধা কহিনুরকে ঘরে উঠিয়ে দেয়ার জন্য গিয়েছিলাম। কিন্তু আমি যাওয়ার পর সেখানে বসবাসকারীরা ঘর তালাবদ্ধ করে চলে যাওয়ায় অবৈধ বসবাসকারী চিহ্নিত করে ঘর বরাদ্দ দেয়া সম্ভব হয়নি।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত রায়হান মিয়া জানান, ২৫ হাজার টাকা নেইনি। ঘর বরাদ্দ পাওয়ার পর ওই মহিলা খুশি হয়ে ২০ হাজার টাকা দিয়েছিলো চা খাওয়ার জন্য। চেয়ারম্যান মেম্বারেরা তো একটা করি ঘরের জন্য ৩০/৪০ হাজার করি টাকা নিছে। ওই মহিলা ঘরে উঠতে না পারায় স্থানীয় এক নেতার মধ্যস্ততায় ১৩ হাজার টাকা ফেরত দিয়েছি। তার সঙ্গে আমার আর কোন ঝামেলা নাই।
মিঠাপুকুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) বিকাশ চন্দ্র বর্মণ জানান, আশ্রয়ন প্রকল্পের আওতায় মিঠাপুকুর উপজেলায় বার শতাধিক ভূমিহীনকে ঘর বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। আরো ৩৪০ জন ভূমিহীনকে ঘর বরাদ্দ দেয়ার কাজ চলমান রয়েছে। আশ্রয়ন প্রকল্পের ঘর বরাদ্দ দেয়ার নামে ঘুষ গ্রহণের কোন সুযোগ নেই। এ বিষয়ে অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।