যশোর প্রতিনিধি: পানি সম্পদ ও পরিবেশ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেছেন, “ভবদহের সমস্যা একদিনে সৃষ্টি হয়নি, এটি দীর্ঘদিনের দুর্ভোগের ফল। বিগত সরকারগুলো কেবল অস্থায়ী সমাধানে মনোযোগ দিয়েছিল, যার ফলে কোনো স্থায়ী উন্নয়ন হয়নি—বরং সরকারি অর্থের অপচয় হয়েছে।”
মঙ্গলবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে যশোরের ভবদহ কলেজ মাঠে এক সংক্ষিপ্ত প্রেস ব্রিফিংয়ে তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি জানান, বর্তমান সরকার জনগণের প্রত্যাশার আলোকে ভবদহ সমস্যার স্থায়ী সমাধানে কাজ করছে। সেনাবাহিনীর কারিগরি নকশা ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের সহযোগিতায় একটি বেইজলাইন সার্ভে পরিচালিত হচ্ছে। এই প্রকল্প বাস্তবায়নে স্থানীয়দের মতামত, প্রশাসনের সহযোগিতা এবং স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা হবে বলে আশ্বাস দেন তিনি।
এ সময় তার সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন স্বরাষ্ট্র ও কৃষি উপদেষ্টা লে. জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী, ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা এবং মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক উপদেষ্টা ফারুক ই আজম, খুলনার বিভাগীয় কমিশনার ফিরোজ সরকার, যশোরের জেলা প্রশাসক আজাহারুল ইসলাম, পুলিশ সুপার রওনক জাহান, সেনাবাহিনীর ৫৫ পদাতিক ডিভিশনের জিওসি মেজর জেনারেল ইমদাদুল হকসহ প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।
সকাল ১০টায় উপদেষ্টারা হেলিকপ্টারযোগে নওয়াপাড়া সরকারি কলেজ মাঠে অবতরণ করেন। এরপর নওয়াপাড়া সরকারি ডিগ্রি কলেজ অডিটোরিয়ামে স্থানীয় প্রশাসন ও ভবদহবাসীদের প্রতিনিধিদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় মিলিত হন। সভা শেষে উপদেষ্টারা কৃষকদের সঙ্গে ধানকাটা কর্মসূচি উদ্বোধন করেন এবং ভবদহ ২১ ভেল্ট স্লুইস গেট পরিদর্শন করেন।
স্থায়ী সমাধানে নদী খনন ও খাল পুনরুদ্ধারের উদ্যোগ উপদেষ্টা রিজওয়ানা হাসান জানান, সরকারের স্বল্পমেয়াদী পদক্ষেপের ফলে এ বছর ভবদহ সংলগ্ন বিলের ২০ হাজার হেক্টর জলাবদ্ধ জমির মধ্যে ১৭ হাজার হেক্টরে বোরো আবাদ সম্ভব হয়েছে। তবে এটি স্থায়ী সমাধান নয়। এজন্য মুক্তেশ্বরী, টেকা, শ্রী ও হরি নদীর নাব্যতা ফেরাতে ১২০ কিলোমিটার নদী খননের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। পাশাপাশি খালগুলোও ড্রেজিং করে পানি নিষ্কাশনের পথ উন্মুক্ত করা হবে, যাতে বর্ষায় প্লাবন না ঘটে।
ভবদহ সংগ্রাম কমিটির উপদেষ্টা ইকবাল কবির জাহিদ বলেন, “দীর্ঘদিনের আন্দোলনের ফলস্বরূপ আজ বাস্তব পদক্ষেপ নিতে দেখা যাচ্ছে। সেচ পাম্পের পরিবর্তে টাইডাল রিভার ম্যানেজমেন্ট (TRM) চালুর উদ্যোগে আমরা আশাবাদী।” তিনি বিগত প্রকল্পে দুর্নীতির অভিযোগে জড়িতদের বিচারের দাবি জানান।
সার্বিক আইনশৃঙ্খলা ও মুক্তিযুদ্ধের গৌরব রক্ষায় মতবিনিময় বিকেলে জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত পৃথক পৃথক সভায় উপদেষ্টারা আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়ন, অর্থ রুটপাট বন্ধ, ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা চিহ্নিতকরণ ও বিচারের দাবিতে মতবিনিময় করেন। মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক উপদেষ্টা ফারুক ই আজম যশোরে হোটেল জাবের ইন্টারন্যাশনালে অগ্নিকাণ্ডে নিহতদের ‘৩৬ জুলাই আন্দোলনের শহিদ’ হিসেবে গেজেটে অন্তর্ভুক্ত করায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন এবং দ্রুত সেই নামগুলো বাতিলের নির্দেশনা দেন।
তিনি বলেন, “যারা বাস্তবেই রাজপথে স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে শহিদ হয়েছেন, তারাই প্রকৃত শহিদ। অগ্নিকাণ্ডে নিহতদের অন্যভাবে মূল্যায়ন করা যেতে পারে, তবে শহিদ তালিকায় তাদের স্থান গ্রহণযোগ্য নয়।”তিনি ভুয়া মুক্তিযোদ্ধার তালিকা তৈরির কাজ দ্রুত সম্পন্ন করে দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দেন।