দেশের পুঁজিবাজারে আবার বিদেশি বিনিয়োগকারীর সংখ্যা ও অংশগ্রহণ বেড়েছে। গত সেপ্টেম্বর মাসে বিদেশি ও প্রবাসী বিনিয়োগকারীদের বেনিফিশিয়ারি ওনার্স (বিও) হিসাবের সংখ্যাও বেড়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিদেশি বিনিয়োগকারীদের প্রধান অগ্রাধিকার হচ্ছে সুশাসন। দেশের পুঁজিবাজারের নিয়েন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) সুশাসন ফেরাতে নানা সংস্কার কার্যক্রম হাতে নিয়েছে। প্রতারকদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। বিষয়টি বিদেশি বিনিয়োগকারীরা খুবই ইতিবাচকভাবে নিয়েছেন। বিদেশি বিনিয়োগকারীদের দ্বিতীয় অগ্রাধিকার হলো মুনাফা। তাদের বেশি অংশগ্রহণের মূল কারণ ভালো শেয়ারের দাম তুলনামূলকভাবে কম।
বিগত সরকারের আমলে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন ফ্লোর প্রাইস নির্ধারণসহ অনেক পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছিল, যার নেতিবাচক প্রভাব পড়েছিল শেয়ারবাজারে। বিশেষজ্ঞরা বলেন, বিদেশি বিনিয়োগকারীরা আশা করছেন, ভবিষ্যতে এ ধরনের নীতি বাস্তবায়ন হবে না। পরিবর্তে শেয়ারবাজারে সুশাসন ফিরিয়ে আনতে ব্যাপক সংস্কার বাস্তবায়ন হবে। একই সঙ্গে শেয়ারের কারসাজিও কমবে। এ আশায় তারা বাজারে অর্থ বিনিয়োগ শুরু করেছে। সুশাসন নিশ্চিত ও বাজারে বেশি বেশি বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে ভালো শেয়ার তালিকাভুক্তির ওপর জোর দেন বিনিয়োগকারীরা। এ ক্ষেত্রে বাজারবান্ধব নীতি নিশ্চিত করতে হবে এবং সেটি ঘন ঘন পরিবর্তন করা যাবে না।
জানা গেছে, দেশের শেয়ারবাজারে বিদেশি বিনিয়োগকারীর সংখ্যা কমতে শুরু করে ২০২৩ সাল থেকে। ওই বছরের নভেম্বর থেকে বিদেশি ও প্রবাসী বিনিয়োগকারীরা ধারাবাহিকভাবে শেয়ারবাজার ছাড়তে থাকেন, যা অব্যাহত থাকে চলতি বছরের আগস্ট মাসেও। তবে সেপ্টেম্বর মাসে এসে বিদেশি ও প্রবাসীদের বিও হিসাব বেড়েছে।
সেন্ট্রাল ডিপোজিটরি বাংলাদেশ লিমিটেডের (সিডিবিএল) তথ্যানুযায়ী, বর্তমানে শেয়ারবাজারে বিনিয়োগকারীদের বিও হিসাবের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৬ লাখ ৫২ হাজার ২২৭টি, যা গত ৩১ আগস্ট ছিল ১৬ লাখ ৪৫ হাজার ৪০১টি। এ হিসাবে গত এক মাসে শেয়ারবাজারে বিও হিসাব বেড়েছে ৬ হাজার ৮২৬টি। বর্তমানে বিদেশি ও প্রবাসী বিনিয়োগকারীদের নামে বিও হিসাব আছে ৪৩ হাজার ৮০১টি। গত ৩১ আগস্ট বিদেশি ও প্রবাসীদের নামে বিও হিসাব ছিল ৪৩ হাজার ৭৬১টি। অর্থাৎ, গত এক মাসে বিদেশি ও প্রবাসী বিনিয়োগকারীদের বিও হিসাব বেড়েছে ৪০টি।
পুঁজিবাজার বিশেষজ্ঞ এবং ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশের (আইসিবি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবু আহমেদ বলেন, বিদেশি বিনিয়োগকারীরা সবসময় বাজার পর্যবেক্ষণ করতে থাকেন। ভালো অবস্থান দেখে বিনিয়োগ করেন এবং সুবিধাজনক সময়ে বিনিয়োগ তুলে নেন। আমাদের বাজারে অনেক কোম্পানির শেয়ারের মূল্য লোভনীয় পর্যায়ে নেমেছে। ফলে বিদেশিরাও প্রতিযোগী দেশের তুলনায় কম দামে শেয়ার পেলে বিনিয়োগ করে। তবে বাজারে ভালো কোম্পানির শেয়ারের অভাব রয়েছে। এ জন্য ভালো মৌলভিত্তির শেয়ার তালিকাভুক্তি করতে হবে।
ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (ডিসিসিআই) সভাপতি তাসকীন আহমেদ বলেন, দীর্ঘদিন ধরেই দেশের শেয়ারবাজারে বিদেশি ও প্রবাসী বিনিয়োগকারীর সংখ্যা কমছিল। অবশেষে বিদেশিরা পুনরায় ফিরতে শুরু করেছে। গত সেপ্টেম্বর মাস থেকে বিদেশি ও প্রবাসী বিনিয়োগকারীদের বেনিফিশিয়ারি ওনার্স (বিও) হিসাব বাড়তে শুরু করেছে। একই সঙ্গে বিদেশি ও প্রবাসী বিনিয়োগকারীদের সংখ্যাও বাড়তে শুরু করেছে, যা অত্যন্ত ইতিবাচক। এতে আমাদের শেয়ারবাজার আরও কার্যক্ষম হবে এবং তা থেকে দীর্ঘমেয়াদী অর্থায়ন ত্বরান্বিত হবে। এটি অন্তর্ভুক্তিমূলক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টি করবে।
অন্যদিকে পুঁজিবাজারে স্বচ্ছতা, বিনিয়োগকারীর আস্থা এবং টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করার লক্ষ্যে অর্থপাচার প্রতিরোধ (এএমএল) ও সন্ত্রাসে অর্থায়ন প্রতিরোধ (সিএফটি) কার্যক্রমকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) পরিচালক মেজর জেনারেল মোহাম্মদ কামরুজ্জামান (অব.)। তিনি বলেন, অর্থপাচার প্রতিরোধ ও সন্ত্রাসে অর্থায়ন প্রতিরোধ কার্যক্রমে গ্রাহক পরিচিতি (কেওয়াইসি) নিশ্চিত করা এবং ঝুঁকিভিত্তিক গ্রাহক (সিডিডি) যাচাই, সন্দেহজনক লেনদেন ও কার্যক্রম শনাক্তকরণ এবং রিপোর্টিং, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য নিয়মিত প্রশিক্ষণ কর্মসূচি এবং বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) ও নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা মেনে চলতে হবে।