শিব্বির আহমদ রানা, বাঁশখালী (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি: শ্রমিকের অভাব, কালবৈশাখী ঝড় কিংবা শিলাবৃষ্টিতে জমির পাকা ধান কাটা নিয়ে দুশ্চিন্তায় ছিলেন বাঁশখালী উপজেলার চাম্বল ইউনিয়নের ৮নম্বর ওয়ার্ডের কৃষক মো. হোসাইন প্রকাশ পুতুইন্যা। সে একজন প্রান্তিক কৃষক, খেটে খাওয়া মানুষ। বিষয়টি জানতে পেরে তাৎক্ষণিকভাবে অসহায় এই কৃষকের পাশে দাঁড়ান বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সহযোগী সংগঠন শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশন চাম্বল ইউনিয়ন শাখার নেতাকর্মীরা।
শুক্রবার (২ মে) বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশন চাম্বল ইউনিয়নের সভাপতি আনোয়ারুল আজিম সাঈদীর নেতৃত্বে সংগঠনের সদস্য নেজাম উদ্দিন, মো. রিদুয়ান, মো. সালেহ আহমদ, আমান উল্লাহ, বশির আহমদ, ফেরদৌস আলম, রাশেদুল করিম সুমন সহ ১০ থেকে ১২ জনের একটি টিম ওই কৃষকের ২০ শতাংশ জমির পাকা ধান কেটে দেন। তাদের এ কার্যক্রম শ্রমিক দিবস উপলক্ষে মাসজুড়ে অব্যাহত থাকবে বলে জানান তারা।
তাদের এই ভিন্নধর্মী উদ্যোগের কারণ জানতে চাইলে চাম্বল ইউনিয়ন শ্রমিক কল্যাণের সভাপতি আনোয়ারুল আজিম সাঈদী বলেন, 'বাংলাদেশ কৃষি নির্ভর দেশ। এদেশের কৃষক বাঁচলে আমরা বাঁচি। দেশের ৮০ শতাংশ মানুষ কৃষিশ্রমের সাথে জড়িত। কৃষক শ্রমিকরা বারবার অবহেলিত থাকে। দিন-রাত কষ্ট করে ফসল ফলিয়েও দিনশেষে (আয়-ব্যায়) তাদের দুশ্চিন্তা যেন পিছু ছাড়েনা। আয়-ব্যয়ের হিসাব মিলাতে গেলে তারা প্রায়ই ক্ষতিগ্রস্থ হয়। কৃষকদের পাশে থেকে, তাদের উৎসাহিত করতে আমাদের এ সহযোগীতার উদ্যোগ।'
তিনি আরও বলেন, 'বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশন চাম্বল ইউনিয়ন শাখা মহান মে দিবসকে কেন্দ্র করে পুরো মাসজুড়ে শ্রমিকের পাশে থেকে সার্বিক সহযোগীতা করবে। এ উপলক্ষে আমাদের কিছু কর্মসূচি আছে। আমাদের পূর্ব চাম্বল খেতখোলায় কৃষকদের পানের বরজসহ সব কাজে সহযোগীতা করা। তপ্ত রৌদ্রে লবণমাঠে কাজ করা চাষীদের মাঝে বিশুদ্ধ খাবার পানি ও খাববার স্যালাইন বিতরণ। অসহায় চাষীদের ধান কেটে দেওয়াসহ শ্রমিকদের পাশে থেকে সর্বাত্মক সহযোগীতা করা আমাদের লক্ষ্য। তাছাড়া দরিদ্র কৃষকের পাশে দাঁড়াতে পেরে খুবই আনন্দিত ও স্বস্তি বোধ করছি।'
এ বিষয়ে কৃষক মো. হোসাইন বলেন, 'একে তো কালবৈশাখী ঝড়ের ভয়, তার ওপর বর্তমানে কৃষি শ্রমিকের মজুরি অনেক বেশি এবং পর্যাপ্ত পরিমাণ শ্রমিক বা লোকবলও পাওয়া যায় না। আমি একা জমির পাকা ধান কাটতে পারছিলাম না। এ নিয়ে ভীষণ দুশ্চিন্তার মধ্যে ছিলাম। শ্রমিক কল্যাণের নেতাকর্মীরা প্রচণ্ড গরমের মধ্যে আমার জমির পাকা ধান কেটে দিয়েছে। এতে আমার খুবই উপকার হয়েছে। আমি অনেক খুশি হয়েছি। এজন্য আমি বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের নেতাকর্মীদের কাছে কৃতজ্ঞ। আমি সবার জন্য দোয়া করেছি।'
দক্ষিণ জেলা শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের সেক্রেটারী মোকতার হোসাইন সিকদার বলেন, 'অসহায় শ্রমিকদের পাশে থেকে সহযোগীতা করা সত্যাই প্রশংসনীয় উদ্যোগ। চাম্বল ইউনিয়ন শ্রমিক কল্যাণের মতো উপজেলার অন্যান্য ইউনিয়নেও এমন উদ্যোগ গ্রহণ করা হোক।'
এদিকে দরিদ্র কৃষকের জন্য এমন তৎপরতায় প্রশংসায় ভাসছেন চাম্বল ইউনিয়ন শ্রমিক কল্যাণের নেতাকর্মীরা। বাঁশখালী উপজেলার সাধারণ মানুষ, কৃষকসহ সচেতন মহল তাদের ধন্যবাদ অভিনন্দন এবং কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন। আগামীতেও অসহায় মানুষের পাশে তারা এমন নির্ভরশীলতার প্রতীক হয়ে দাঁড়াবেন বলেই তারা প্রত্যাশা ব্যক্ত করেছেন।