বাগেরহাট প্রতিনিধি: বাগেরহাটে চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে দশানী-রামপাল-মোংলা আঞ্চলিক মহাসড়কের দশ কিলোমিটার এলাকা। চরম ভোগান্তিতে পড়ছেন পথচারী, যানবাহনচালকসহ স্থানীয় বাসিন্দারা। আড়াই বছর আগে সড়কটির প্রশস্তকরণ, সংস্কার ও পুনর্নির্মাণ কাজ শুরু হলেও, ঠিকাদার ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের উদাসিনতায় কাজের ধীরগতিতে এই পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে দাবি স্থানীয়দের।
সড়ক বিভাগ বলছে, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সাথে চুক্তি বাতিল করে শিগগিরই নতুন দরপত্র আহ্বান করা হবে। তবে স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর সড়কটির একটি অংশের নির্মাণ কাজের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান পালিয়ে যাওয়ায় এমন অচলাবস্থা সৃষ্টি হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে তারা মানববন্ধন করে প্রতিবাদ জানালেও কোন প্রতিকার পায়নি তারা।
সরেজমিনে দশানী-রামপাল-মোংলা আঞ্চলিক মহাসড়কে গিয়ে দেখা যায়, সড়র নির্মাণের জন্য ব্যবহৃত মালামাল পড়ে আছে এলোমেলো ভাবে। কিছুদূর পরপর রাস্তায় সৃষ্টি হয়েছে বড় বড় গর্ত। ইজিবাইক, মাইক্রোবাস, মটরসাইকেলসহ ছোট-খাট যানবাহন চলাচলের সময় ধুলায় ছেয়ে যাচ্ছে পুরো রাস্তা ও আশপাশ এলাকা। আর বৃষ্টির সময় খানাখন্দের কারণে চলাই দায়। এমনই করুণ পরিস্থিতি দশানী-রামপাল-মোংলা সড়কের দশানী-হেলাতলা অংশের। সড়কের বাকি অংশেরও অনেক জায়গার অবস্থা একই রকম। স্থানীয়রা জানান, আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর গত ৯ মাস ধরে মাহাবুব ব্রাদার্স নামের ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের কাজ বন্ধ থাকায় জনসাধারণের চলাচলে দুর্ভোগ বেড়েছে। সড়কটির অধিকাংশ অংশ খানা-খন্দে ভরা থাকার প্রতিদিনই ঘটছে ছোটখাট দুর্ঘটনা, ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছেন যানবাহন চালকরা।
ইজিবাইক চালক মোস্তফা শেখ বলেন, এই রাস্তা দিয়ে ইজিবাইক চালিয়ে সারাদিন যা ইনকাম করি, তার একটা অংশ ইজিবাইক মেরামত করতে ব্যয় হয়ে যায়। এছাড়া বিভিন্ন সময় গর্তে পড়ে গেলে গাড়িও ক্ষতি হয় আবার যাত্রীও আহত হয়।
ডেমা ইউনিয়নের মির্জাপুর গ্রামের বাসিন্দা হোসনেয়ারা বেগম বলেন, আমাদের এই রাস্তাটি গত ৩ থেকে ৪ বছর ধরে এমন বেহাল অবস্থায় পড়ে রয়েছে। রাস্তাটির কাজ শুরু হলেও গত কয়েক মাস ধরে কাজ বন্ধ রয়েছে। এর মধ্যে গত ১৫ দিন আগে আমাদের বাড়ীর সামনের রাস্তায় এক গর্ভবতী মহিলাকে ইজিবাইকে করে হাসপাতালে নেওয়ার পথে গর্তের মধ্যে ইজিবাইকটি পড়ে যায়। এসময় ওই মহিলার অবস্থা খুব খারাপ হয়ে গেলে ওই ইজিবাইকের মধ্যেই তার বাচ্চা প্রসব করে। আমরা সরকারের কাছে দ্র্রুত এই রাস্তাটি সংস্কারের দাবী জানাই।
একই গ্রামের বাসিন্দা সবুজ সরদার বলেন, আমাদের রাস্তাটির অবস্থা এখন এতটাই খারাপ আসন্ন বর্ষা মৌসুমে এই রাস্তা দিয়ে পায়ে হেটেও চলাচল করা দায় হয়ে যাবে।
বাগেরহাট সড়ক ও জনপথ বিভাগ বলছে, ৩৩ দশমিক ৮৭ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের বাগেরহাট-রামপাল-মোংলা আঞ্চলিক মহাসসড়কটি প্রশস্তকরণ, সম্প্রসারণ ও সংস্কারের জন্য ৪টি প্যাকেজে ৩টি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে ২০২২ সালের আগষ্ট মাসে কার্যাদেশ দেওয়া হয়। ৩৩ দশমিক ৮৭ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের আঞ্চলিক মহাসড়কটিতে ৮ ব্রিজ, ২১ টি কালভার্ড রয়েছে। জমি অধিগ্রহন ও সংস্কারসহ যার নির্মাণ ব্যয় ধরা হয়েছে ৪৬৭ কোটি টাকা। প্রথম প্যাকেজে দশানী থেকে হেলাতলা পর্যন্ত ১০ কিলোমিটার সড়কের কাজ করছে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান মাহাবুব ব্রাদার্স। দুই দফা সময় বাড়ানো হলেও প্রতিষ্ঠানটি মাত্র ১৫ শতাংশ কাজ শেষ করতে পেড়েছে।
এ বিষয়ে বাগেরহাট সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ আশরাফুল ইসলাম বলেন, ৩৩ দশমিক ৮৭ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের বাগেরহাট-রামপাল-মোংলা আঞ্চলিক মহাসসড়কটি প্রশস্তকরণ, সম্প্রসারণ ও সংস্কারের জন্য চারটি প্যাকেজের শেষ তিনটি প্যাকেজের কাজ ৭০ শতাংশ শেষ হয়েছে। এর মধ্যে প্রথম প্যাকেজের কাজ শেষ হয়নি। সব শেষ গত ৩১ মার্চ পযর্ন্ত সময় ছিল। সেই সময়েও ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান মাহবুব ব্রাদার্স কাজ শেষ করতে পারেনি। এরই মধ্যে গত প্রায় একমাস আগে মাহবুব ব্রাদার্সকে চুড়ান্ত নোটিশ দেয়া হলেও তারা কোন উত্তর দেয়নি। এখন নিয়ম অনুয়ায়ী আগামী জুনের শেষের দিকে মাহবুব ব্রাদার্সের কার্যাদেশ বাতিল করে নতুন ঠিকাদার নিয়োগের জন্য দরপত্র আহ্বান করা হবে বলে জানান এই কর্মকর্তা।