ঢাকা
২৯শে মে, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
ভোর ৫:৫১
logo
প্রকাশিত : জানুয়ারি ১৪, ২০২৫

মানিকগঞ্জের হাসপাতালে বেড়েছে শীতজনিত রোগী, বেশির ভাগই শিশু ও বয়স্ক

মনিরুল ইসলাম মিহির, মানিকগঞ্জ প্রতিনিধি: মানিকগঞ্জের হাসপাতালগুলোতে বাড়ছে শীতজনিত রোগীর সংখ্যা। জেলার ২৫০ শয্যার জেনারেল হাসপাতালের বহির্বিভাগে প্রতিদিন গড়ে তিন শতাধিক শীতজনিত রোগী চিকিৎসকের শরণাপন্ন হচ্ছেন। এছাড়া হাসপাতালের বেডে প্রতিদিন গড়ে শতাধিক শীতজনিত রোগী ভর্তি থাকছেন। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন বেশি শীতজনিত রোগী আসছে শিশু ও বয়স্করা। বেডের অতিরিক্ত ভর্তি হওয়া রোগীদের চিকিৎসাসেবা দিতে হিমশিমে পড়েছেন তারা।

জেলা হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়কের কার্যালয় সূত্রমতে, ২৫০ শয্যার জেলার জেনারেল হাসপাতালের বহির্বিভাগে প্রতিদিন গড়ে ১২০০ থেকে ১৪০০ বিভিন্ন রোগী চিকিৎসাসেবা নিতে আসেন। এদের মধ্যে ৬০ ভাগই শীতজনিত রোগী। এছাড়া নবজাতক ও শিশু ওয়ার্ডে ঠান্ডা, কাশি, ডায়রিয়া ও নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে বেশির ভাগ ভর্তি হচ্ছে শিশুরোগী। স্থান সংকুলান না হওয়ায় অনেক শিশুরোগীকে ভর্তি করা সম্ভব হচ্ছে না। বাধ্য হয়ে অনেকেই অন্যত্র প্রাইভেট ক্লিনিক কিংবা হাসপাতালে গিয়ে চিকিৎসা নিতে হচ্ছে।

গত নভেম্বর মাসের মাঝামাঝি সময় থেকে শীতজনিত রোগের প্রাদুর্ভাব বাড়তে থাকে। ওই সময় থেকে হাসপাতালের বহির্বিভাগে রোগীও বাড়তে থাকে। ডিসেম্বর মাসের পুরোটায় শীতজনিত রোগীর সংখ্যা বেশ বেড়ে যায়। বর্হিবিভাগ ও ভর্তি রোগী বাড়তে থাকে আশংকাজনক হারে।

মানিকগঞ্জ জেলা ২৫০ শয্যার জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা. এবিএম তৌহিদুজ্জামান বলেন, শীতজনিত রোগে আক্রান্ত বেশির ভাগই শিশু ও বয়স্ক। গত ডিসেম্বর মাসে বর্হিবিভাগে প্রায় ৯ হাজার শীতজনিত রোগীর মধ্যে শিশু ২ হাজার ১১২ জন ও বয়স্ক ৯৭২ জনকে চিকিৎসাসেবা দেয়া হয়। একই সময় হাসপাতালের বিভিন্ন ওয়ার্ডে ভর্তি হওয়া ডায়রিয়া, নিউমোনিয়াসহ শীতজনিত রোগে ২২৫ শিশু ও ৮৮ বয়স্ককে চিকিৎসাসেবা দেয়া হয়। আর চলতি মাসের ১৩ জানুয়ারি পর্যন্ত বর্হিবিভাগে প্রায় তিন হাজার শীতজনিত রোগীর মধ্যে ১ হাজার ৬২ জন শিশু ও ৩১৬ জন বয়স্ক জনকে চিকিৎসাসেবা দেয়া হয়। একই সময়ে ডায়ারিয়া ওয়ার্ড, শিশু ও নবজাতক বিভাগে ভর্তি হওয়ায় ৭১৫ শিশু ও ৩৮২ জন বয়োবৃদ্ধকে চিকিৎসাসেবা দেয়া হয়।

মানিকগঞ্জ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের শিশু রোগ বিশেষজ্ঞ ডা. হুমায়ুন কবির বলেন, শীতে কুয়াশা, ধুলাবালির মধ্যে ব্যাকটেরিয়া ঘুরে বেড়ায়। কুয়াশার কারণে ব্যাকটেরিয়া ওপরে উঠতে পারে না, নিচে ঘুরে বেড়ায়। শ্বাস-প্রশ্বাসের সাথে ব্যাকটেরিয়া এবং ভাইরাসগুলো খুব সহজেই মানুষের শরীরে প্রবেশ করছে। সাধারণত লোটা ভাইরাসের কারণে শিশু ও বয়স্কদের ডায়রিয়ার প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়। এছাড়া ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাস, ব্রংকোলাইটিস, ক্রনিক ব্রংকোলাইটিস ভাইরাস শিশু ও বয়স্কদের সহজেই আক্রান্ত করে। নিউমোনিয়ার কারণে যেসব ভাইরাসগুলো ঘুরে বেড়াচ্ছে, সেগুলো সহজেই শ্বাসের সঙ্গে ফুসফুসকে আক্রান্ত করছে।

জেলার ২৫০ শয্যার জেনারেল হাসপাতালের সহকারী পরিচালক ডা. বদরুল আলম বলেন, শয্যার অতিরিক্ত রোগীকে হাসপাতালের বিভিন্ন ওয়ার্ডের মেঝেতে চিকিৎসাসেবা দিতে হচ্ছে। এতে হিমশিমে পড়তে হচ্ছে চিকিৎসক ও নার্সদের। সবচেয়ে বেশি বিড়ম্বনায় পড়তে হচ্ছে ডায়রিয়া ওয়ার্ডে। নির্ধারিত ২০ বেডের অতিরিক্ত আরও ১০ থেকে ১৫জন রোগীকে মেঝেতে চিকিৎসা দিতে হয়।

গতকাল সোমবার ২৫০ শয্যার জেলা হাসপাতালের বর্হিবিভাগে চিকিৎসা নিতে আসা শীতজনিত রোগীদের দীর্ঘ লাইন দেখা যায়। লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা সদর উপজেলার কান্দরকান্দি এলাকার আনোয়ারা বেগম বলেন, সর্দি, কাশির সঙ্গে বমি হওয়ায় তিনি শিশু তানভীরকে নিয়ে এসেছেন ডাক্তার দেখাতে। তার মত আরও প্রায় ৫০ থেকে ৬০ জন রোগী টিকিট হাতে লাইনে দাঁড়িয়েছে তাদের শিশুদের চিকিৎসাসেবা নিতে। ১০-১২ জন বয়স্ক মানুষও অন্য লাইনে দাঁড়িয়ে শীতরোগের চিকিৎসা নিতে।

বর্হিবিভাগের শিশু চিকিৎসক ডা. মো: ফরিদ খান বলেন, বর্হিবিভাগে প্রতিদিন গড়ে ১৫০ থেকে ২০০ শিশু রোগী দেখেন তিনি। এদের মধ্যে বেশিরভাগই ঠান্ডা, জ্বর, কাশি, ডায়রিয়াসহ শীতজনিত রোগী। শিশুদের ঠান্ডা খাবার না খাওয়ানো, উষ্ম স্থানে রাখাসহ বিশুদ্ধ পানি পান করানো ও নাক দিয়ে পানি আসলে নরমাল স্যালাইন দিয়ে নাক পরিষ্কার করার পরামর্শ দেয়া হচ্ছে।

২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেলা হাসপাতালের সিনিয়র কনসালটেন্ট ও শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. নিলুফা পারভিন বলেন, ঠাণ্ডা, কাশি, শ্বাসকষ্ট , নিউমোনিয়াসহ শীতজনিত শিশু রোগীর সংখ্যা তুলনামুলকভাবে বেশি আসছে। এদের মধ্যে যাদের ভর্তির প্রয়োজন হচ্ছে তাদের হাসপাতালে ভর্তি রাখা হচ্ছে। কারো নিউমোনিয়া ও শ্বাসকষ্ট বেশি হলে অক্সিজেন সাপোর্ট দেয়া হচ্ছে। পাশাশি বিশেষায়িত বিভাগ আইসিও (ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিট) ও সিসিও (করোনারি কেয়ার ইউনিটি) তে রাখা হচ্ছে। এছাড়া বর্হিবিভাগে প্রয়োজনীয় ঔষধ লিখে বাসা-বাড়িতে চিকিৎসাসেবা নিতে পরমর্শ দেয়া হচ্ছে।

জেলা হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. বাহা উদ্দিন বলেন, শীতের সময় বাচ্চা ও বয়স্ক-এই দুই বয়সীদের শীতে সর্দি, কাশি, ব্রঙ্কিওলাইটিস ও এজমার প্রকোপ বাড়ে। শীতজনিত রোগীদের চিকিৎসাসেবায় হাসপাতালে অক্সিজেন, নেবুলাইজার ও এন্টিবায়োটিকসহ প্রয়োজনীয় ওষুধ বা সরঞ্জামাদি রয়েছে। কনসালটেন্ট, মেডিকেল অফিসার ও নার্স সহ নির্দিষ্ট সংখ্যক জনবলে রোগীদের প্রয়োজনীয় চিকিৎসাসেবা দেয়া হচ্ছে।

সিভিল সার্জন ডা. মোকছেদুল মোমিন বলেন, শীতজনিত রোগীর চিকিৎসায় জেলা ও উপজেলার হাসপাতালগুলোতে বিশেষ গাইডলাইন তৈরি করে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। এসব গাইডলাইনের মধ্যে হাসপাতালে রোগীদের কম্বল ব্যবহার, হাসপাতালের ভাঙা জানালা দরজা মেরামত, নেবুলাইজার মেশিন ঠিক করা, অক্সিজেন সিলিন্ডারে অক্সিজেন রাখার নির্দেশনা রয়েছে।

সর্বশেষ
logo
প্রকাশকঃ অধ্যাপক ড. জোবায়ের আলম
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদকঃ তাপস রায় সরকার
মোবাইল: +৮৮০ ১৭৩৬ ৭৮৬৯১৫
কার্যালয় : বিটিটিসি বিল্ডিং (লেভেল:০৩), ২৭০/বি, তেজগাঁও (আই/এ), ঢাকা-১২০৮
মোবাইল: +880 2-8878026, +880 1736 786915, +880 1300 126 624
ইমেইল: tbtbangla@gmail.com (online), ads@thebangladeshtoday.com (adv) newsbangla@thebangladeshtoday.com (Print)
বাংলাদেশ টুডে কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি ও বিষয়বস্তু অন্য কোথাও প্রকাশ করা বে-আইনী।
Copyright © 2025 The Bangladesh Today. All Rights Reserved.
Host by
linkedin facebook pinterest youtube rss twitter instagram facebook-blank rss-blank linkedin-blank pinterest youtube twitter instagram