রাজশাহী থেকে মোঃ হায়দার আলী: রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার মাটিকাটা ইউনিয়নের খেতুর গ্রামের কৃষক মোঃ রাকিব ব্রি-১০৫ বা ‘ডায়াবেটিস ধান’ চাষ করেছিলেন। যা কাটাও হয়েছে। তিনি পার্টনার প্রকল্পের আওতায় ব্রিধান ১০৫ এর ৫ বিঘা জমিতে প্রদর্শনী করেছেন। এ উপজেলায় পরীক্ষামূলকভাবে ৩ হেক্টর জমিতে ব্রি-১০৫ বা ‘ডায়াবেটিস ধান’ চাষ করা হয়েছে।
মাটিকাটা ইউনিয়নের খেতুর গ্রামের কৃষক মোঃ রাকিব ব্রি-১০৫ বা ‘ডায়াবেটিস ধান’ চাষ করে এলাকায় ব্যাপক সাড়া ফেলেছেন। বোরো মৌসুমে চাষের উপযোগী এই ধানের চালে কার্বোহাইড্রেটের পরিমাণ তুলনামূলক কম হওয়ায় এটিকে ‘ডায়াবেটিক ধান’ বলা হচ্ছে। উচ্চ ফলনশীল ধানের জাত গুলির মধ্যে ব্রি-ধান ১০৫ অন্যতম। এ ধানের চাল বিশেষ বৈশিষ্ট্যের কারণে ডায়াবেটিক রোগিদের জন্য উপকারী বলে দাবী করেছেন বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের বিজ্ঞানী ও পুষ্টিবিদগণ।
গোদাগাড়ী উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর এবং বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট (ব্রি)-এর ২০২৪-২৫ অর্থবছরের কার্যক্রমের আওতায় বিভিন্ন সহযোগিতা ও পরামর্শ নিয়ে কৃষক রাকিব তার ৫ বিঘা জমিতে এই বিশেষ ধানের চাষ করেন।সাধারণত অতিরিক্ত ছাঁটাইকৃত চাল স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। আবার ভাত থেকে মাড় ফেলে খাওয়ার কারণে পুষ্টিমান কমে যায়। এই অবস্থায় ব্রি ধান ১০৫ বেশ আগ্রহ তৈরি করেছে, কারণ এটিতে পুষ্টিমান যেমন আছে তেমনি এর গ্লাইসেমিক ইনডেক্স (জিআই) অনেক কম।
কৃষক মোঃ রাকিবের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের পরামর্শে ৫ বিঘা জমিতে এই ধান রোপণ করেছি। ধান ভালই হয়েছে। প্রতিদিন বৃষ্টি হওয়ার কারণে ধান কাঁটতে পারছিনা। সরিষা করার পর ধান করায় কিছুদিন নামলা হয়েছে। তিনি আরও জানান, এই ধান উচ্চ ফলনশীল আশা করছি প্রতিবিঘা জমিতে ২৬/২৭ মন করে ফলন হবে।
কাঁঠাল বাড়িয়া ব্লকের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা মোসাঃ আতিয়া রহমান বলেন, ব্রি ধান ১০৫ ভালই হয়েছে আশা করছি বাম্পার ফলন হবে। বৃষ্টির কারণে ধান কাটতে পারছে না। এ ধানের গাছ বেশ শক্ত, ঝড়, বৃষ্টিতে পড়ে যায় না ফলে তেমন ক্ষতি হয় না। বিঘা প্রতি ২৬/২৭ মন ফলন হতে পারে। তিনি আরও বলেন প্রায় দিন মাঠে গিয়ে কৃষকদের পরামার্শ দিয়ে থাকি। আগামীতে এ ধান চাষ বৃদ্ধি পেতে পারে।
গোদাগাড়ী উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা মরিয়ম আহমেদ জানান, সাধারণত খাদ্যে জিআই ৫৫ বা এর নিচে থাকলে সেটিকে কম জিআই সম্পন্ন খাদ্য বলা হয়। ব্রি ইন্সটিটিউটের গবেষণায় ব্রি ধান ১০৫-এ জিআই এই মাত্রার নিচে পাওয়া গেছে। তাই এটি নিঃসন্দেহে ডায়াবেটিসের রোগীদের জন্য একটি উপযোগী খাবার। তবে এই ধানের ভাত সাধারণ মানুষও খেতে পারবেন।
ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডক্টর বিশ্বজিৎ কর্মকার বলেন, এ ধানটি কম গ্লাইসেমিক ইনডেক্স বা জিআইসম্পন্ন হওয়ার কারণেই এটিকে ‘ডায়াবেটিক চাল’ বলা হচ্ছে। তিনি বলেন, ‘অতিরিক্ত ছাটাই করা চাল স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। আমাদের দেশে মাড় ফেলে ভাত খাওয়ার কারণে এমনি পুষ্টি কম পাওয়া যায়। এ অবস্থায় ব্রি-১০৫ বেশ আগ্রহ তৈরি করেছে, কারণ এটিতে পুষ্টিমান যেমন আছে তেমনি জিআই অনেক কম।’