মানিকগঞ্জ প্রতিনিধি: মানিকগঞ্জে আধুনিক পদ্ধতির মালচিং পেপারে সবজি চাষ করে বেশ লাভবান হচ্ছেন কৃষকরা। এই পদ্ধতি ব্যবহারে সবজির উচ্চ ফলন ও দাম বেশী পাওয়ায় দিন দিন বাড়ছে মালচিং পেপারে সবজি চাষ। নিরাপদ খাদ্য উৎপাদনে এই মালচিং পদ্ধতি ব্যবহারে কৃষকের নানাভাবে উদ্বুদ্ধ করছেন ওয়েভ ফাউন্ডেশন ও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর।
মানিকগঞ্জের সিংগাইর উপজেলার জয়মন্টপ গ্রামের কৃষক তৌকির খান আধুনিক পদ্ধতির মালচিং পেপার ব্যবহার করে চিচিংগা, ধন্দুল, করলা, শসা, টমেটো, বরবটিসহ নানান জাতের সবজির আবাদ করে বাম্পার ফলন পেয়েছেন। উন্নত জাতের উৎপাদিত এসব সবজি মানিকগঞ্জের বিভিন্ন বাজারসহ ঢাকা ও আশপাশের জেলায় বিক্রি করে বেশ লাভবান হচ্ছেন।
মালচিং পদ্ধতি ব্যবহার করে সফল হওয়া চাষি মো. তৌকির খান বলেন, ‘ওয়েভ ফাউন্ডেশনের সহায়তায় প্রথমে আমি ২৫ শতাংশ জমিতে মালচিং পদ্ধতিতে শসা চাষ শুরু করি। এ পদ্ধতিতে চাষাবাদ করলে রাসায়নিক সার কম ব্যবহার করা লাগে। তাছাড়া পানি সেচও কম লাগে। এতে উৎপাদন খরচ কম হয়। একই সঙ্গে ফলনও ভালো হয়। তাই পরবর্তীতে আমি আরও ৮২ শতাংশ জমিতে মালচিং পদ্ধতিতে ধুন্দল, চিচিংগা, বরবটি ও করলা আবাদ করেছি। এখন গ্রামের অনেক কৃষক এ পদ্ধতিতে সবজি চাষের আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। ’
তৌকিরের দেখাদেখি সিংগাইর উপজেলার, জয়মন্টপ, দশানী, দূর্গাপুর, চর ভাকুম কিটিংচর, চর নয়াডাঙ্গী, দেওলী, বাস্তা, মেদুলিয়া সহ অন্তত ২৫টি গ্রামের বহু কৃষক এখন মালচিং পেপারে সবজির চাষ শুরু করেছেন। কৃষকরা জানান, আগে যে পরিমান সবজির উৎপাদন হতো, মালচিং পদ্ধতি ব্যবহারে সবজির উৎপাদন অনেক গুন বেড়ে গেছে। এছাড়া জমিতে কোন আগাছা হয় না। কোন ধরনের রাসায়নিক সার দিতে হয় না।পরিশ্রমও কম হয়। এসব কৃষকদের দেখাদেখি আরও কৃষকরা পলিথিন মালচিং ব্যবহার করে চাষাবাদে আগ্রহী হয়ে উঠছেন।
মালচিং পদ্ধতিতে সবজির চাষাবাদে কৃষকদের সহায়তা ও উদ্বুদ্ধ করছে পল্লী কর্ম-সহায়ক ফাউন্ডেশন এর সহযোগী সংস্থা ওয়েভ ফাউন্ডেশন। এই পদ্ধতি ব্যবহার করে নিরাপদ খাদ্য উৎপাদনে কৃষক ও কৃষি কর্মকর্তাদের নিয়ে মাঠ দিবস সহ নানাভাবে সহযোগিতা করছে সংস্থাটি।
ওয়েভ ফাউন্ডেশনের সমন্বিত কৃষি ইউনিটের কৃষি কর্মকর্তা মৃন্ময় রায় বলেন, পিকেএসএফের আর্থিক সহায়তায় সিংগাইর উপজেলার ১০টি ইউনিয়নে নিরাপদ সবজি চাষ নিয়ে কাজ করছি আমরা। এর আওতায় জৈব বালাইনাশক ও সার, পরিবেশবান্ধব প্লাস্টিক মালচিংসহ বিভিন্ন নিত্য নতুন প্রযুক্তি কৃষকদের মধ্যে পরিচয় করিয়ে দিচ্ছি। এসব প্রযুক্তি ব্যবহার করে কৃষকরা নিরাপদ উপায়ে সবজি উৎপাদন করছেন। কম খরচে ভালো ফলন পাওয়ায় পরিবেশবান্ধব প্লাস্টিক মালচিং পদ্ধতি দিনদিন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে।
ওয়েভ ফাউন্ডেশনের সমন্বিত কৃষি ইউনিটের সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো. মতিউর রহমান বলেন, ‘আমাদের প্রধান লক্ষ্য কৃষিকে টেকসই ব্যবসায়ে উন্নীত করা। সে জন্য যেসব পদ্ধতি ব্যবহার করলে কৃষকদের খরচ কমবে সেগুলোই মাঠে বাস্তবায়ন করছি। এতে কৃষকরাও লাভবান হচ্ছেন তাই জৈব কৃষিতে তাদের আগ্রহ বাড়ছে।
সিংগাইর উপেজেলা কৃষি কর্মকর্তা হাবিবুল বাশার চৌধুরী বলেন, পলিথিন মালচিং পরিবেশবান্ধব আধুনিক চাষ পদ্ধতি। এই পদ্ধতিতে চাষাবাদ করে কীটনাশক কম ব্যবহার ও নিরাপদ বিষমুক্ত সবজি উৎপাদন করা যায়। মাঠ পর্যায়ের কৃষকের এই পদ্ধতি ব্যবহারে নানান পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। সিংগাইর উপজেলায় মালচিং পেপারে প্রায় ১২ একর জমিতে পরিবেশবান্ধব মালচিং পেপার ব্যবহার করে উচ্চ মূল্যের নিরাপদ সবজি চাষ হয়েছে বলে জানান তিনি।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক ড. রবিআহ নুর আহমেদ বলেন, মালচিং পদ্ধতিতে চাষাবাদে রাসায়নিক সারের ব্যবহার কম হয়, জমিতে আগাছা ও পোকার আক্রমণ কম হয়। বীজ বপনের সময় একবার সার দিলে পরবর্তীতে আর সার দেওয়ার প্রয়োজন হয় না। তাছাড়া এ পদ্ধতিতে চাষ করলে সেচও কম লাগে। তাই কৃষকের খরচ কম হয়। এ জন্য কৃষি বিভাগ থেকেই মালচিং পদ্ধতি ব্যবহার করতে কৃষকদের উৎসাহ দেওয়া হয়।