সাড়ে আট হাজার কিলোমিটার এদিক ওদিকে ২৪ ঘণ্টার ব্যবধানে ঘটে গেল দুটো ঘটনা।
এক. তাওহিদ হৃদয়ের শাস্তি নিয়ে তিনবার বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) সিদ্ধান্ত বদল। আগের দুবারের সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসে শেষমেশ তামিম ইকবালের নেতৃত্বে ক্রিকেটারদের চাপে বিসিবির নতি স্বীকার এবং হৃদয়ের এক ম্যাচের নিষেধাজ্ঞা পিছিয়ে দেওয়া হয় এক বছর।
দুই. স্প্যানিশ ফুটবলে কোপা দেল রের ফাইনালে শনিবার রাতে মুখোমুখি হয়েছে বার্সেলোনা ও রিয়াল মাদ্রিদ। তবে সেই ম্যাচের আগে রেফারিকে ঘিরে হয়ে গেল ধুন্ধুমার কাণ্ড। এই ম্যাচের রেফারি রিকার্দো দে বুর্গোস বেনগোচেয়াকে নিয়ে মাদ্রিদ টিভি ৭ মিনিটের দীর্ঘ এক প্রতিবেদন প্রকাশ করে, যেখানে খলনায়কের রূপ দিয়ে দেওয়া হয় তাকে। এরপর সংবাদ সম্মেলনে তিনি এবং তার পরিবারের দুঃসহ যন্ত্রণার বর্ণনা দিতে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন। তিনি জানান, স্কুলে তার সন্তানকে সহপাঠীরা বলেছে, তোমার বাবা চোর!
রিয়ালের টিভি চ্যানেলে অভিযোগ করা হয়, এই রেফারি পক্ষপাতদুষ্ট। রিয়ালের বিপক্ষে বাঁশি বাজান। তাকে ম্যাচ পরিচালনার দায়িত্ব দিলে রিয়াল না-ও খেলতে পারে। স্প্যানিশ ফুটবল রেফারি অ্যাসোসিয়েশন এই হুমকিতে ভীত না হয়ে বরং একজোট হয়ে রিয়ালের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নেয়। এরপরই সব উত্তেজনায় পানি ঢেলে রিয়াল শেষাবধি খেলতে রাজি হয়। এক্ষেত্রে পেশাদারত্বের পরিচয় দিয়ে লা লিগা কর্তৃপক্ষ রেফারি রিকার্দো বুর্গোসকে দিয়েই ম্যাচ পরিচালনার সিদ্ধান্তে অটল থাকে এবং রিয়াল সুবোধ বালকের মতো বাধ্য হয় খেলতে।
ভেবে দেখুন, এমন সমস্যায় যদি বিসিবি পড়ত, তাহলে কী হতো। তারা নতজানু নীতি গ্রহণ করে হয়তো ‘দিনকে রাত আর রাতকে দিন করে দিত।’ হাকিমও নড়তেন, হুকুমও নড়ত।
সে নাটক তাওহিদ হৃদয় ইস্যুতে মঞ্চস্থ করেছে বিসিবি। হৃদয়ের শাস্তি নিয়ে বিসিবির দুইমুখো নীতিকে ‘হাস্যকর’ বলেছিলেন তামিম ইকবাল। এখন দেখা যাচ্ছে, মোহামেডান অধিনায়ক হৃদয়ের এক ম্যাচের নিষেধাজ্ঞা এক বছর পিছিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত তারচেয়েও বেশি হাস্যকর। এক মৌসুমের অপরাধের শাস্তি আরেক মৌসুমে দেওয়ার এমন অবাস্তব ও প্রশ্নবিদ্ধ সিদ্ধান্ত শুধু বিসিবিই নিতে পারে। স্প্যানিশ ফুটবলকে দেখে কি তারা শিখতে পারেন না যে, অন্যায়ের কাছে মাথা নত না করার সাহসিকতাই হলো পেশাদারত্ব? হাকিম নড়লেও হুকুম নড়বে না যেখানে!
ঢাকা প্রিমিয়ার লিগের আগামী মৌসুমে যদি তাওহিদ হৃদয় মোহামেডানে না খেলেন, তাহলে তার নতুন দল তার এক ম্যাচ নিষেধাজ্ঞার দায় নেবে কেন? বিসিবি বোধহয় এদিকটা ভেবে দেখেনি। যেমন বিসিবির বর্তমান পরিচালনা পর্ষদের মাথায় এই চিন্তার উদ্রেক হয়নি যে, ২৫০ কোটি টাকার বিপুল অঙ্কের অর্থ এক ব্যাংক থেকে সরিয়ে অন্য ব্যাংকে রাখলে প্রশ্ন উঠবে।