রাওয়ালপিন্ডির গ্যালারিতে পাকিস্তানি দর্শকরা ‘‘বাংলাদেশ-বাংলাদেশ’’ যে স্লোগান তুলেছিল তার বিশেষ কারণ ছিল। কিছু পাকিস্তানি দর্শক তো লাল-সবুজের পতাকা উড়িয়ে শান্ত-জাকেরদের জন্য চিৎকারও করছিল। কিন্তু ২২ গজে বাংলাদেশি ক্রিকেটাররা তাদের সেই সমর্থনে সাড়া দিলেন কই!
এই ম্যাচটা পাখির চোখে পরখ করছিল পাকিস্তান। বাংলাদেশ কোনোভাবে যদি নিউ জিল্যান্ডকে হারাতে পারে তাহলে তাদের চ্যাম্পিয়নস ট্রফির আশা টিকে থাকবে। শেষ ম্যাচে তাদের একটি বড় জয় এবং ভারত নিউ জিল্যান্ডকে হারালে স্বাগতিক দল শেষ চারে। অনেক ‘‘যদি-কিন্তুর’’ সমীকরণ। তবুও আশা তো করাই যায়।
তাই তো পাকিস্তানের ২৪৭.৫ মিলিয়নের আজকের জাতীয় স্লোগান ছিল ‘‘বাংলাদেশ”। কিন্তু নিউ জিল্যান্ডের দারুণ পেশাদার ক্রিকেটে স্রেফ অসহায় বাংলাদেশ। টানা দুই ম্যাচ জিতে ভারতকে সঙ্গে নিয়ে অনায়েসে চ্যাম্পিয়নস ট্রফির শেষ চার নিশ্চিত করলো নিউ জিল্যান্ড। এই গ্রুপ থেকে বিদায়ঘণ্টা নিশ্চিত হয়ে গেল পাকিস্তান ও বাংলাদেশের।
ভারতের কাছে প্রথম ম্যাচ হেরে বাংলাদেশ দুবাইতে তিক্ত অভিজ্ঞতা পেয়েছিল। রাওয়ালপিন্ডিতে দল কেমন করে সেটাই ছিল দেখার। কিন্তু এই ম্যাচেও পারফরম্যান্সে দৈন্যতা। ব্যাটিং, বোলিং, ফিল্ডিং তিন বিভাগেই সাধারণ মানের পারফরম্যান্স। কঠিনভাবে বললে গড়পড়তারও নিচে।
আগে ব্যাটিং করে ৯ উইকেটে ২৩৬ রান করে বাংলাদেশ। নিউ জিল্যান্ড ২৩ বল হাতে রেখে ৫ উইকেটে জয় পায়। স্বল্প পুঁজি তাড়া করতে নেমে রাচিন রবীন্দ্রর সেঞ্চুরিতে কিউইরা বিজয়ের পতাকা উড়িয়েছে। অবশ্য তাকে সেঞ্চুরি পেতে সহায়তা করেছে বাংলাদেশের ফিল্ডাররাই। তাওহীদ হৃদয় তার সহজ রান আউট মিস করেছেন। মিরাজ পয়েন্টে ক্যাচ ছেড়েছেন। সেঞ্চুরির পর মাহমুদউল্লাহ তার লোপ্পা ক্যাচও মিস করেছেন। সেঞ্চুরির আগে দুই সুযোগ রাচিন কাজে লাগিয়েছেন দারুণভাবে। ১০৫ বলে ১১২ রান করেছেন ১২ চার ও ১ ছক্কায়।
এছাড়া বাংলাদেশকে প্রায় সময়ই ভোগানো টম লাথাম আরেকটি ফিফটি, ৫৫ তুলেছেন। বোলিংয়ে ভালো বিষয় তাসকিন ও নাহিদ শুরুতে নতুন বলে উইল ইয়ং ও কেন উইলিয়ামসনকে ফিরিয়েছেন। কনওয়েকে ৩০ রানে বোল্ড করেন মোস্তাফিজুর রহমান। ৭২ রানে ৩ উইকেট নিয়ে বোলিংয়ে কিছুটা লড়াইয়ের আভাস দিয়েছিল বাংলাদেশ। কিন্তু রাচিন ও লাথামের ১৩৬ বলে ১২৯ রানের জুটি ম্যাচের ভাগ্য নির্ধারণ করে দেয়। দুজনের কেউই অবশ্য জয় নিয়ে মাঠ ছাড়তে পারেনি। গ্লেন ফিলিপস ও মাইকেল ব্রেসওয়েল দলকে জয়ের বন্দরে পৌঁছে দেন।
উইকেট ছিল এক কথায় ‘হাইওয়ে পিচ’। অতি ব্যাটিংবান্ধব উইকেটকে ব্যাখ্যা করতে ব্যবহার করা হয় এই টার্ম। যেখানে বোলারদের করার থাকে সামান্য। দুহাত ভরে সুযোগ নেওয়ার সুযোগ ব্যাটসম্যানদের।
তানজিদ হাসান ও নাজমুল হোসেন শান্তর শুরুর ব্যাটিং ছিল সেরকমই। অনায়েসে শট খেলেছেন দুজনই। ছন্দে থাকা তানজিদ পেসারদের সামলে নিয়েছেন সিদ্ধহস্তে। শান্ত রান পাচ্ছিলেন না আত্মবিশ্বাসে ঘাটতি ছিল। তবে রাওয়ালপিন্ডিতে যেভাবে শুরু করেছিলেন তাতে বিশ্বাস বাড়ছিল তারও।
কিন্তু ‘হাইওয়ে পিচে’ও কিভাবে পথ ভুলতে হয় তা বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরাই দেখিয়ে দেন। ব্যাটিং অলরাউন্ডার মাইকেল ব্রেসওয়েল নিয়মিতই ২২ গজে হাত ঘুরান। বোলিংয়ে আহামরি টার্ন নেই। নেই তেমন জোশ। অথচ বাংলাদেশের টপ থেকে মিডল অর্ডার পর্যন্ত চার ব্যাটসম্যান তাকেই উইকেট বিলিয়ে দিয়ে আসেন। এমন সব নাম যাদের থেকে বড় কিছুর প্রত্যাশায় ছিল বাংলাদেশ।
ব্রেসওয়েলের প্রথম ওভারে মিড উইকেটে ক্যাচ দেন তানজিদ (২৪) । তাওহীদ (৭) উইকেট থেকে সরে ইনসাইড আউট শট খেলতে গিয়ে বৃত্তের ঠিক বাইরে ক্যাচ দেন উইলিয়ামসনের হাতে। মুশফিক (২) ও মাহমুদউল্লাহ (৪) হতাশা বাড়িয়েছেন। অহেতুক শট খেলতে গিয়ে মুশফিক ডিপ মিড উইকেটে এবং মাহমুদউল্লাহ শর্ট থার্ড ম্যান অঞ্চলে ক্যাচ দেন। এর আগে ৩৬ রানে ৪ উইকেট নিয়েছিলেন ব্রেসওয়েল। এবার ২৬ রানে ৪ উইকেট তার ক্যারিয়ার সেরা। তার ১০ ওভারে ৪৩ বলই ছিল ডট। মাঝে মিরাজও (১৩) অল্পতে হাল ছড়ে দেন। ১১৮ রানে নেই বাংলাদেশের ৫ উইকেট।
ব্যাটিং বিপর্যয়ের পর যেটা বাংলাদেশের ইনিংসে বেশি হয়, সম্মান বাঁচানোর লড়াই…। সেই চেষ্টাই করে গেছেন শান্ত, জাকের, রিশাদরা। ইনিংসের একমাত্র ফিফটি পাওয়া অধিনায়ক শান্ত ৭৭ রান করেন। ১১০ বলে ৯ চারে সাজানো ছিল তার ইনিংস। পেসার উইল রুর্কেকে উড়াতে গিয়ে মিড অনে ক্যাচ দেন বাংলাদেশের অধিনায়ক। জাকেরর ৫৫ বলে ৪৫ রানের ইনিংসটি কাটা পড়ে রান আউটে। ৩ চার ও ১ ছক্কা আসে তার ব্যাট থেকে। এছাড়া রিশাদ ২ চার ও ১ ছক্কায় ২৫ বলে ২৬ রান করে রাখেন অবদান।
ভালো শুরুর পর শেষটায় যে বিবর্ণ পারফরম্যান্সের চিত্র তার সবটুকু দায় ব্যাটসম্যানদের অহেতুক শট। সঙ্গে ডট বলের প্রবণতা। ৫০ ওভার পুরো ব্যাটিং করতে পারলেও ১৮১ বল ডট খেলেছে। পঞ্চাশ রানের জুটি আসেনি একটিও।