টানা ১২ দিনের যুদ্ধ শেষে ইরানের সঙ্গে যুদ্ধবিরতিতে পৌঁছেছে ইসরায়েল, তবে এখন দেশটি অস্ত্র ও গোলাবারুদের ঘাটতির মুখে পড়েছে বলে জানিয়েছে মার্কিন সংবাদমাধ্যম এনবিসি নিউজ।
মার্কিন প্রশাসনের অন্তত দুইজন অজ্ঞাতনামা কর্মকর্তার বরাত দিয়ে এনবিসি দাবি করেছে, ইসরায়েলের অস্ত্রভাণ্ডারে গুরুত্বপূর্ণ সরঞ্জাম এবং গোলাবারুদের সংকট দেখা দিয়েছে। আরও তিন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, কিছু নির্দিষ্ট অস্ত্রের ক্ষেত্রে ঘাটতি “বিশেষভাবে স্পষ্ট” হয়ে উঠেছে।
এই তথ্য এমন এক সময় প্রকাশ পেল যখন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায়, এবং কাতারের সহায়তায়, ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধবিরতি কার্যকর রয়েছে। যদিও এটি এখনও নাজুক পর্যায়ে রয়েছে, তথাপি রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত তা বহাল ছিল। যুদ্ধবিরতির বিষয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো প্রতিক্রিয়া জানায়নি তেহরান, বরং আগ্রাসন হলে পাল্টা জবাব দেওয়ার হুমকি দিয়েছে ইরানি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
ইসরায়েল তাদের অস্ত্রসংকট নিয়ে এখন পর্যন্ত কোনো আনুষ্ঠানিক মন্তব্য করেনি। যদিও দেশটি প্রতিবছর যুক্তরাষ্ট্র থেকে বিলিয়ন ডলারের সামরিক সহায়তা পায়, এবং ইরানের সঙ্গে চলমান সামরিক উত্তেজনার সময় যুক্তরাষ্ট্র সক্রিয়ভাবে প্রতিরক্ষা সহযোগিতা করেছে।
যুদ্ধের সূচনা ঘটে গত ১৩ জুন, যখন ইরানের বিরুদ্ধে গোপন পারমাণবিক কর্মসূচির অভিযোগ তুলে বড় ধরনের সামরিক অভিযান চালায় ইসরায়েল। ওই দিনই পাল্টা জবাবে ‘অপারেশন ট্রু প্রমিস-৩’ চালায় ইরান।
তেহরান বরাবরই পরমাণু কর্মসূচিতে সামরিক উদ্দেশ্য থাকার অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে। গত ১৮ জুন আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থা (আইএইএ)-র মহাপরিচালক রাফায়েল গ্রোসি জানান, ইরানের সক্রিয় পারমাণবিক অস্ত্র কর্মসূচির কোনো নির্ভরযোগ্য প্রমাণ তাদের হাতে নেই।
এরপর ২২ জুন যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েলের পক্ষে ইরানের তিনটি পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা চালায়, যা পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তোলে। পাল্টা প্রতিক্রিয়ায় ইরান কাতারে অবস্থিত মার্কিন আল উদেইদ বিমানঘাঁটিতে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায়। তবে কাতার ও যুক্তরাষ্ট্র দাবি করেছে, বেশিরভাগ ক্ষেপণাস্ত্র মাঝপথেই প্রতিহত করা হয়েছে এবং কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি।
আক্রমণের আগে কাতারকে বিষয়টি জানানো হয়েছিল বলেও জানান মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। যুদ্ধবিরতির মধ্যস্থতা নিয়ে তিনিই প্রথম আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেন এবং বলেন, ইরান ও ইসরায়েল যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়েছে। তবে ইরান এই দাবি সরাসরি নাকচ করেছে এবং যুদ্ধবিরতির কোনো স্বীকৃতি দেশটির সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনিও দেননি।
ইসরায়েলের অস্ত্রঘাটতির বিষয়টি স্বীকার করেছেন যুক্তরাজ্যের সাবেক সিরিয়া বিষয়ক দূত পিটার ফোর্ডও। রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা রিয়া নভোস্তিকে তিনি বলেন, “যুদ্ধবিরতিতে কিছু লঙ্ঘন হলেও এটি টিকে থাকার ভালো সম্ভাবনা রয়েছে। কারণ, ইসরায়েল এখন যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার মতো সামরিক সক্ষমতা ধরে রাখতে পারছে না এবং শান্তির প্রয়োজন তাদেরই বেশি।” সূত্র: এনবিসি নিউজ