তুরস্ক সফরে তুর্কি প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়্যেপ এরদোগানের সঙ্গে রোববার এক ঐতিহাসিক ও হৃদ্যতাপূর্ণ বৈঠকে মিলিত হয়েছন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ। এতে দুই শীর্ষনেতা ভ্রাতৃত্বের সম্পর্ককে আরও দৃঢ় করার দৃঢ় অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছেন।
রোববার (২৫ মে) এক প্রতিবেদনে এ খবর দিয়েছে জিও টিভি।
আঙ্কারায় অনুষ্ঠিত এই বৈঠকে দুই নেতা উষ্ণ অভ্যর্থনার মাধ্যমে একে অপরকে স্বাগত জানান। আলোচনায় উঠে আসে আঞ্চলিক শান্তি, টেকসই উন্নয়ন, অর্থনৈতিক অগ্রগতি এবং পারস্পরিক কল্যাণের রূপরেখা।
পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ বলেন, তুরস্কের জনগণ আমাদের জন্য শুধু বন্ধুই নয়, তারা আমাদের হৃদয়ের আপনজন। কঠিন সময়ে তুরস্কের অটুট সহানুভূতি ও সমর্থন আমাদের সাহস দিয়েছে, শক্তি দিয়েছে।
তিনি তুরস্কের নীতিনিষ্ঠ অবস্থান ও জনগণের অকৃত্রিম ভালোবাসাকে ‘ভ্রাতৃত্বের সোনালী অধ্যায়’ হিসেবে উল্লেখ করে বলেন, যে সমর্থন আমরা সাম্প্রতিক পাকিস্তান-ভারত সংঘাতে পেয়েছি, তা শুধু কূটনৈতিক নয়, আত্মিক সম্পর্কের প্রমাণ।
মারাকা-এ-হক ও বুনয়ানুম মারসুস: সাহস ও বিজয়ের প্রতিচ্ছবি
শাহবাজ শরিফ আরও বলেন, পাকিস্তানের সশস্ত্র বাহিনী ও জনগণ যে ঐক্য, সাহস ও ত্যাগের অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে, তা আমাদের জাতির জন্য গর্বের বিষয়। মারাকা-এ-হক এবং অপারেশন বুনয়ানুম মারসুস-এর সাফল্য এই সাহসিকতার চূড়ান্ত প্রকাশ।
অর্থনৈতিক অংশীদারিত্ব: সম্ভাবনার এক নতুন দিগন্ত
বৈঠকে দুই নেতা দ্বিপাক্ষিক অর্থনৈতিক সম্পর্ককে নতুন মাত্রা দেওয়ার লক্ষ্যে বিভিন্ন খাত—যেমন নবায়নযোগ্য জ্বালানি, তথ্যপ্রযুক্তি, প্রতিরক্ষা উৎপাদন, কৃষি ও অবকাঠামো উন্নয়ন—নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেন। ৫ বিলিয়ন ডলার বার্ষিক বাণিজ্য লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে সম্মত হন উভয় পক্ষ।
পাকিস্তানি প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের মধ্যে যে আস্থা, তা শুধু কূটনৈতিক স্তরে নয়, ব্যবসা-বাণিজ্য, সংস্কৃতি ও প্রযুক্তির প্রতিটি স্তরে প্রবাহিত হওয়া উচিত। পাকিস্তান-তুরস্ক অর্থনৈতিক জোট দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়ার জন্য এক শক্তিশালী মডেল হিসেবে আবির্ভূত হতে পারে।
ভবিষ্যতের পথনির্দেশ
দুই নেতা ৭ম হাই-লেভেল স্ট্র্যাটেজিক কোঅপারেশন কাউন্সিল-এর সিদ্ধান্তসমূহ বাস্তবায়নে অগ্রগতি পর্যালোচনা করেন। তারা ঘোষণা দেন, এ বন্ধন হবে অটুট, গভীরতর ও সময়ের চেয়েও শক্তিশালী।
কাশ্মীর ইস্যুতেও প্রেসিডেন্ট এরদোগান তার দৃঢ় সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করেন, যা পাকিস্তানের জনগণের হৃদয়ে গভীর মর্যাদা পেয়েছে।
ভ্রাতৃত্বের উৎসব
প্রেসিডেন্ট এরদোগান অতিথিদের সম্মানে এক রাজকীয় নৈশভোজের আয়োজন করেন। এ উপলক্ষে আয়োজিত আতিথেয়তা ও সাংস্কৃতিক সৌজন্য যেন দুই দেশের মনের বন্ধনকে আরও উজ্জ্বল করে তোলে।
‘এক হৃদয়, দুই জাতি’
পরবর্তীতে প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ তার এক্স (সাবেক টুইটার) বার্তায় লেখেন, তুরস্কের ভাই-বোনদের প্রতি পাকিস্তানের জনগণের অকুণ্ঠ কৃতজ্ঞতা জানিয়েছি। আমরা আমাদের এই অটুট ভ্রাতৃত্বকে আরও শক্তিশালী করে তুলবো—এই ছিল আমাদের আজকের অঙ্গীকার।”