ঢাকা
২৫শে মে, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
রাত ৪:১১
logo
প্রকাশিত : মে ২৪, ২০২৫

জীবনের শেষ মুহূর্তে এসে স্বপ্ন পূরণ করতে গাছ রক্ষণাবেক্ষণে সহযোগিতা চান অমল চন্দ্র সরকার

মোঃ ইব্রাহীম মিঞা, বিরামপুর(দিনাজপুর)প্রতিনিধি: গ্রামে গ্রামে ঘুরে তালের আঁটি সংগ্রহ করে রাস্তার পাশে সারিবদ্ধভাবে তাল গাছ লাগানোই ছিল অমল চন্দ্র সরকারের একমাত্র নেশা। স্ত্রী মারা যাওয়ার পর ২০০০ সালে গ্রামের কয়েকজনের সাথে ১ মাস ১০ দিনের সফরে বৃন্দাবন গিয়েছিলেন অমল চন্দ্র সরকার ‌। তাঁর সফরের মধ্যে তালবন এলাকার দৃশ্য তার মনের ভেতর জায়গা করে নেই।সেখানে ৫ হাত পর পর লাগানো ৬-৮ বিঘার বিশাল পরিসরে তাল গাছের (তাল বন) বাগান দেখে তিনি মুগ্ধ হন। এই বাগানের মতো নিজ এলাকায় রাস্তার ধারে তালের গাছ লাগিয়ে তাল গাছের সারিবদ্ধ রাস্তার স্বপ্ন বুনেন তিনি। তাঁর স্বপ্ন পূরণের লক্ষ্যে ২০০১ সালে প্রায় ৩-৪ কি.মি. রাস্তা জুড়ে সারিবদ্ধভাবে ৫ শত ২৫ টি তালের গাছ লাগিয়েছেনো তিনি। রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে অধিকাংশ গাছ ধ্বংস হয়ে গেলেও এখনো তাঁর লাগানো রাস্তার পাশে কয়েকশো তাল গাছ সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে আছে। রাস্তার পাশে সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে থাকা কয়েকশো তাল গাছের মনোরম দৃশ্যে প্রকৃতির সৌন্দর্যের প্রতি বিমোহিত হচ্ছে সাধারণ মানুষ।

এমন দৃশ্য দেখতে হলে আপনাকে আসতে হবে দিনাজপুরের বিরামপুর উপজেলার খানপুর ইউনিয়নের অমল চন্দ্র সরকারের কালিশহর গ্রামে। শ্রী অমল চন্দ্র সরকার দিনাজপুরের বিরামপুর উপজেলার খানপুর ইউনিয়নের ৬ নং ওয়ার্ডের কালিশহর গ্রামের মৃত সতীশ চন্দ্র সরকারে বড় ছেলে।

অমল চন্দ্র সরকারের সাথে কথা বললে তিনি জানান, আমার বয়স এখন প্রায় ৮০ উর্ধ্বে । আমি তাল গাছ লাগিয়েছি মানুষের উপকারের জন্য । মানুষ এখান থেকে ফল খাবে প্রয়োজনে গাছের পাতা সংগ্রহ করে ঘরের এবং রান্নার কাজে ব্যবহার করবে এটাই আমার উদ্দেশ্য । আমার কোন প্রয়োজন নেই। আমার একটাই ছেলে সন্জীত কুমার সরকার।সে বর্তমানে বিরামপুর পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক।তাঁর স্ত্রী শ্রী জয়ন্তী রাণী সরকার সেও উপজেলার খানপুর ইউনিয়নের রতনপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক। আমার লাগানো রাস্তার পাশে গাছগুলো অনেকেই তুলে ফেলে দেয়,রাতারাতি গাছ কেটে নিয়ে যায়, গাছের পাতা সংগ্রহের নামে নিচের দিকের পাতা না নিয়ে গাছের উপরের পাতা কেটে নিয়ে যায় এভাবে গাছগুলোর ক্ষতি সাধন করে।এছাড়াও গাছের ফলসমূহ (তাল) যে যখন পারে নিয়ে যায়। এভাবে ৩ টি রাস্তার পাশে ৫ শত ২৫টি গাছের মধ্যে এখন ১ শত ১৫টি গাছ রয়েছে।

খানপুর ইউনিয়নসহ আশপাশের গ্রামে গ্রামে গিয়ে ছোট বাচ্চাদের টাকা পয়সা দিয়ে ৫টি ১০টি করে তালের আঁটি সংগ্রহ করেন তিনি।নিজ উদ্যোগে এগুলো লাগানো থেকে শুরু করে যাবতীয় পরিচর্যা করেন তিনি নিজেই। এগুলো রক্ষার্থে গ্রামের মানুষের সহযোগিতা চেয়েও পাননি তিনি। কাউকে কিছু বলতে গেলেই লেগে যায় তর্ক বিতর্ক। অমল চন্দ্র সরকার বলেন মানুষের উপকারের জন্য গাছ লাগাতে গিয়ে এ বয়সে তর্ক বিতর্কে জড়াতে চাই না আর। কিন্তু স্বপ্ন পূরণে ৮০ বছর বয়সে এখনো তাঁর ইচ্ছা শক্তি প্রবল। তিনি বলেন যদি সরকার (স্থানীয় সরকার) গাছ রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব নেন তাহলে তার নিজ গ্রাম কালিশহর থেকে চন্ডীপুর ও গ্রামের শেষ পর্যন্ত তালের গাছ লাগাবেন তিনি।

এবিষয়ে অমল চন্দ্র সরকারের ছোট ভাই মিলন চন্দ্র সরকার বলেন, আমার বড় ভাই যে সময় তালের গাছগুলো লাগিয়েছিলেন সে সময় তালের গাছের সংখ্যা এই এলাকায় অনেক কম ছিল। বিভিন্ন গ্রামে গিয়ে তিনি তালের আঁটি সংগ্রহ করে আনতেন।বড় ভাইয়ের সাথে আমিও রাস্তার পাশে সারিবদ্ধভাবে লাগানো তাল গাছের যত্ন ও পরিচর্যা করতাম। কিন্তু রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে অনেক গাছ মানুষ কেটে নিয়ে যায়। কিছু বলতে গেলেই বলে রাস্তার গাছ এভাবে তর্কে জড়িয়ে পড়ে। এছাড়াও আগে রাস্তা ছিল এখন অন্য পাশ দিয়ে রাস্তা হওয়ায় অনেক গাছ মালিকানাধীন ভাবে দখলে চলে যায়। কিন্তু বর্তমানে কয়েকশো গাছ রয়েছে যেগুলোর দিকে তাকালেই মন ভরে যায়।

স্থানীয় কয়েকজন যুবকের সাথে কথা বললে তারা জানান, আমাদের কালিশহর গ্রামের রাস্তায় সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে থাকা তালের গাছের দৃশ্য দেখে অনেক ভালোলাগে। এভাবে অমল চন্দ্র সরকার দাদুর মতো যদি সকলে মিলে গাছ লাগানোর উদ্যোগ নিতেন, যত্ন নিতেন তাহলে আমাদের গ্রামের এমন রাস্তার দৃশ্য দেখতে অনেকেই আমাদের গ্রামে আসতেন।

খানপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান চিত্তরঞ্জন পাহানের সাথে এবিষয়ে কথা বললে তিনি জানান,‌ আমাদের কালিশহর গ্রামের অমল চন্দ্র সরকার রাস্তার পাশে তালের গাছ লাগিয়েছেন। এগুলো আমরা আমাদের পরিষদের গ্রাম পুলিশ, শিক্ষক সমাজ ও মসজিদের ইমাম ও কিছু স্বেচ্ছাসেবকের মাধ্যমে দেখাশোনা করে থাকি।অমল চন্দ্র সরকার যদি পুনরায় গাছ রোপণ করতে চায় আমরা পরিষদের পক্ষ থেকে গাছগুলো রক্ষণাবেক্ষণসহ তাকে সার্বিক সহযোগিতা করবো। এগাছ গুলো পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করে রাস্তার শোভাবর্ধন করে। এরকম অমল চন্দ্র সরকারের মতো যে কেউ গাছ রোপণে এগিয়ে আসলে আমরা পরিষদের পক্ষ থেকে সার্বিক সহযোগিতা করবো। পরিশেষে অমল চন্দ্র সরকারের এ মহৎ উদ্যোগের প্রতি খানপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান চিত্তরঞ্জন পাহান কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।

সর্বশেষ
logo
প্রকাশকঃ অধ্যাপক ড. জোবায়ের আলম
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদকঃ তাপস রায় সরকার
মোবাইল: +৮৮০ ১৭৩৬ ৭৮৬৯১৫
কার্যালয় : বিটিটিসি বিল্ডিং (লেভেল:০৩), ২৭০/বি, তেজগাঁও (আই/এ), ঢাকা-১২০৮
মোবাইল: +880 2-8878026, +880 1736 786915, +880 1300 126 624
ইমেইল: tbtbangla@gmail.com (online), ads@thebangladeshtoday.com (adv) newsbangla@thebangladeshtoday.com (Print)
বাংলাদেশ টুডে কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি ও বিষয়বস্তু অন্য কোথাও প্রকাশ করা বে-আইনী।
Copyright © 2025 The Bangladesh Today. All Rights Reserved.
Host by
linkedin facebook pinterest youtube rss twitter instagram facebook-blank rss-blank linkedin-blank pinterest youtube twitter instagram