রমজান আলী, সাতকানিয়া (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি: চট্টগ্রামের সাতকানিয়ায় আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠনের পদ ছেড়ে লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টিতে (এলডিপি) যোগ দিলেন সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান ও ইউপি সদস্যসহ চার নেতা। শনিবার (২১ জুন) দলের প্রাথমিক সদস্য পদের ফরম পূরণ করে দলটির চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা এলডিপির সভাপতি মো. এয়াকুব আলীর নগরীর ব্যবসায়িক কার্যালয়ে তারা যোগদান করেন বলে দলের দক্ষিণ জেলার সাধারণ সম্পাদক গোলাম কিবরিয়া শিমুল জানিয়েছেন।
যোগদানকৃতরা হলেন, উত্তর সাতকানিয়া সাংগঠনিক থানা আওয়ামী যুবলীগের সহ-সভাপতি ও ১০ নম্বর কেঁওচিয়া ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মনির আহমদ, কেঁওচিয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের সাধারণ সম্পাদক ও একই ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য আবু তালেব সিকদার, ৮ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ নেতা ও একই ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য সাহেব মিয়া এবং উত্তর সাতকানিয়া আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগের মহিলা বিষয়ক সম্পাদক ও একই ইউনিয়নে সংরক্ষিত মহিলা (৭, ৮ ও ৯ নম্বর) আসনের ইউপি সদস্য রোকেয়া বেগম।
এর আগে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ধর্মবিষয়ক উপ কমিটির সদস্য শামসুল ইসলামও এলডিপিতে যোগদান করেছেন বলে চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা এলডিপির দলীয় সূত্র নিশ্চিত করেছেন।
তবে এলডিপিতে যোগদানকে স্বাভাবিকভাবে মেনে নিতে না পেরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে (ফেসবুক) অনেকেই মিশ্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন।
যোগদান অনুষ্ঠানে উপস্থিতির মধ্যে উল্লেখযোগ্যরা হলেন, দক্ষিণ জেলা এলডিপির সভাপতি মো. এয়াকুব আলী, সাধারণ সম্পাদক গোলাম কিবরিয়া শিমুল, সাতকানিয়া উপজেলা সভাপতি মাহমুদুল হক চৌধুরী চেয়ারম্যান, কেঁওচিয়া ইউনিয়ন সভাপতি মো. নুরুন্নবী, সাধারণ সম্পাদক মো. জসীম উদ্দীন, এলডিপি নেতা মো. সেলিম ও গণতান্ত্রিক ছাত্রদলের সাতকানিয়া উপজেলার আহ্বায়ক মো.পারভেজ।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ের আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠনের একাধিক নেতা জানান, উত্তর সাতকানিয়া যুবলীগের দায়িত্ব পালনকালে আওয়ামী লীগের দলীয় গ্রুপিংকে কাজে লাগিয়ে ও আওয়ামী লীগের একাংশের নেতাদের ব্যবহার করে ২০১৬ সালের ৪ জুন সাতকানিয়ার ১০ নম্বর কেঁওচিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান পদে বিজয়ী হন মনির। তার প্রতিদ্বন্দ্বী চেয়ারম্যান প্রার্থী ছিলেন উত্তর সাতকানিয়া আওয়ামী যুবলীগের সভাপতি ওচমান আলী। তিনি নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচনে অংশ নিয়েছিলেন।
চেয়ারম্যান হওয়ার পর থেকে ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়ার পিএস মো. আরিফের হাত ধরে গণভবন পর্যন্ত পৌঁছে যান মনির আহমদ। সে সময় আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীকে পরাজিত করার পরও কিভাবে এবং কার মাধ্যমে তিনি (মনির) গণভবন পৌঁছান তা নিয়ে দলীয় নেতা-কর্মীদের মাঝে তীব্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হলেও তার লাগাম কেউ টেনে ধরতে পারেনি। শুধু তাই নয়, কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ, ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়ার পক্ষ থেকে ঈদুল ফিতর, ঈদুল আযহা ও করোনাকালীন সময়ে ব্যক্তিগত (বিপ্লব বড়ুয়া) ও দলীয় কোন সামগ্রী আসলে তা বিতরণে অগ্রণী ভূমিকা পালন করত চেয়ারম্যান মনির।
এদিকে, তৎকালীন চট্টগ্রাম-১৫ আসনের সংসদ সদস্য আবু রেজা নদভী ও সাতকানিয়া উপজেলা পরিষদের তৎকালীন চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি এম.এ মোতালেবের অকুণ্ঠ সমর্থন ও সরব প্রচারণার পরও ২০২২ সালের ১৭ অক্টোবর মাসে অনুষ্ঠিত চট্টগ্রাম জেলা পরিষদ নির্বাচনে সদস্য পদে চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা স্বেচ্ছাসেবকলীগের উপ প্রচার সম্পাদক আবদু আলিমের সাথে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে হেরে যান মনির।
অন্যদিকে, আবু তালেব সিকদার ৫ আগস্টের পর আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে সাতকানিয়া থানায় দায়েরকৃত মামলার এজাহারভুক্ত আসামি। সম্প্রতি এ মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে তিনি জেল থেকে জামিনে বের হন।
অপরদিকে, সাহেব মিয়া ও রোকেয়া বেগম আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠনের দলীয় মিটিংয়ে উপস্থিত থাকতেন সামনের কাতারে থেকে।
তবে, তাদের এলডিপিতে যোগদানকে স্বাভাবিক নেয়নি আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠনের নেতা-কর্মীসহ ভিন্ন দলের নেতা-কর্মীরা। ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ ঘটিয়েছেন ফেসবুকে লেখালেখি করে।
জামায়াতে ইসলামীর কেরানীহাট শাখার দায়িত্বশীল কাজী মো.ওসমান গণি তার ফেসবুক ভেরিফাইড পেইজে লিখেছেন, এগুলো কারা…? হাইরে এলডিপি কেঁওচিয়ার আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসন চলছে…।
আরফাত রহমান কোকো স্মৃতি সংসদের চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলার সভাপতি, এস.এম আলমগীর সাবিক, তার ফেসবুক পেইজে লিখেছেন, কেওঁচিয়া'র আওয়ামী লীগ কে পুনর্বাসন চলছে….এরা কারা কোথা থেকে এলো এরা…?
চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সহ সভাপতি আবুল কালাম আজাদ লিখেছেন, সাতকানিয়ার বড় বড় আওয়ামী লীগ নেতাদের শ্রেষ্ঠ আবিষ্কার গুলো অন্য দলের যোগদানের হিড়িক চলছে। সবশেষে লিখেন, আমাদের নেতাদের থেকে এখন একটি কথা জানতে বড় মন চাই, 'তোয়ারার বিষ মইজ্জে নে এহন'।
সাবেক ছাত্রলীগ নেতা এম.লুৎফর রহমান মাসুম লিখেন, 'প্রিয় কেঁওচিয়াবাসী জাতীয় বেঈমানদের চিনে রাখবে???।
দলে যোগদানের প্রতিক্রিয়ায় মনির আহমদ বলেন, আমি আওয়ামী লীগের একজন সমর্থক ছিলাম। দলে আমার কোন পদবী ছিল না। বর্তমানে আমি এলডিপির সমর্থক হিসেবে ফরম পূরণ করেছি।
আবু তালেব মেম্বার বলেন, আওয়ামী লীগের রাজনীতি করে কিছুই পায়নি। মানুষের সাথে কোন অন্যায় আচরণ ও অত্যাচার করিনি। তারপরও জেল জুলুমের শিকার হয়েছি। তাই সদস্য ফরম পূরণ করে এলডিপিতে যোগদান করেছি।
সাহেব মিয়া মেম্বার বলেন, আমাদের পরিষদের চেয়ারম্যান ওচমান আলী আওয়ামী লীগ ছিলেন। তাই ইউপি সদস্য হিসেবে বাধ্য হয়ে আওয়ামী লীগের সাথে সম্পৃক্ত হয়েছিলাম। কর্নেল অলি আহমদ বীর বিক্রম একজন পরিচ্ছন্ন রাজনীতিবিদ। তাই ওনার দলে যোগদান করেছি। আগামী নির্বাচনে চট্টগ্রাম-১৪ আসনে তার পক্ষে কাজ করব ইনশাল্লাহ।
রোকেয়া বেগম বলেন, আমি এখন এ বিষয়ে কোন মন্তব্য করতে চাই না।
চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা এলডিপির সভাপতি মো.এয়াকুব আলী, মনির চেয়ারম্যানসহ কেঁওচিয়া ইউনিয়নের চারজন এলডিপিতে যোগদানের বিষয়টি নিশ্চিত করে তিনি বলেন, যোগদানকারীরা প্রাথমিক সদস্য পদ পূরণ করে আমাদের দলে যোগ দিয়েছেন। যে কেউ এক দল থেকে অন্য দলে যাওয়ার অধিকার রাখে। কারো বিরুদ্ধে যদি কোন দুর্নাম ও মামলা না থাকে তারা আমাদের দলে যোগ দিতে পারবেন।
আবু তালেবের বিরুদ্ধে মামলা থাকার বিষয়ে তিনি বলেন, বিষয়টি কেঁওচিয়া ইউনিয়ন নেতৃবৃন্দরা ভালো বলতে পারবেন। কারণ যোগদানকারীদের আমাদের কাছে নিয়ে এসেছেন কেঁওচিয়া ইউনিয়ন এলডিপি। তবুও এ রকম অভিযোগ থাকলে তদন্ত করে তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।